এহসান বিন মুজাহির
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুচক্রের আবর্তনে যখন বসন্তের আগমন ঘটে তখন প্রকৃতি অপরূপরূপে সজ্জিত হয়। বাগানে-বাগানে ফুটে ওঠে মনোমুগ্ধকর রকমারী ফুল। গাছে-গাছে পাখিরা গান গায়। ফুল ভ্রমরা গুন-গুন করে এ ফুল থেকে ও ফুলে উড়ে বেড়ায়। ফুলের সুঘ্রাণে আর ভ্রমরের গুঞ্জনে চারদিক মুখরিত হয়। কুকিলের মধুমাখা সুর তখন কতইনা ভালো লাগে। বসন্তের আগমনে প্রকৃতির পরিবেশ যেমন সৌন্দর্যম-িত হয়। ঠিক তেমনি রমজান মাসে মুমিন বান্দাদের প্রতিটি কাজও সৌন্দর্যম-িত হয়। নেক কাজের আগ্রহ সৃষ্টি হয় প্রতিটি মুমিন হৃদয়ে। বসন্তে যেমন প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন হয় তেমনি রমজানে মুমিন বান্দার অন্তরও পরিবর্তন হয়। বসন্তের পুষ্প কাননের ন্যায় মুমিনের নেক কাজগুলো ফুটে ওঠে আমলের খাতায়। ঘোর আকাশে নক্ষত্ররাজির ন্যায় ঝলমল করে মুমিনের নেক কাজগুলো। বসন্তের পুষ্পকাননে সবরের গুঞ্জরনে যেমন চারদিক মুখরিত হয়, তেমনি যখন সাহরি খাওয়ার সময় হয় তখন মুখরিত হয় পৃথিবীর চারপাশ। আশপাশের মসজিদ হতে একযোগে বেজে ওঠে রমজানের সুর- উঠুন, ‘সাহরি খান’। এমন হৃদয়কাড়া মধুর সুরে পরিবেশে বিরাজ করে এক নব আনন্দ। পুরো রমজান মাসই মুমিনদের জন্য আনন্দ।
মাহে রমজান ইবাদতের অন্যতম একটি মৌসুম। মহান আল্লাহপাক রমজানের রোজাকে মুমিনদের উপর ফরজ করেছেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমের সুরায়ে বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরয করা হলো যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং শয়তানদেরকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়’। (বুখারি হাদিস নং- ১৮৯৮)
রমজান আসে জীবনকে পরিশুদ্ধ করার জন্য, পাপমুক্ত করার জন্য এবং আল্লাহকে ভয় করে চলার জন্য। তাই বলা যায়, রমজান আত্মশুদ্ধি, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আত্মগঠনের মাস। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মাহে রমজান এলেই আমাদের দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি পাগলা ঘোড়ার ন্যায় ছুটতে থাকে। যেন এ মাসে ইবাদত বন্দেগীর জন্য পুণ্য হাসিলের কোন সীমারেখা নেই, তেমনি দ্রব্যমূল্য সীমা ছাড়িয়ে গেলেও কারোর কিছুই করার থাকবে না? রমজান এলেই এদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করেন যা কোনভাবেই কাম্য নয়। যার ফলে শুধু মুমিন মুসলমান নন, এ মাস এলে অমুসলিম ভাইবোনেরাও কষ্টে পতিত হন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর আগুন মূল্যের কারণে। রমজানের পবিত্রতা বিরোধী সমস্ত উপায়-উপকরণের লাগাম টেনে ধরতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দিয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হতে হবে।
খাদ্যে ভেজাল, মজুদদারী, মুনাফাখারী ও প্রতারণামূলক সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। অশ্লীলতা, অপসংস্কৃতিক কার্যকলাপ এবং দিনের বেলায় হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করতে হবে। দুস্থ-গরীব, অভাবী, অনাহারীদের প্রতি সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে হবে। পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত, দুষ্কৃতকারী এবং শোষণ-রাজনৈতিক নিপীড়নমূলক কাজ বন্ধ করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইবাদতের মহোৎসবে শামিল করতে সুন্দর পরিবেশ ও রমজানের পূর্ণ অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সর্বোপরি রমজানের সুফল যাতে সকল নাগরিক ভোগ করতে পারেন সেজন্য সরকার, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রব্যমূল্যরোধে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
ষ লেখক : সাংবাদিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন