বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

পবিত্র মাহে রমজান

প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

স্বাগতম মাহে রমজান। প্রতি বছরের ন্যায় আবারও আমাদের মাঝে ফিরে এলো পবিত্র রমজানুল মোবারক। পবিত্র রমজান মাস নিঃসন্দেহের অন্যান্য মাসসমূহ থেকে পৃথকভাবে মাহাত্ম্যের দাবি রাখে। বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তির সনদ সর্বযুগের সর্বদেশের সর্বজাতির সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থার অপরিবর্তনীয় গ্রন্থ আল কোরআন; যে মাসে নাজিল করা হয় সে মাসের পবিত্রতা, মাহাত্ম্য ও মহিমা নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। এই রমজান-এ পরম করুনাময় আল্লাহতায়ালা নাজিল করেন আসমানি কিতাবসমূহের সর্বশেষ গ্রন্থ আল কোরআন। কোরআন শরীফে আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্টভাবে এরশাদ করেন, ‘রমজান এমন এক মহিমাময় ও গৌরবাম-িত মাস যে মাসে (আল্লাহতায়ালার পাক কালাম) কোরআন শরীফ নাজিল হয়েছে।
শুধু কোরআন শরীফই নয়, পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থসমূহ ও সহীফাগুলোও এই পবিত্র রমজান মাসে নাজিল করা হয়। রমজান মাসের পহেলা (কিংবা ৩রা তারিখে) হযরত ইব্রাহীম (আ.) সহীফা লাভ করেন, ৬ তারিখে হযরত মূসা (আ.)-এর কাছে পবিত্র ‘তাওরাত’ পৌঁছায়। হযরত দাউদ (আ.)-এর কাছে পবিত্র জাবুর নাজিল হয় এই পবিত্র মাসের ১৮ তারিখে, আর হজরত ঈসা (আ.)-এর পবিত্র ‘ইনজিল’ লাভ করেন এই মাসের ১২ তারিখে। এ থেকে সহজেই পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব, পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য বোঝা যায়। ‘রোজা’ একটি ফারসি শব্দ, আরবি ভাষায় রোজাকে ‘সিয়াম’ বলা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ও সংযম করাকে রোজা বলে। ‘সিয়াম’ শব্দেরও ঐ একই অর্থ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো সিয়াম বা রোজা। অবশ্য শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা বা ‘উপবাস’ ব্রত বললে ‘সিয়াম’-এর সঠিক রূপ প্রকাশ পায় না। ‘উপবাস ব্রত’ পৃথিবীর সকল ধর্মেই রয়েছে। তবে সুদীর্ঘ এক মাসব্যাপী ভোর (সোবহে সাদেক) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস এবং সেই সঙ্গে কঠোর সংযম সাধনার বিধান ইসলাম ছাড়া পৃথিবীতে আর অন্য কোনো ধর্মে নেই। ‘রমজ’ শব্দ থেকে এসেছে ‘রমজান’। ‘রমজ’ শব্দের অর্থ হলো জ্বালিয়ে দেওয়া, দগ্ধ করা। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষের মনের কলুষ-কালিমা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়ে মনকে নির্মল ও পবিত্র করে তোলে, পাপ রাশিকে সম্পূর্ণরূপে দগ্ধ করে দিয়ে মানুষকে করে তোলে পুণ্যবান, যোগ্য করে তোলে সাধারণ মানুষকে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার অসাধারণ করুণা ও ক্ষমা গ্রহণ করার জন্য।
স্বভাবতই নামাজের পরেই মুসলমানের জন্য আল্লাহতায়ালা যে এবাদত ফরজ করেছেন তা হলো পবিত্র রমজান মাসের রোজা। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল। আশা যে, তোমরা মুত্তাকী হবে।’’ এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যত শরীয়ত দুনিয়ায় নাজিল হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই রোজা রাখার বিধি-ব্যবস্থা ছিল। নামাজের মতো এই রোজাকে ও আবহমানকাল থেকেই সকল নবীর শরীয়তেই ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র রমজানের রোজা তিনটি ভাগে বিভক্ত ‘রহমত’ ‘মাগফেরাত’ ও ‘নাজাত’। প্রথম দশদিন পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার অসীম রহমত ঝরে পড়তে থাকে। পৃথিবীর উপরে, তাঁর রোজাদার মোমেন বান্দাদের উপরে। দ্বিতীয় দশদিনে পাওয়া যায় ‘মাগফেরাত’ বা ক্ষমা, অন্যায় কাজ ও চিন্তার জন্য ক্ষমা, পাপাচার ও চারিত্রিক নোংরামির জন্য ক্ষমা। শেষ দশদিনে পাওয়া যায় মুক্তি-দোজখের শাস্তি থেকে মুক্তি, পাপ থেকে মুক্তি, যৌন-ক্ষুধা থেকে মুক্তি, কামনা থেকে মুক্তি, অশ্লীলতা থেকে মুক্তি, লোভ-লালসা থেকে মুক্তি, সকল প্রকারের অযৌক্তিক বন্ধন থেকে মুক্তি, সকল অশুভ কার্যকলাপ ও অন্যায় থেকে মুক্তি। আর এই মুক্তির জন্য ইতেকাফের সাধনা।
মাহে রমজানের এই রোজার মাধ্যমে সংযম সাধনার ফলে মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় পরম করুণাময়ের নৈকট্য লাভ করার। কারণ, রমজানের ‘সিয়াম’ মানুষের মনের রিপুগুলোকে সংযত করে, দীন-দরিদ্র ক্ষুধার্তদের কষ্ট ও যন্ত্রণা, ব্যথা ও বেদনা হৃদয়ঙ্গম করতে সাহায্য করে, মানুষকে ধৈর্য্যরে শিক্ষা দেয়। দয়াল নবী হজরত মুহাম্মদ (দ.) এরশাদ করেছেন, “আমি সেই মহান আল্লাহর কসম করে বলিতেছি, যাঁহার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় জানিও আল্লাহর নিকট রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশক বা কস্তুরীর চেয়ে অধিক সুগন্ধি বলিয়া বিবেচিত”। সর্বযুগের সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (দ.) আরো এরশাদ করেছেন, “রোজাদারের নিদ্রা এবাদতের সমতুল্য। তাহার নীরবতা তসবীহ পড়ার সমতুল্য। সে সামান্য এবাদতেই অন্য সময় অপেক্ষা অনেক বেশি সাওয়াবের অধিকারী হয়, তার দোয়া কবুল হয় এবং গোনাহ মাফ হয়। ঈমান ও ইতেকাফের সাথে যে ব্যক্তি রোজা রাখবে তার অতীতের সব গোনাহ-অপরাধ মাফ করে দেওয়া হবে”।
সুতরাং পবিত্র রমজান মাসের ‘সিয়াম’-এর ফজিলত সত্যিই অসীম ও অতুলনীয়। কঠোর ‘সিয়াম’-এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বাত্মক চেষ্টা করা সকল মুসলমানের কর্তব্য। রোজার মাধ্যমে, তারাবিহর মাধ্যমে, মাসব্যাপী সংযম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভের এই সুযোগ আর কোনো মাসেই পাওয়া যায় না। উপরন্তু এই পবিত্র মাসে যেভাবে আল্লাহর রহমত আমাদের উপর বর্ষিত হয়, সে ধরনের দুর্লভ ও অসাধারণ সুযোগ আমরা কেউ কোনো দিনও হারাতে চাই না। মহান আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, “মানুষ যত প্রকার নেকী বা নেক কাজ করে আমি তার সাওয়াব দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেই। কিন্তু রোজা এই নিয়মের বহির্ভূত। রোজার সাওয়াব এভাবে সীমাবদ্ধ বা সীমিত নয়। রোজার পুরস্কার আমি স্বয়ং নিজ হাতে প্রদান করব।”
ষ লেখক : সংগঠক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রাসেল শাহ ৬ মে, ২০১৮, ৬:৪৮ পিএম says : 0
আমি পড়বো নামাজ, রাকবো রোজা,পড়বো তারাবী। সাবাই
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন