হঠাৎ করেই চলে গেলেন প্রচন্ড ধর্ম পরায়ন-নিরহঙ্কার কথাশিল্পী টনি মরিসন। সবার জন্য নিবেদিত তাঁর কথাশিল্প। প্রতিটি পাতায় তিনি ম্যাসেজ দিয়েছেন কালোর বিরুদ্ধে-অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে। প্রচন্ড প্রত্যয়ী ছিলেন। মূলত তাঁর লেখায় বর্ণবৈষম্য, ধর্মের অপব্যবহার আর অধিকারহীনতার কথা বেশি উঠে এসেছে। ঋণী করে গেছেন লক্ষ কোটি পাঠককে আলোর পথ দেখিয়ে, ভালোর কথা শিখিয়ে। অনন্য-অসাধারণ এই কথাশিল্পীর জন্ম আমেরিকার ওহাইও অঙ্গরাজ্যের লরেইন-এ ১৯৩১ সালে। এরি লেইকের নিকটে উত্তরাঞ্চলের ছোট্ট এই শিল্প শহরটিতে তখন মূলত ইউরোপিয়ান, মেক্সিকান ও কৃষ্ণাঙ্গদের বসবাস ছিল। টনির বাবা জর্জ ওফোর্ড ও মা সারাহ উইলিস ওহাইওর দক্ষিণাঞ্চল থেকে বর্ণবাদ এড়াতে এবং অধিকতর সুবিধার আশায় উত্তরে চলে আসেন। ছোটবেলা থেকেই টনি অত্যন্ত মেধাবী। শৈশবে তাঁর নাম ছিল ক্লোয়ি এ্যান্তনি ওফোর্ড। ক্লাসের মধ্যে তিনিই শুধু প্রথম গ্রেডে পড়তে পারতেন। ১৯৪৯-এ ভর্তি হন ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে। ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন ১৯৫৩ সালে। অনেকেই তাঁর প্রথম-নাম ‘ক্লোয়ি’ ঠিকমতো উচ্চারণ করতে না পারায় মধ্যনামের সংক্ষেপ ‘টনি’কেই প্রথম-নাম হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৫৫‘তে স্নাতকোত্তর পাস করেন নিউইয়র্কের ইথাকার কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে। এরপর চাকরি নেন হিউস্টনের টেক্সাস সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৫৭ সালে ফিরে আসেন হাওয়ার্ডে ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে। এখানে দেখা হয় জ্যামাইকান প্রকৌশলী হ্যারল্ড মরিসনের সঙ্গে। পরের বছর বিয়ে করেন তারা। নামের শেষ অংশে যোগ হয় স্বামীর নাম। শিক্ষকতা ও পরিবারের দেখাশোনার পাশাপাশি ছোট এক লেখক দলে যোগ দেন। টনির প্রথম গল্প একটি কালো মেয়েকে নিয়ে,স্রষ্টার কাছে যে প্রার্থনা করত নীল চোখের জন্য, কারণ তার ধারণা সাদা মেয়েদের মতো নীল চোখই শুধু সুন্দর।
এই নীলের প্রেমে মগ্নতা নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে নির্মাণ করেছেন বিশ্ববিজয়ের উপন্যাস। যে কারনে পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছড়িয়ে আছেন নিরন্তর লেখনির মাধ্যমে। বাস্তবতা হলো- নীলের চেয়েও ঘননীল টনি মরিসন। কৃষ্ণাঙ্গী এই কথাশিল্পীর উপন্যাস অনেকটা কবিতার মত সুখপাঠ্য কৃষ্ণাঙ্গ দাসের জীবনঝংকার আছে তাঁর রচনায়৷ নোবেল, পুলিৎজার সব আগেই হয়ে গেছে। সহাস্য টনি মরিসনকে কখনো সরাসরি না দেখলেও লেখকচোখে কল্পনায় তাকে দেখে মনে হয়েছে- ছন্দিত জীবনের জন্য নিবেদিত মানুষ ছিলেন তিনি। না হলে তাঁর লেখনিতে এত প্রেম-ভালোবাসা-অভিজ্ঞতা কিভাবে এসেছে? লা লিজিয়ঁ দ অনর যেবার তিনি পেয়েছিলেন, সেবার কাগজগুলো লিখেছে- শিল্পকলা রসিক ফরাসি দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান। সেই সম্মানে সম্মানিত হলেন টনি মরিসন৷ সেই টনি মরিসন, ১৯৯৩ সালে যাঁর উপন্যাস ‘দ্য বøুয়েস্ট আই’ নোবেল সাহিত্য পুরষ্কার জিতে নিয়েছিল নোবেল যখন জেতেন, তখন কৃষ্ণাঙ্গী এই লেখিকার বয়স খুব একটা বেশি ছিল না। নোবেলজয়ী তাঁর এই উপন্যাসের নামটির বাংলা করলে হয় ‘নীলের চেয়েও ঘননীল।’ নিজে আফ্রিকার মানুষ; কিন্তু তাঁর লেখনিতে উঠে এসেছে ছন্দিত-নন্দিত বিভিন্ন ধরনের মানুষের জীবনকথা। যদিও বলা হয়ে থাকে, সকল বিষয়ের পাশাপাশি তাঁর রচনাতে উঠে আসে সেই কালো মানুষদের দিনলিপি৷ নোবেলজয়ী দ্য বøুয়েস্ট আই উপন্যাসে যেমন, দাসত্বের অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় গভীরে কেঁদে চলা এক নারীর মর্মন্তুদ কাহিনী লিখে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন টনি। তারপরেও তাঁর রচনা বড় সুখপাঠ্য অনায়াস। অতি সহজে বুকের গভীরে শিকড় বুনে দেয় তাঁর গল্প বলার ভাষা, কবিতার চালে যার চলন বড় ছন্দময়। একজন নিবেদিত পাঠক হিসেবে বলবো- টনি মরিসনের ‘বিলভেড’ উপন্যাসটা ১৯৮৮ সালে পুলিৎজার জিতে নেয়। তারপর ‘৯৩-তে নোবেল, এরপর লা লিজিয়ঁ দ্য অনার।
কিভাবে জিতেছেন? প্রশ্নকর্তাদের জন্য নিবেদিত আমার এই লেখনি। তিনি এতটাই পরিচ্ছন্ন ও সরল মানষিকতা ছিলেন যে, নির্মলতায় বলেছেন- সকালে আমি খুব প্রাণবন্ত থাকি। এই সময়টা গ্রাম্য কৃষকদের সময়। আমি সুর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠতে পছন্দ করি। যাই হোক, আমি আমার ‘দ্য ব্লুয়েস্ট আই’ শেষ করার পর এটি অনেকের কাছে পাঠাই। তারপর অনেকের কাছ থেকেই আমি ফেরত চিঠি পাই। তারা অধিকাংশই এটিকে মানোত্তীর্ণ বলে জানায়। তবে একটি চিঠি পাই যেটিতে দেখা যায় কেউ একজন বইটিকে অন্যভাবে নিয়েছেন এবং এটিকে ভাল বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। সেই সম্পাদক একজন নারী ছিলেন। তিনি অবশ্য ভাষাশৈলী নিয়ে প্রশংসা করেছিলেন। তারপর লিখেছিলেন, ‘কিন্তু এটির কোন শুরু নেই, মধ্যভাগ নেই এবং সমাপ্তি নেই।’ আমার মনে হয়েছিল তিনি ভুল করেছেন। কিন্তু এটি আমাকে শিহরণ দিয়ে গিয়েছিল। তারপর ক্লদ ব্রাউন আমার কাছে কয়েকজনকে পাঠালেন। এদের মধ্যে হল্ট, রাইনহার্ট এবং উইনস্টন ছিলেন। ‘স্ক্রু হোয়াইটি’ বইটির লেখার পরের দিনগুলোর কথা। বইটির মধ্যে ‘স্ক্রু হোয়াইটি’ আন্দোলনের যে কয়েকটি আগ্রাসী বিষয়বস্তু ছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘কালোই নান্দনিক।’ আমি ভাবলাম, ‘এটি আসলে কী সম্পর্কে? তারা কী নিয়ে কথা বলছে? আমাকে নিয়ে? তারা বলতে চাচ্ছে, আমি সুন্দরী?’ তারপর ভাবলাম, ‘এক মিনিট অপেক্ষা করুন। এরা আমার দর্শনীয় কৃষ্ণাঙ্গ বগিতে আরোহণের আগে আমাকে এ নিয়ে বলতে দিন।’ তুমি জান, বর্ণবাদ যা করতে পারে তা হচ্ছে আত্মবিতৃষ্ণা সৃষ্টি। এটি আমাদের আঘাত দেয়। এটি এমনকি ধ্বংসও করে দিতে পারে।
একজন বালিকা যে কি-না নিজেকে কুৎসিত ভাবত এবং সে নীল চোখ প্রত্যাশা করত। এমন একটি গল্প বলার মধ্য দিয়েই আপনার প্রথম উপন্যাসটি শুরু করেছিলেন।এটিই মূলত পরিপূর্ণভাবেই ‘কালোই নান্দনিক’ আন্দোলনের বিপরীত। আপনার শুরুর দিনগুলোর কিছু সমালোচক যারা কি-না কৃষ্ণাঙ্গ স¤প্রদায়েরই ছিল, এই উপন্যাসটি দ্বারা কি আপনি তাদেরকে ইঙ্গিত করেছিলেন? হ্যাঁ, তারা এটার নিন্দা করেছিল। সবচেয়ে চমৎকার যে জিনিসটি, সেটি আমি কোন সমালোচকের কাছ থেকে পাইনি। সেটি পেয়েছিলাম আমার এক ছাত্রীর কাছ থেকে। সে বলেছিল, ‘আমি বøুয়েস্ট আই পছন্দ করি, কিন্তু এমন একটি বই লেখায় আমি আপনার প্রতি উম্মাদনা বোধ করি।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন?’ সে জবাব দেয়, ‘কারণ এখন তারা আমাদের আকাক্সক্ষার বিষয়টি জেনে যাবে।’ বেশিরভাগ সমালোচকের দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল উড়িয়ে দেবার মতো। ঐ পারিপাশ্বিক অবস্থায় আমার মনে হয়েছিল বইটি কেউ পড়বে না। দেড় হাজার কপি ছাপা হওয়ার কথা থাকলেও ছাপা হয়েছে মাত্র ১২০০ কপি। আমার মনে হয় ওরা ৪০০ কপির বেশি ছাপেনি। বানতাম নরম মলাটের একটা বই কিনেছিল। এটা ছুড়ে ফেলে দেয়ার মতো ছিল। তারপর অসাধারণ কিছু একটা ঘটল। আমি মনে করি এই অসাধারণ ঘটনাটির পেছনে সিটি কলেজের ভূমিকা রয়েছে। বইটি ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। সিটি কলেজ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, প্রতিটি কারিকুলামে ভর্তি হওয়া নবাগতদের জন্য নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান লেখকদের বই থাকবে। আমার বইও সে তালিকায় ছিল। তার মানে এই নয় যে বইটি শুধুমাত্র নবাগতদের শ্রেণীতেই পাঠ্য থাকছে, সেটি আরও অনেক ক্লাসেই পাঠের সুযোগ উন্মোচিত হয়ে যায়।
ওহিও-র এক দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের ছোট্ট মেয়েটি কীভাবে গোটা বিশ্বের হৃদয় জিতে নিয়েছেন তাঁর লেখনীতে? প্রশ্ন উঠ্ে পারে সবার মনে, উত্তরে বলবো- গত শতাব্দের সেরা মার্কিন লেখিকা টনি মরিসনের নিজের জীবনটাও উপন্যাসের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
টনি মরিসন অবশ্য নিজেই বলেছিলেন, আমার মনে হয় যে আমি যখন বড় হয়ে উঠছিলাম তখন আমি এই দুটো শব্দ কালো এবং নারীবাদী, দুটোকেই একত্রে মিলিয়ে ফেলেছিলাম, কারণ আমি এমনসব কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলাম যারা খুবই কষ্টসহিষ্ণু এবং উদ্যমী এবং যারা সব সময় স্বপ্ন দেখত তারা কাজ করে অর্থোপার্জন করছে এবং বেশি বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে না এবং ঘরসংসারও একই সঙ্গে পরিচালনা করছে। তাদের কন্যা-সন্তানের কাছে তাদের প্রত্যাশা ছিল ভীষণ ভীষণ বেশি, এবং তা থেকে কোন ছাড় ছিল না আমাদের; এটা আমার কাছে কখনো মনে হয়নি যে এটা একটা নারীবাদী কার্যক্রম, আপনি জানেন, আমার মা সেই ছোট্ট শহরে মাত্র খুলেছে এমন একটা থিয়েটারে হেঁটে হেঁটে যেতেন শুধুমাত্র এ কারণে যে কর্তৃপক্ষ যেন জনগণদের কৃষ্ণাঙ্গ শ্বেতাঙ্গ এভাবে পৃথক না করে ফেলে। এবং যত তাড়াতাড়ি এটা খুলল, সে ওটাতে সবচেয়ে প্রথম গেল, এবং দেখল অভ্যর্থনাকারী তাকে একজন কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে কোথায় বসায়, এবং কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে কোন সমস্যা যদি হয় চারদিকে সে দেখে নিয়েছে কারুর কাছে অভিযোগ করার জন্য। এ রকম কাজকর্ম করা ছিল দৈনিক ব্যাপার, এবং পুরুষরাও এ রকম করত, দেখত যে কোন সামাজিক সাংস্কৃতিক বা অর্থনৈতিক ব্যাপারে শ্বেতাঙ্গরা তাদের কে কতখানি গুরুত্ব দেয় বা অপমান করে। কাজেই আমার কখনো এটা মনে হয়নি যে তার কৃষ্ণাঙ্গদের অস্তিত্বের এ ধরনের নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা থেকে নিজেকে সরিয়ে বৃহত্তর পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়া দরকার। এবং মূল ঘটনা হচ্ছে সে একজন নারী তাই বলে তাকে কখনো বাধাগ্রস্ত করা হয়নি। বাচ্চারা সিনেমায় গেলে-কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চারা-তার মেয়ে বাচ্চারা, একই ভাবে তার ছেলেরাও সিনেমায় গেলে তাদের সঙ্গে অন্য শ্বেতাঙ্গরা কি ব্যবহার করে তা দেখার জন্য তিনি খুবই উৎসুক ছিলেন। কাজেই আমি এমন সব মানুষের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলাম যারা এই সব নিয়মকানুন কাজকর্ম খুব গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করত এবং নিজেরা এসব কাজ করত। পরবর্তীতে এগুলোকে বলা হতে লাগল যে এগুলো ‘নারীবাদী’ আচরণ। শুরুর দিকে এ রকম ব্যাখ্যার কারণে আমি প্রচুর ঝামেলার মধ্যে পড়েছি। এবং আমি এ বিষয়ে বেশ কিছু প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখেছি, এবং সত্যিকার অর্থে, আমি ‘সুলা’ বইটিও লিখেছি সে কারণেই, নতুন ধারণার ওপর তাত্তি¡ক ভিত্তিতে, যেটাতে ছিল : নারীরা অবশ্যই একে অন্যের বন্ধু। এবং যে কম্যুনিটিতে আমি বেড়ে উঠেছি, সেখানে এমন অবস্থা যে, যে কোন সময়ে, যে কোন প্রেক্ষিতে, একজন নারী একজন পুরুষের চাইতে একজন নারীর বন্ধুত্ব ও সঙ্গ বেশি পছন্দ করে। তারা এই চেতনায় সত্যি সত্যিই একে অন্যের ‘বোন’।’
দ্দধু আমার নয়; অসংখ্য পাঠকের প্রিয় টনি মরিসন শিক্ষকতা ছেড়ে ‘র্যানডম হাউস’ প্রকাশনার সম্পাদক হয়েছিলেন, নিউইয়র্কের সিরাকুজে জীবনকে থী করতে চেয়েছিলেন, পরে অবশ্য নিউইয়র্ক সিটিতে নির্মাণ করেছিলেন প্রত্যয়ী পথ। চাকরি ছেড়ে লেখায় মন দিয়েছিলেন। কালো মেয়েটিকে নিয়ে লেখা ছোট গল্পটিকে উপন্যাসে পরিণত করলেন। লেখালেখিকে নিলেন ‘এক্সাইটিং’ ও ‘চ্যালেঞ্জিং’ হিসেবে। গল্পটি বøুয়েস্ট আই (১৯৭০) নামে উপন্যাস হিসেবে প্রকাশ করালেন। এরপরের উপন্যাসগুলো হলো : সুলা (১৯৭৩), সংস অব সলোমন (১৯৭৭), বেবি টার (১৯৮১) ও বিলাভ্ড (১৯৮৭)। বিলাভ্ড উপন্যাসটি পরের বছর পুলিৎজার পুরস্কার পায়। আমেরিকার বর্ণবৈষম্যের এক হৃদয়বিদীর্ণ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসে। ১৮৫১ সালের একটি ঘটনা। ক্রীতদাসী মার্গারেট গার্নার তার কেন্টাকির মনিবের কাছ থেকে পালিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে চলে আসেন ওহাইওতে। ধরা পড়ার আগে তিনি তার সন্তানদের হত্যা করতে চান, দাসত্বের জীবনে ফিরিয়ে দেবার পরিবর্তে। একটি সন্তানকে হত্যাও করেন। মার্গারেট এজন্যে অনুতপ্ত নন, কারণ তিনি চান তার মতো দাসত্বের জীবন যেন সন্তানদেরকে স্পর্শ না করে। পরবর্তী উপন্যাসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জাজ (১৯৯২) ও প্যারাডাইস (১৯৯৭)। টনি মরিসন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ১৯৯৩ সালে। তিনিই নোবেল বিজয়ী একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ নারী। তাঁর লেখায় বর্ণবাদী সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতা, আফ্রিকান-আমেরিকান নারীদের জীবন এবং বৈরী সমাজে তাদের শক্তি ও সংগ্রাম, পৌরণিক উপাদান, সুগভীর পর্যবেক্ষণ, সমবেদনা এবং ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক এসেছে অত্যন্ত কাব্যময় গীতলতায়। নানা বিষয়ে লেখা তাঁর গল্প, কবিতা ও আলোচনায় মূর্ত হয়েছে আফ্রিকান-আমেরিকান সংস্কৃতি, বর্ণবাদ, যৌনতা ও শ্রেণীবৈষম্যের কথা। ছোটবেলায় শোনা দক্ষিণাঞ্চলীয় আমেরিকানদের লোকগাথা সঙ্গীতের অনুরণনের অনুভব নিয়েই তিনি পাঠ করেন তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি, ফ্লবেয়ার থেকে শুরু করে জেন অস্টেন পর্যন্ত।
এই পথচলায় অনন্য ছিলেন তিনি। তাঁর মত কেউ নেই, তাঁর সমকক্ষও নেই কেউ। সাহিত্যমানে নির্মলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলসলি কলেজের সমাবর্তনে তাঁর দেয়া ভাষণটি চির-অমলিন হয়ে থাকবে। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আজ তোমরা সাফল্যের সঙ্গে এক মহৎ, সম্মানজনক ও তাৎপর্যময় ডিগ্রী অর্জন করলে, তাই শুরুতেই তোমাদের ধন্যবাদ। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পৃথিবীর অনেক অবদান, অগণিত অর্জন শেষাবধি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে না যাওয়ার কারণে। তোমরা এখন মুক্ত, স্বাধীন। তোমাদের আর পরীক্ষার চাপ নেই। তোমাদের সামনে এখন অবারিত জীবনের নতুন যাত্রাপথ। শিক্ষাজীবনের যত ঋণ, যত দায়- সেসব শোধরানোর সময় এখন। যাত্রা শুরুর পর আগের গৎবাঁধা সব রোডম্যাপ ছুড়ে ফেলতে হবে। নতুনভাবে পথচলার পরিকল্পনা নিতে হবে তোমাদের নিজেকেই। পৃথিবীকে দেখার ভঙ্গিটা হতে হবে অভিনব, চিরসতেজ, নান্দনিক। অবাঞ্ছিত বিষয় বর্জন করে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে সবকিছুকে পর্যবেক্ষণ কর। পথচলার সময় অবশ্যই মনে রাখবে, তুমি কোথা থেকে এসেছ। যে জায়গায় আমাদের জন্ম, সেখানকার ধুলোবালি আর স্বপ্ন আমাদের লালন করতে হবে। পুরো পথেই নিজেকে প্রশ্ন করবে, ‘আমি কেন এই পথে?’ এর একটা উত্তর আমি তোমাদের বলতে পারি। সেটা হলো, জিততে। তুমি জিততেই এ পথে নেমেছ। এ জেতাটা হচ্ছে নিজের সম্ভাবনাময় শক্তির জয়। এ জেতাটা হলো শ্রেষ্ঠ হিসাবরক্ষক, প্রকৌশলী, শিক্ষক কিংবা তুমি যা হতে চাও, তা হওয়ার। যে সম্ভাবনা তোমার মধ্যে আছে, সেটার জন্য নিজেকে বিশ্বাস কর। অন্য কারও সাফল্য দেখে নিজের সফলতাকে বিচার করিও না। অন্য কারও সফলতার গল্প পড়ার দরকার নেই, তুমি নিজেই নিজের গল্প হও। কোন বিষয়ে তোমার আগ্রহ বেশি- এটা তুমি জেনে যাবে একদিন। আবার কেউ কেউ আছে, যারা নিজের আগ্রহের জায়গাটা কখনোই জানতে পারে না। এরই মধ্যে তুমি যদি তোমার লক্ষ্যটাকে স্থির করে থাক, অথবা যদি এমন হয় তুমি তোমার লক্ষ্যকে সন্ধান করছ, তবে মনে রেখ, কৌতূহলই একদিন তোমার জীবনের সফলতা এনে দেবে। অন্যদিকে স্বপ্ন সত্যি করতে হলে তোমার ভেতরে যে ‘তুমি’ আছে, তার কথা শুনতে হবে। ইচ্ছে যদি বিস্তৃত হয়, বিশাল হয়, তোমার স্বপ্ন সত্যি হবেই। সততা, নৈতিকতা ও আগ্রহ নিয়ে কাজ করে যাও। যদি তোমার স্বপ্নের সঙ্গে আপস না কর, তুমি সফল হবে, হবেই। পথ বেছে নিতে তুমি যেমন স্বাধীন, সফল হওয়াটাও তোমার জন্য উন্মুক্ত। দরকার শুধু কঠোর পরিশ্রম এবং একটি স্বপ্ন। আজ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করলে, তাদের অনেকেই জান না, তোমরা পৃথিবীটাই বদলে দিতে যাচ্ছ। আমি জানি, সত্যিই তোমরা পৃথিবীটা বদলে দেবে। কিভাবে বদলাবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমাদেরকেই। আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ আদর্শের জন্য সংগ্রাম করি। জীবনে সংগ্রাম করাটাই তো চিরসত্য। দরিদ্র দেশের ছোট্ট কোন গাঁয়ে নাকি উন্নত দেশের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে একটি শিশু জন্ম নিল, সেটি মুখ্য বিষয় নয়। সব মানুষের আত্মমর্যাদা ও মৌলিক সাম্যতায় আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আরও বিশ্বাস করি, সব মানুষ শান্তি চায়। আমরা অসাধারণ সুন্দর এক পৃথিবীর বাসিন্দা। যদিও তা বিভক্ত বিভিন্ন দলে, তবু আমরা একই মানব স¤প্রদায়ের অংশ। সমতার পৃথিবী গড়তে হলে এখন তোমাদের সহযোগিতা দরকার। তোমরা যে যেখানেই যাও, ভবিষ্যতে যে যা-ই কর না কেন, তোমরা সেই পৃথিবীতে যোগ দিতে যাচ্ছ, উত্তরোত্তর যার বিশ্বায়ন ঘটছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেখানে তোমরা সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন আমার একটা অভ্যাস ছিল এমন, আমি হঠাৎ করে অধ্যাপকদের কক্ষে হানা দিতাম। তাদের প্রশ্ন করতাম- জীবনের অর্থ কী? অধ্যাপকরা ঘাবড়ে যেতেন, ভাবতেন আমার ‘নিওরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার’ হয়েছে। সবাই যে এমনটা ভাবতেন, তা কিন্তু নয়। অনেকেই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতেন। কেউ কেউ বলতেন, ‘সুখ’। আবার কেউবা বলতেন, ‘জ্ঞান’। আমার কাছে জীবনের অর্থ হলো, আমার কাছের মানুষকে সুখী করার জন্য কাজ করা। তোমাদের কাছেও জীবনের আলাদা আলাদা অর্থ থাকতে পারে। আর যদি না থাকে, তাহলে এ পথে ট্রাই করে দেখতে পার। অন্যের জন্য কিছু করার মধ্য দিয়ে নিজের আনন্দ খুঁজে নাও। তাহলে পৃথিবীটা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।’ অসাধারণ তাঁর প্রতিটি কথা, প্রতিটি লেখা, প্রতিটি কাজ, প্রতিটি বই। ‘ইন্টারভিউ’ নামে একটি ম্যাগাজিনে ১ মে, ২০১২ সালে একটি সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়। ম্যাগাজিনের পক্ষে সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেন ক্রিস্টোফার বোলেন। ফটোগ্রাফিতে ছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক ড্যামন উইন্টার। সেখানে প্রশ্ন করা হয়- আপনি তো ভার্জিননিয়া উলফ-এর আত্মহত্যা বিষয়ক বিষয়বস্তু নিয়ে গ্রাজুয়েশনের থিসিস করেছিলেন, তাই না?
উত্তরে সদ্য প্রয়াত টনি বলেছিলেন- আমি উলফ ও ফকনারকে নিয়ে থিসিস লিখেছিলাম। আমি তখন ফকনারের অনেক লেখা পড়েছি। আপনার হয়ত একটা বিষয় জানা না-ও থাকতে পারে। পঞ্চাশের দশকে আমেরিকান সাহিত্য একেবারেই নতুন ছিল। এটি ছিল একেবারেই বিচ্যুত ও আনকোরা। ইংরেজী সাহিত্য বলতে তা মূলত ইংরেজীতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমেরিকান সাহিত্যকে বেশিকিছু করার জন্য এই উঁচুমাপের অধ্যাপকগণই ভরসা ছিলেন। তাদের সেসব কাজ এখন আমাকে নাড়া দিচ্ছে।
কতটা আলোর পথের পথিক হলে সমাজ-জীবন আর আলো আর আঁধারের সমীকরণ নিয়ে আসতে পারেন নিজের সকল লেখায়? প্রশ্ন করতে করতে যাদের সময় কাটে, তাদের জন্য টনি মরিসনের এই কথাগুলেআ জানা প্রয়োজন; তিনি বলেছেন- আমি জানি সেখানে লেখকরা আছেন যারা তাদের সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়ায়ই কোন ধরনের রিভিউ না দেখেই, অথবা কোন বাজে আলোচনা না দেখেই, অথবা তারা নিজেদেরকে ছাঁকনির মধ্যে বা শ্রেষ্ঠত্বের বিচারের মধ্যে ফেলে, এটা তাদের জন্য দরকারি হিসেবে খুঁজে পাবেন, কারণ এগুলো কখনো কখনো তাদের জন্যই বিষাক্ত হয়ে উঠবে। আমি এ ধরনের স্বতন্ত্রীকরণ অনুমোদন করি না। এ দেশ আফ্রিকান-আমেরিকান সাহিত্য কীভাবে মনের মধ্যে গ্রহণ করছে, কীভাবে লিখছে, কীভাবে দেখছে, তা জানার জন্য আমি খুবই আগ্রহী। এটা একটি দীর্ঘ এবং কঠোর সংগ্রাম, এবং এখানে যথেষ্ট পরিমাণ কাজ করতে হবে। নারীদের কাজ কীভাবে রিভিউ হচ্ছে এবং অনুধাবন করা হচ্ছে তা জানার জন্য আমি বিশেষভাবে আগ্রহী। এবং এটা জানার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে আমার নিজের বইয়ের রিভিউ পাঠ করা, এটার শুধুমাত্র এ কারণ নয় যে, আমি কীভাবে লিখি তা জানা। আমি বোঝাতে চাইছি, আমি এই কাজ দিয়ে কিছুই পাই না। আমি অন্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, যারা দেখাচ্ছে আমি কীভাবে এ সকল কাজ করছি, কীভাবে এ সকল কাজে সফলতা আনছি সে বিষয়ে তাদের কাজের আকার-প্রকার বা ধারণা বক্তব্যের সঙ্গে নিজের কাজ মিলিয়ে ফেলছি না। কাজেই আমাকে এসব আদৌ প্রভাবিত করছে না। কিন্তু আমি সাধারণভাবে প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য খুবই উদগ্রীব। এবং বেশি কিছু কৌতূহলোদ্দীপক এবং মজাদার বিষয়ও আমি রিভিউতে দেখতে পাই।
তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘প্যারাডাইস’ কে ‘নারীবাদী’ উপন্যাস বলা হচ্ছে, আপনি কি এটার সাথে একমত? প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেছেন, একেবারেই না। আমি কখনো কোন ধরনের ‘বাদী’ জাতীয় কিছু লিখিনি। আমি কখনো কোন ‘বাদী’ উপন্যাস লিখিনি।
সাহসী উচ্চারণের কথাশিল্পী টনি মরিসন লিখেছেন কম, কিন্তু বিজয় করেছেন বেশি। হয়তো একারণেই টনি মরিসনের গল্প সুইটনেস’ যখন দুলাল আল মনসুর কর্তৃক অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে, তখন মননশীল লেখটিতে ডুবে যেতে যেতে খুঁজে পাই জীবনের কথা বলার অসাধারণ রাস্তা। ‘সুইটনেস’-এর শুরুটা ছিলো এমন- ‘দোষ আমার নয়। তাহলে আমাকে দোষ দিতে পারো না তোমরা। এতে আমার হাত ছিল না। কী করে এমনটি হলো আমি জানিও না। আমার দু পায়ের সংযোগস্থল থেকে অন্যরা ওকে টেনে বের করে। তার এক ঘণ্টার মধ্যেই আমি বুঝতে পারি কোথাও একটা গোলমাল হয়ে গেছে। সত্যিই গোলমাল হয়ে গেছে। ওর গায়ের রং এতটাই কালো, আমি দেখার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে সিটিয়ে যাই। মাঝরাতের মতো কালো। সুদানের মানুষের মতো কালো। আমার ত্বক মোটামুটি ফর্সা; মাথার চুলের রংও ভালো; আমরা এরকম রংকে বলি উজ্জ্বল হলুদ। লুলা অ্যানের বাবার রংও এ রকমই। আমার পরিবারের লোকেরা যে যেখানে আছে তাদের কারো গায়ের রং ওর গায়ের রংয়ের ধারে কাছে নয়। ওর গায়ের রংয়ের সবচেয়ে কাছের তুলনা চলে আলকাতরার সাথে। তবে ওর চুলের রং গায়ের সঙ্গে খাপ খায় না। হালকা কোঁকড়ানো হলেও বেশ সোজা। অস্ট্রেলিয়ার ন্যাংটা প্রজাতির লোকদের চুলের মতো। তোমাদের মনে হতে পারে আমাদের সুদূর কোনো পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্য ওর মধ্য দিয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু কার কাছ থেকে ওর আবির্ভাব হয়েছে কার কাছে? আমার নানিকে তোমরা দেখেছ নিশ্চয়ই। তাকে শ্বেতাঙ্গ বলেই তো মনে করা হতো; তার বিয়েও হয়েছিল শ্বেতাঙ্গের সাথে। তার সন্তানদের সম্পর্কে একটা কথাও তিনি বলেননি কাউকে। আমার মায়ের কিংবা খালাদের কাছ থেকে কোনো চিঠি পেলে না খুলে, না পড়েই ফেরত পাঠিয়ে দিতেন। শেষে তারা আর কোনো খবর পেলেন না। তাকে তার মতো থাকতে দিলেন। তখনকার দিনে প্রায় সব বর্ণসংকর এবং সংকরদের সংকর সন্তানদের প্রায় সবাই এরকমই করতেন, বিশেষ করে তাদের চুল মনের মতো হয়ে থাকলে। কল্পনা করতে পারো কতজন শ্বেতাঙ্গের শরীরের অভ্যন্তরে কৃষ্ণাঙ্গের রক্ত বয়ে চলেছে? অনুমান করে দ্যাখো। আমি শুনেছি এরকম শ্বেতাঙ্গের সংখ্যা শতকরা বিশজন। আমার নিজের মা লুলা মে নিজেকে শ্বেতাঙ্গের বংশধর বলে চালিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ থাকতেই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর জন্য অবশ্য তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। নিজেদের বিয়ের সময় বাবা আর মা গিয়েছিলেন আদালত ভবনে। সেখানে দুটো বাইবেল রাখা ছিল। একটার ওপরে হাত রেখে কৃষ্ণাঙ্গরা শপথ নিতেন। আরেকটা রাখা ছিল শ্বেতাঙ্গদের জন্য। তাদেরকে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য রাখা বাইবেলে হাত রাখতে দেয়া হয়েছিল। বাইবেল বলে কথা! বাইবেল নিয়ে কি প্রতারণা করা যায়? এক শ্বেতাঙ্গ দম্পতির বাড়িতে হাউসকিপার হিসেবে কাজ করতেন আমার মা। আমার মায়ের হাতের রান্নাই তারা প্রতিবেলা খেতেন। গোসলের সময় বাথটাবে বসে আমার মাকে পিঠ কচলে দিতে বলতেন তারা। তাকে আরো কত গোপন কাজকর্ম করতে বলতেন খোদা মালুম। কিন্তু কখনোই তাদের বাইবেল ছুঁতে দিতেন না।’
একদিকে বর্ণবৈষম্য, অন্যদিকে ধর্ম নিয়ে যাচ্ছে তাই অবস্থান পরিষ্কার করেছেন টনি। যে কারণে সারাা বিশ্বে সকল সাহিত্যমোদি তাকে করে রেখেছে আদর্শ লেখক। কারণও আছে অনেক। সেই অনেক কারণের একটি হলো- লেখক স্বত্বা তাকে করেছে স্বপ্নলেখক। বাস্তবতা তুলে আনা নির্ভিক কথাশিল্পী। সুইটনেস-এর শেষ অংশটাই তাঁর প্রমাণ- এখন ওর পেটে বাচ্চা। চমৎকার অর্জন লুলা অ্যান। যদি মনে করে থাকো মাতৃত্ব মানে মধুর স্বরে কথা বলা, মাতৃত্ব মানে প্রাপ্ত কোনো মূল্যবান দ্রব্য, কিংবা ডায়াপার ইত্যাদি, তাহলে তোমার মানসিক ঝাঁকি খাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। বড় ধরণের ঝাঁকি। কল্পনা করে দ্যাখো তোমার বেনামি ছেলেবন্ধু, কিংবা স্বামীর কথা! আই লাভ ইউ মাই বেবি!
প্রতিটি লেখায় তিনি নিজেকে নিয়ে এসেছেন অন্যদের চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে। এই আঙ্গিকের কারণে নিরন্তর স্বপ্নপথ তৈরি হয়েছে সম্মান-শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। যে ভালোবাসা সাফল্য এনে দিয়েছে নোবেল-পুলিৎজার সহ অসংখ্য সম্মাননা...
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন