নওগাঁ ও মেহেরপুরের গাংনীর পর এবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস।
দামুড়হুদা উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের মুনছুর আলির ছেলে শ্যালো ইঞ্জিনের মিস্ত্রি ছামাদুল ইসলাম তার নিজ বাড়িতে পলিথিন থেকে পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস উৎপাদন করেন। তিনি নিয়মিত জ্বালানি উৎপাদন করছেন। এটা নতুন কোনো উদ্ভাবন না হলেও নিজের গ্রামে বেশ সাড়া ফেলেছেন ছামাদুল।
এই তেল ও গ্যাস উৎপাদনে ব্যবহার করছেন টিনের একটি ড্রাম, দুইটি প্লাস্টিকের কন্টেইনার, একটি মাটির তৈরি বড় পাত্র ও কিছু স্টিলের পাইপ দিয়ে তৈরি রিফাইনারি মেশিন। এই প্রযুক্তিতে ড্রামের ভেতর পলিথিন রেখে তা আগুনের তাপে গলিয়ে বাষ্পের মাধ্যমে ডিজেল, পেট্রোল ও গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে। গ্যাস আটকে সংরক্ষণ করতে না পারলেও তিনি এই গ্যাস জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করছেন।
এ পদ্ধতিতে এক লিটার পেট্রোল উৎপাদন খরচ হচ্ছে ৭০ টাকা ও প্রতিলিটার ডিজেলের পেছনে খরচ হচ্ছে ৪২ টাকা। এই উদ্ভাবনে একদিকে যেমন যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিত্যক্ত পলিথিন রিসাইকেল হয়ে সম্পদে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাচ্ছে। অপেক্ষাকৃৃত কম দামে পেট্রোল ও ডিজেল পেয়ে ব্যবহার করছেন এলাকাবাসীও। উৎপাদিত পেট্রোল দিয়ে মোটরসাইকেল এবং ডিজেল দিয়ে পাওয়ার টিলার চালিয়ে ইতোমধ্যে সফলতা পাচ্ছেন তারা। ছামাদুল ইসলাম জানান, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পলিথিন গলিয়ে তেল উৎপাদনের পদ্ধতি দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে টিনের একটি ড্রাম, দুইটি প্লাস্টিকের কন্টেইনার ও কিছু স্টিলের পাইপ দিয়ে রিফাইন মেশিন তৈরি করেন। এরপর প্রথম দিন ৬০ টাকার ৫ কেজি পরিত্যক্ত পলিথিন ও ১৫০ টাকার খড়িসহ মোট ২১০ টাকা খরচ করে কাজ শুরু করেন। ৫ কেজি পলিথিন জ্বালিয়ে দেড় লিটার পেট্রোল ও আড়াই লিটার ডিজেল উৎপাদন করেন।
পরবর্তীতে তিনি ও স্থানীয়রা এই পেট্রোল মোটরসাইকেলে ভরে পরীক্ষা চালান। পাম্প থেকে নেয়া পেট্রোলে মোটরসাইকেল যেমন চলে, একইভাবে ছামাদুলের উৎপাদিত তেলেও চলছে। একইভাবে পাওয়ার ট্রিলারে ডিজেল ভরে পরীক্ষা চালানো হয়।
ছামাদুল আরো জানান, এই পেট্রোল ও ডিজেলের সাথে গ্যাস উৎপাদন হলেও এটাকে এখনো আটকানো সম্ভব হয়নি। তবে এই গ্যাস পাইপের মাধ্যমে খড়ির সাথে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামিতে গ্যস রাখার বিষয় নিয়ে ভাবা হবে।
প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ তেল উৎপাদন দেখতে ভিড় করছেন ছামাদুলের বাড়িতে। ওই গ্রামের শওকত আলী জানান, প্রথম দিনে তিনি পলিথিনে উৎপাদিত এক লিটার পেট্রোল মোটরসাইকেলে ভরে ব্যবহার করেন। পাম্পের তেলের সাথে এই পেট্রোলের কোনো পার্থক্য নেই বলে মনে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দামুড়হুদা আ. লীগ সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন বলেন, পলিথিনের এ ধরনের পুনর্ব্যবহারই পারে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনতে। সরকার যদি এদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আরো বড় পরিসরে কাজ করে সহজেই পলিথিন বজ্যের্র সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং তা থেকে তেল উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন