চাকরি দেয়ার কথা বলে কমিউনিটি ক্লিনিকের নামে ৫ শতাংশ জমি লিখে নেয়ার ২০ বছর পরও অসহায় কোহিনুরকে চাকরি দিচ্ছে না নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগ। মেয়ের চাকরি আশায় বৃদ্ধ পিতা সিরাজুল ইসলাম মৃত্যুর দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছেন। চাকরির বয়সসীমা শেষ পর্যায়ে এসে ঠেকেছে কোহিনুরের। অসহায় বৃদ্ধ পিতার সংসারে কোহিনুরের জীবন এক দুঃসহ অবস্থায় উপনিত। এই ঘটনাটি পলাশ উপজেলার নোয়াকান্দা গ্রামে। জমিদাতা অসহায় বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সময় নরসিংদী ও পলাশের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ সিরাজুল ইসলামের নিকট ৫ শতাংশ জমি দাবি করে। তারা সিরাজুল ইসলামকে জানায় ৫ শতাংশ জমি দিলে তার পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেয়া হবে। বাড়ির পাশে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক হবে ও তার পরিবারের একজন চাকরি করবে এই সরল বিশ্বাসে সিরাজুল ইসলাম নরসিংদী সিভিল সার্জনের নামে ৫ শতাংশ জমি সাফ কবলামূলে দলিল করে দেয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সেখানে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে অন্য লোকদেরকে চাকরি দিয়েছে। সিরাজুল ইসলামের পরিবারের কাউকে চাকরি দেয়নি। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এই অমানবিক কর্মকান্ডের পর বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম বাধ্য হয়ে কয়েকবার বিষয়টি লিখিতভাবে সিভিল সার্জনের নিকট উপস্থাপন করেন। কিন্তু কোন সিভিল সার্জনই বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলামের আবেদনে সাড়া দিচ্ছেন না। এই অবস্থায় সিরাজুল ইসলাম আবারো নরসিংদী সিভিল সার্জনের নিকট তার কন্যা কোহিনুরের একটি চাকরির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। আবেদনপত্র তিনি বলেছেন, বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম একজন অসহায় পুত্রহীন ব্যক্তি। তার তিনটি কন্যার মধ্যে দুই কন্যার বিয়ে হয়ে গেছে। তার স্ত্রী মারা গেছেন। তাকে দেখা বা সেবা করার কেউ নেই। ছোট কন্যা কোহিনুর কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি করে বাড়ির পাশে থেকে পিতার সেবা করার জন্য এমএ পাস করে বসে আছে। বৃদ্ধ রোগাক্রান্ত পিতাকে ছেড়ে অন্য কোথাও চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছে না। পিতাকে ছেড়ে যেতে পারছে না বিধায় বিয়েও হচ্ছে না। সার্বিক অবস্থায় বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম ও তার কন্যা কোহিনুরের জীবন এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই অবস্থায় জমিদাতা বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম তার অসহায় কন্যা কোহিনুরকে একটা চাকরি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলামের বিশ্বাস বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে পড়লে কোহিনুরের চাকরির একটা ব্যবস্থা করবেন।
এ ব্যাপারে নরসিংদী ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ আমিরুল হক শামীম জানান, সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকের জমি দান করা বড় মাপের উদারতার কাজ। মহানুভবতা না থাকলে কোন ব্যক্তি সরকারি ক্লিনিকের জন্য ৫ শতাংশ জমি দান করতে পারেন না। বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য ৫ শতাংশ জমি দান করে মহানুভবতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এর প্রতিদানে কন্যাকে চাকরি দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু কেন তার কন্যাকে পূর্ববর্তী সিভিল সার্জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ চাকরি দিতে পারেননি তা আমার জানা নেই। যেহেতু জমিদাতা সিরাজুল ইসলাম ও তার এমএ পাশ কন্যা কোহিনুর বেগম এখনো চাকরির আশায় অপেক্ষমান, যেহেতু কোহিনুরকে স্বাস্থ্য বিভাগে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন