বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হারিয়ে যাচ্ছে কচুরি ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

এক সময় খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ও নদী পানিতে ভরে থাকত। আর এসব পানিতে জন্মাতো কচুরিপানা নামক জলজ উদ্ভিদ। বৃষ্টিপাতের অভাব ও নদীনালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় খাল-বিল, নদী-নালায় পানি না থাকায় গর্ত ডোবা বা খাল-বিলে কচুরিপানার আর দেখা নেই বললেই চলে। শীতকালে কচুরিপানার সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি-সাদা রঙের কচুরিফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি হতো। যা এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না।

অনেক আগে এ কচুরিপানা আমাদের দেশে ছিল না। জনশ্রæতি আছে, এর ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে জনৈক নাবিক শখের বশে সুদূর জার্মান থেকে এ কচুরিপানা আমাদের দেশে এনেছিল বলে এর নাম জার্মানি হয়েছে। তবে এ এলাকায় এ কচুরিপানা বা জার্মানি নামেই পরিচিত। এ জার্মানির ছিল নানা গুণ। এর ডাটা-পাতা গবাদিপশুর ভাল খাদ্য। জৈবসার হিসাবে শুকনা পচা কচুপিানারও বেশ চাহিদা ছিল। বিশেষ করে এর বাহারি ফুলের কারণে ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কারণে বেশি পরিচিত।

রাস্তার ধারের ডোবার জলে কচুরিপানার সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি-সাদা রঙের মিশ্রণে ফুটে থাকা ফুলের সেই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে যেকোনো বয়সের মানুষই মুগ্ধ না হয়ে পারে না। আগেকার দিনে গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই ফুল তুলে খেলায় মেতে উঠত। গ্রামের স্কুলপড়–য়া ছেলেমেয়েরা স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার ধারের ডোবার পানিতে ফুটে থাকা ফুল তুলে নিজেরা খেলা করত আর বাড়িতে থাকা ছোট ছোট ভাই-বোনদের হাতে দিয়ে তাদের মন জয় করত। সে দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। কচুরিপানা জলজ উদ্ভিদ। এর পাতার ডাটাগুলো অনেকটা পটল আকৃতির এবং ভেতরে স্পঞ্জেরমত ফাঁপা হওয়ায় অনায়াসে পানির ওপর ভেসে থাকে। এর কোনো বীজ হয় না। গাছের গোড়া থেকে চারা বের হয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটে। অনুকূল পরিবেশ পেলে খুব দ্রুত বংশবিস্তার ঘটে। এই কচুরিপানা স্বল্পমাত্রায় জলাশয়ে থাকলে যেমন ভালো তেমনি অধিক মাত্রায় থাকলে আগাছা হিসাবে জলাময় ভরাট ও ফসল যেমন আমন ধানের ক্ষতি করে থাকে। বর্ষাকালে বিলের পানি বৃদ্ধি পেলে বাতাসের চাপে কচুরিপানা ভেসে গিয়ে ধানক্ষেত ঢেকে ফেলে।

শুষ্ক মৌসুমে বিল-বাওড় ও পুকুরে জন্মানো কচুরিপানার গাছ-পাতা তুলে স্তুুপ করে রাখলে তা শুকিয়ে পচে ও শুকিয়ে গিয়ে জৈবসার তৈরি হয়। যা কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সাশ্রয় হয়। আগেকার দিনে মাটির স্পর্শে যাতে গাছের ফল নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে মাঠের পটল, আলু, লাউ, উচ্ছে ইত্যাদির খেতে শুকনা কচুরিপানা বিছিয়ে দেয়া হতো। এতে একদিকে যেমন এসব সবজি পচনের হাত থেকে রক্ষা পেত অপরদিকে এসব শুকনা কচুরিপানার গাছ পচে জমিতে জৈব সার হিসাবে কাজ করত। আগের মতো এলাকায় আর কচুরিপানা না থাকায় বর্তমানে সুতা ও বাঁশের কাবারি দিয়ে তৈরি মাচায় এসব সবজি চাষ করা হয়। এসব গুনের কচুরিপানার সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি সাদা আর হলুদের মিশ্রণে ফুটে থাকা হাজার হাজার ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য এখন আর চোখে পড়েনা ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন