শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

টানা বৃষ্টিতে সঙ্কটে দিনমজুর

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আষাঢ়ের শেষাংশে এসে বৃষ্টি জেঁকে বসেছে। প্রায় সপ্তাহকাল ধরে ক্ষণে ক্ষণেই মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত দু’দিন ধরে নরসিংদীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নরসিংদীতে ২০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলিক বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী চলতি বছরের ৬ মাস তথা গত ১০ বছরে ২৪ ঘন্টায় এত বৃষ্টিপাতের পাওয়া যায়নি। অব্যাহত ধারায় বৃষ্টিপাতের কারণে নরসিংদীর জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। মেঘনা আড়িয়াল খাঁসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষ দিনমজুর রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ঠেলাচালক, কুলি, জেলে ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। দৈনন্দিন আয়ে ভাটা পড়ায় হাজার হাজার দরিদ্র পরিবার সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে।

প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকেই আকাশ ঘনকালো মেঘে ছেয়ে যায়। কিছুক্ষণ মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবারো আকাশে ঘন কালো মেঘে দেখা দেয় এরপর গুরু গুরু ডাকে শুরু হয় ঘন বর্ষণ। প্রায় সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়। জীবন যাত্রা প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এবছর আষাঢ়ের প্রথম দিনে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়। এরপর দীর্ঘ তিন সপ্তাহ ধরে উল্লেখযোগ্য হারে কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রকৃতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের ষড়ঋতুর প্রায় প্রতিটি ঋতুই এদের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। শীত ঋতুতে আগের মত সঠিক সময়ে শীত আসে না। বসন্তকালে সঠিক সময়ে ফুল ফোটে না। ভরা বর্ষার ঋতুতে নদীতে পানি থাকে না। সর্বক্ষেত্রেই ব্যাপক বৈপরীত্য দেখা দিয়েছে। কিন্তু এ বছর প্রকৃতি একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, চলতি বছর ফেব্রæয়ারি মাস এই বৃষ্টি হচ্ছে চার দিন। বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৭১.১ মিলিমিটার। মার্চ মাসে বৃষ্টি হয়েছে মোট চার দিন। বৃষ্টির পরিমাণ ৫৬.২ মিলিমিটার। এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়েছে মোট ৭ দিন। বৃষ্টি হয়েছে ২০৫.৭ মিলিমিটার। মে মাসে বৃষ্টি হয়েছে মোট ১১ দিন। বেশি পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫৩.২ মিলিমিটার। জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৪ দিন। বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ২৪৬ মিলিমিটার। চলতি জুলাই মাসের ১৪ দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৯২ মিলিমিটার।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দশকে মেঘনা অববাহিকায় কমবেশি ৬৩ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির তালিকা চলে গেছে। ২০০৪ সালের পূর্বে মেঘনা নদী থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বোয়াল জাতীয় মাছ। ২০০৪ সালের বন্যার সময় মেঘনা নদীতে বিপুল সংখ্যক বোয়াল মাছের আবির্ভাব ঘটে। এছাড়াও প্রাকৃতিক ছোট মাছের ব্যাপক সমাহার পরিলক্ষিত হয় পানিতে।

প্রবল বর্ষণের কারণে ইতোমধ্যেই মেঘনার উজানে বন্যাবস্তার সৃষ্টি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি পানির ঢলে মেঘনায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। হাইড্রোলিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী লোয়ার মেঘনার পানি এখনো বিপদসীমার নিচে থাকলেও পানি দ্রæত বেড়ে চলছে।
প্রকৃতিবিদদের বন্যা যেমন মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে, তেমনি প্রকৃতিকে ঢেলে সাজিয়ে দিয়ে যায় বন্যা। বন্যার ঢেলে দেয়া সম্পদ মানুষ ভোগ করতে পারে বছরের পর বছর ধরে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন