বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

ঢাকার প্রথম মসজিদ

প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
মুসলিম ঐতিহ্যের ধারক ঢাকাÑমূলত সুলতানি আমলে একটি নগরকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে এবং মুগল আমলে প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদা পাওয়ার মধ্যদিয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ১৬১০ খ্রি. ইসলাম খান চিশতি সুবাহ বাংলার রাজধানী হিসেবে ঢাকা মহানগরীর গোড়াপত্তন করেন এবং এর নামকরণ করেন ‘জাহাঙ্গীরনগর’। ‘মসজিদের শহর’ ঢাকায় দশ হাজার মসজিদ রয়েছে (ই.ফা.বা. : দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ ডিসেম্বর ’১৪)। মুগল-পূর্ব যুগের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঢাকার পুরনো অংশে দু’টি এবং মিরপুরে একটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে। অন্যদিকে ‘জাতীয় মসজিদ খ্যাত’ ‘বায়তুল মুর্কারম’ আধুনিক ঢাকার কেন্দ্রস্থলে নির্মিত হয় ২৬ ডিসেম্বর ১৯৬২। এসব দিক বিবেচনায় ‘বিনত বিবির মসজিদ’ ঢাকার ঐতিহ্যÑগর্বের স্মারকস্তম্ভ।
‘বিনত বিবির মসজিদ’ পুরনো ঢাকায় অবস্থিত মধ্যযুগীয় অন্যতম মসজিদস্থাপত্য। বাংলার সুলতান, প্রথম নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ্র (নাসিরুদ্দিন আবুল মুজাফফ মাহমুদ শাহ্ ১৪৩৫Ñ১৪৫৯/১৪৪২Ñ১৪৫৯) শাসনামলে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর বা ইসলাম খাঁর আগমনের দেড়শ বছর আগে মসজিদটি নির্মিত হয়। শিলালিপি অনুসারে মসজিদটি ১৪৫৬/ ১৪৫৭ খ্রি. বা ৮৬১ হি. সালের। পুরান ঢাকার ৬ নম্বর নারিন্দা রোডের সুপ্রাচীন ‘হায়াৎ বেপারির পুলে’র উত্তর দিকে ‘বিনত বিবির মসজিদ’ অবস্থিত। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচিত “ঢাকা : স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী” (৩য় সংস্করণ, জানু’ ২০০৪, অনন্যা প্রকাশনালয়, ঢাকা, পৃ-১৮০) এবং বাংলা পিডিয়াসহ বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে অনুমিত, বিনত বিবির মসজিদই ঢাকার সবচেয়ে পুরাতন মুসলিমস্থাপত্য নিদর্শন ও শহরের প্রথম মসজিদ। ছয়-সাত কাঠা জায়গায় গড়ে ওঠা চারকোণা বিশিষ্ট মসজিদটির আদি গঠনশৈলীতে একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ থাকলেও বাংলা ১৩৩৭ (১৯৩০ খ্রি.) দ্বিতীয় বার সংস্কারকালে আরো একটি গম্বুজ যুক্ত করা হয়, যা মসজিদটির বিবর্তন ও সম্প্রসারণের স্পষ্ট ধারণা দেয়। মসজিদের দেয়ালে স্থাপিত একটি কালো পাথরে ফারসি ভাষায় লিখিত বর্ণনায় রয়েছে, সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ্র আমলে আরকান আলী নামক এক পারস্য সওদাগর ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঢাকার নারিন্দায় বসবাস শুরু করেন এবং তিনিই ৩০-৪০ জন মুসল্লির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বিনত বিবির মসজিদটি নির্মাণ করেন। ঢাকায় বসবাস কালেই আরকান আলীর অতি আদরের কন্যা বিনত বিবির আকস্মিক মৃত্যু হয় এবং তাকে ওই মসজিদ সংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয়। কন্যার আকস্মিক মৃত্যুর শোকে-দুঃখে পিতা আরকান আলীও ছয় মাস পরে মৃত্যুবরণ করলে তাকেও কন্যার পাশেই ওই মসজিদ সংলগ্ন স্থানে সমাহিত করা হয়। অন্য একটি বর্ণনা মতে মাহরামাতের কন্যা মুসাম্মাত বখত বিনত বিবি মসজিদটি নির্মাণ করান।
‘বিনত বিবির মসজিদ’ ছাড়াও ঢাকায় অসংখ্য প্রাচীন মসজিদ রয়েছে। প্রশ্ন জাগে তবে কি এর আগে ঢাকায় মসজিদ ছিল না? জবাবে বলবো আমি মূলত মুসলিম স্থাপত্যধারায় বিকশিত ইতিহাসের টিকে থাকা অংশের দিকে তাকিয়েছি। প্রত্যাশায় রইলাম, আগামীর গবেষণায় আমরা পৌঁছাবো অনাবিষ্কৃত সত্যের আরো গভীরে। যেমন ড. আব্দুল করিমের ‘মোগল রাজধানী ঢাকা’ বই এবং আরো অন্যান্য অনেকের মতে ঢাকার মুগদার মান্ডা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ‘মান্ডা মসজিদ’। শিলালিপি অনুযায়ী ‘মান্ডা মসজিদ’ ১৪৩৩ সালের জানুয়ারিতে নির্মিত। ঐতিহাসিক ‘মান্ডা মসজিদ’ বর্তমানে ‘নান্দু ব্যাপারী মসজিদ’ নামে পরিচিত। “আহমদ হাসান দানী ও আব্দুল করিমের মতে, বিলুপ্ত দোলাই নদীর তীরে ছিল মান্ডার অবস্থান। সুলতানি ও মোগল আমলে দোলাই নদী ছিল ঢাকার অন্যতম নৌপথ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. হাবিবা খাতুনের ডক্টরাল থিসিসে এ মসজিদের বর্ণনা আছে। তিনি জানান, ১৯৮২ সালে তিনি মসজিদটি পরিদর্শন করেন। তখন মসজিদের স্থাপত্যশৈলী দেখে তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন, এটি সুলতানি আমলের মসজিদ। মসজিদটিতে আগে গম্বুজ ছিল। গম্বুজ ভেঙে পড়লেও মসজিদে সুলতানি আমলের আদি কাঠামোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল” (দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ ডিসেম্বর ’১৪)।
ষ লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ,
কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন