এস মিজানুল ইসলাম, বানারীপাড়া (বরিশাল) থেকে
বানারীপাড়ায় নামে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেবা চলছে ৩১ শয্যার। কর্তৃপক্ষ পড়ছে বিপাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে বানারীপাড়ায় ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘোষণা হলেও কার্যক্রম চলছে পূর্বের ৩১ শয্যার আদলে। চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স, কর্মচারী, আয়া, সুইপারসহ অন্যান্য জনবল স্বল্পতার কারণে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ১ জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১ জন। চারটি জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের মধ্যে তিনটি পদ শূন্য। বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ডিএসএফ কার্যক্রমের আওতায় থাকায় এখানে প্রতি মাসে ২৫-৩০ জনকে সিজারিয়ান অপারেশন করা হতো। গত ছ’মাস ধরে এখানে গাইনী ও এনেসথিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় এ কার্যক্রমটির সেবা গ্রহণকারী রোগীদের দারুণ ভোগান্তি হচ্ছে। রোগীরা এখন হয় শেবাচিম হাসপাতাল নয় স্থানীয় ক্লিনিকে মোটা অংকের টাকা ব্যয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে। জুনিয়র কনসাল্টেন্ট (গাইনী) ডাঃ নাজমুন আরা ২৪ মার্চ বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। এর ৯ দিন পর তিনি ৫ দিনের জন্য ছুটি নেন। কাজে যোগদান না করে ৬ এপ্রিল তিনি ডাকযোগে এক মাসের ছুটির আবেদন করেন। এ ধরনের ছুটি দেয়ার এখতিয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেই। বিধি মোতাবেক ছুটি নেয়ার জন্য তাকে জানালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ডাঃ নাজমুন আরার কোন রূপ জবাব কর্তৃপক্ষকে পায়নি। ডেন্টাল সার্জন পদটি দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য রয়েছে। ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট থাকলেও তিনি রয়েছেন প্রশিক্ষণে। উন্নয়ন খাতভুক্ত মেডিকেল অফিসার (হোমিও) ডাক্তার থাকলেও না থাকার মতো। বিভিন্ন ইউনিয়নের এফডব্লিউসিতে মেডিকেল অফিসার পদ থাকলেও এ উপজেলার ৮টি কেন্দ্রে নিয়মিত ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও ৬টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ২ জন মেডিকেল অফিসারকে ডেপুটিশনে ইউনিয়ন থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। স্যাকমোর ২ জন ডেপুটিশনের একজন জরুরি বিভাগে আর একজন দিব্বি মেডিকেল অফিসারের কক্ষে মেডিকেল অফিসারের ন্যায় প্রাকটিস করছেন স্যাকমোর করুনা মিস্ত্রী। তার বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অভিযোগ। এখান থেকে তাকে বদলি করা হলেও খুঁটির জোরে ১৫/২০ দিনের মধ্যে তিনি ইউনিয়ন এফডব্লিউসিতে ফিরে আসেন। তার খুঁটির জোর এতই শক্তিশালী যে তিনি ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পুনরায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেপুটিশনে যোগদান করেন। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাবেক মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যানদের কোন অভিযোগ ধোপে টিকেনি। একের মধ্যে তিন দায়িত্ব পালন করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) আঃ কাদের। তিনি নিজ দায়িত্বের পাশে অতিরিক্ত পদ যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সহকারী এবং ডিলিং অ্যাসিসট্যান্ড ডিএসএফের দায়িত্ব পালন করছেন। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩৪টি স্বাস্থ্য সহকারীর পদের মধ্যে ৭টি শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার জন্য অতি জরুরি যে ২টি পদ রয়েছে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। এর মধ্যে একজন এক সময়ের বিশিষ্ট সন্ত্রাসী-পরবর্তীতে বিশিষ্ট কাউন্সিলরের মা। তাকে সমূহ করে চলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যজন প্রতিবন্ধী তিনি পা দিয়ে স্বাভাবিক চলা ফেরা করতে পারেন না। তার পরিবর্তে ছেলে বিএনপির নেতার সুবাদে ছেলের স্ত্রী মাঝে-মধ্যে কাজ করে। এদের সামলানোর ক্ষমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই। ঝাড়ুদারের পদ ৫টি থাকলেও ২টি পদ শূন্য রয়েছে। যা জরুরি ভিত্তিতে পূরণ করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতার জনগণ নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা পায় না। দুর্গম এলাকার অর্থাৎ বিশারকান্দি, ইলুহার এবং উদয়কাঠীর জনগণ বলতে গেলে সেবা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। এসব ইউনিয়নের দাযিত্বরতা চাকরি ঠেকানোর জন্য মাঝে মধ্যে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়। উপজেলা থেকে মনিটরিংয়ের কথা থাকলেও ওই সব এলাকায় এর কোন প্রভাব নেই। বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলা সদরে অবস্থান করায় কোন ডাক্তারই হাসপাতাল কোয়াটারে থাকেন না। তবে ডরমেটরিতে নামকেয়াস্তে দু’একজন থাকেন। ডাঃ জিয়উল হাসান তিনি ডাক্তার দম্পতি হওয়ায় ডাক্তার কোয়াটারের একটি ফ্লাটে নাইট ডিউটির সময় মাঝে মাঝে অবস্থান করেন। অন্যরা কেউ অবস্থান করেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নব কুমার সমদ্দার জানান, বানারীপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ৩১ শয্যার কার্যক্রমই চলছে। শুধুমাত্র প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া। এ ব্যাপারে বার বার কর্তৃপক্ষের কাছে লেখালেখি, চিঠি চালাচালি চলছে। কবে এর সমাধান হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। বর্তমানে ঝাড়ুদারের ২টি পদসহ অন্যান্য শূন্য পদ জরুরি ভিতিতে পূরণ করা প্রয়োজন। চাখার ১০ শয্যার হাসপাতাল-উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আওতায় চাখার ১০ শয্যার হাসপাতাল। এখানে অভিযোগ রয়েছে, এখানে জনবলসহ সব কিছু ঠিক থাকলেও ডাক্তাররা ঠিক মতো হাসপাতালে আসেন না। তবে এ হাসপাতালটির অবস্থা বেহাল। এখানে জরুরি বিভাগসহ ডাক্তার, রোগীদের কক্ষসমূহ যেন মরন ফাঁদ। ডাক্তারের কক্ষে বাস করে কুনো ব্যাঙ। ডাক্তার ও নার্সদের কোয়ার্টারে নিরাপত্তাহীনতায় তারা বাস করছেন। উপর থেকে যে কোন সময় ছাদ ধসে পরতে পারে। এ হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডাঃ সোনিয়া জানান, আমরা মানবেতর অবস্থায় রয়েছি। ভবনটির দ্রুত সংস্কার হওয়া প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন