নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা নদী। গত ২০১৭ সালে এই নদীর বেড়িবাধ ভেঙ্গে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছিলো জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার কয়েকশত গ্রাম। বর্তমানে ছোট যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই এই বাঁধটি দুই উপজেলার মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
চরম আতঙ্কে রয়েছে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলাবাসী। কারণ বাঁধটিতে দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না করায় রাণীনগর উপজেলার ঘোষগ্রাম, নান্দাইবাড়ী, কৃষ্ণপুর ও আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ি, শাহাগোলা এলাকার প্রায় ৮কিমি নদীর বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি বন্যায় এই বাঁধের কিছু অংশ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছিলো কয়েকটি গ্রাম। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্যান্য দপ্তরের সহযোগিতায় স্থানীয়রা ভেঙ্গে যাওয়া অংশটি মেরামত করায় বেঁচে যায় কয়েকশত গ্রাম, ফসলের মাঠ ও পুকুর-জলাশয়।
সূত্রে জানা গেছে, নদীর পানি আটকানোর জন্য আশির দশকে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঘোষগ্রাম, নান্দাইবাড়ী, কৃষ্ণপুর ও আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ি এলাকায় স্থানীয় সরকারের সহায়তায় স্থানীয়রা তৈরি করেন বেড়িবাঁধ। এরপর থেকে সরকারের কোন দপ্তর এই বেড়িবাঁধের কোন সংস্কার করেননি। স্থানীয়রা বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে কোনমতে রক্ষা করে আসছে এই বাঁধটি। কিন্তু বর্তমানে এই বাঁধের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ভাঙ্গতে শুরু করেছে মাটির বড় বড় চাপ। ভাঙ্গনের ফলে বাঁধের উপর দিয়ে পায়ে হেটে যাওয়ার মতো কোন রাস্তা নেই। যে কোন সময় এই বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হতে পারে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার কয়েকশত গ্রাম আর শত শত বিঘা জমির ফসল। তবুও কোন দপ্তরের নজর নেই বাঁধের দিকে।
নান্দাইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন, গফুর মিয়াসহ অনেকেই বলেন বর্ষা মৌসুমের সময় আমাদের নির্ঘুম রাত কাটে এই বেড়িবাঁধটির জন্য। কারণ প্রায় ৩০বছর পার হলেও কোন দপ্তরই এই বাঁধটির বিন্দুমাত্র সংস্কার কাজ করেনি। বাঁধটি যে কোন মুহূর্তে ভেঙ্গে যেতে পারে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন আতঙ্ক। বর্তমানে বাঁধটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই সকলের উপকারের স্বার্থে দ্রুত বাঁধ সংস্কার করা প্রয়োজন।
উপজেলার ৩নং গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আবুল হাসনাত খাঁন হাসান বলেন নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে বাঁধটিতে যা সংস্কার করা খুবই জরুরী। এই বাঁধ নাকি কোন দপ্তরেরই নয়। তাহলে সংস্কার করবে কে? আমাদের পরিষদের তেমন কোন বরাদ্দ আর আসে না যে সেখান থেকে কিছু দিয়ে কিছুটা সংস্কার করবো। দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না করায় বাঁধটি এখন মরনফাঁদে পরিণত হয়েছে। তবে এবার বাঁধটি পরিদর্শন করে তা সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিরা তবে এই আশ্বাসের অতিদ্রুত বাস্তবায়ন চায় এলাকাবাসীরা।
রাণীনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন পানি কমার পর বাঁধটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধের উপর দিয়ে পায়ে হেটে যাওয়ার মতো রাস্তাটুকুও নেই। আর এই বাঁধটি সংস্কার করার জন্য অনেক টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন যা আমার পরিষদের একার পক্ষে সরবরাহ করা অসম্ভব। তবে সব দপ্তর মিলে যদি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তাহলে এই কাজটি করা সম্ভব। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করবো বাঁধটি ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার বলেন এই ঝুঁকিপূর্ণ অংশটুকু নদীর বাঁধ নয় রাস্তা ছিলো কিন্তু কালের আর্বতনে নদী ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে এখন তা বাঁধে পরিণত হয়েছে। তাই আমি এই ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙ্গন অংশটুকু মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন পাঠিয়েছি। আবেদনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই এই ভাঙ্গন কবলিত অংশটুকুর মেরামতের কাজ শুরু করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন