ঈদকে সামনে রেখে যাত্রীদের গলা কাটছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। শুধু দূরপাল্লাতেই নয়; রাজধানীতে যেসব পরিবহন চলাচল করে তাতেও ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ বা তারও বেশি। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকে নাজেহাল হচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকদের হাতে। নৌযানেও ভাড়া বাড়িয়েছেন মালিকেরা। কোথাও কোথাও ঈদ বকশিসের নামে এই বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা বলেছেন, পরিবহন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা যে যেভাবে পারছেন যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। শুধু দূরপাল্লার পরিবহনেই নয়; রাজধানীতে যে যেভাবে পারছে ভাড়া আদায় করছে। ভুক্তভোগীদের একজন জানান, সাভার থেকে যেসব বাস রাজধানীতে আসছে প্রতিটি বাসে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কোনো কোনোটিতে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সাভার থেকে ঢাকায় আসা ওয়েলকাম পরিবহনের বাস গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া নিত ৫০ টাকা। সেই ভাড়া এখন ১০০ টাকা। ঠিকানা পরিবহনটি সাভার হয়ে যাত্রাবাড়ী চলাচল করে। যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৬৫ টাকা। সেই ভাড়া এখন ১৫০ টাকা। লাব্বাইক পরিবহনে সাভার থেকে যাত্রাবাড়ীর ভাড়া ছিল ৬৫ টাকা। সেই ভাড়াও এখন আদায় হচ্ছে ১৫০ টাকা।
একটি সূত্র বলেছে, ঈদের আগে এসব পরিবহন চুক্তিতে ভাড়া দেয়া হয়েছে শ্রমিকদের কাছে। দিনে মালিক ১৫ হাজার টাকা পাবেন। এর চেয়ে বেশি যা আদায় হয় তা চালক-হেলপারদের। যে কারণে চালক-হেলপারেরা বেপরোয়া হয়ে গেছেন ভাড়া আদায়ে। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নাজেহাল করা হচ্ছে। স্বাধীন পরিবহনটি মিরপুর থেকে পল্টন হয়ে মাওয়া যায়। মিরপুর থেকে মাওয়ার ভাড়া ছিল ১০০ টাকা। সেই ভাড়া এখন আদায় করা হচ্ছে ২৫০ টাকা। গুলিস্তান থেকে যেসব পরিবহন মাওয়া যায় সেসব পরিবহনে ভাড়া ছিল ৭০ টাকা। সেই ভাড়া এখন আদায় করা হচ্ছে ২০০ টাকা। শুভ নামের স্বাধীন পরিবহনের এক যাত্রী গতকাল জানান, ভাড়া নিয়ে সুপারভাইজারের সাথে গতকাল কথা কাটাকাটি হয়। গাড়িটি মাওয়া রাস্তায় তাদের চেকপোস্টে গেলে সেখানে কয়েকজন মিলে যাত্রীদের নাজেহাল করেন। মাওয়া যাওয়ার পরে যাত্রীদের আরেক দফায় নাজেহাল করেন পরিবহন শ্রমিকেরা।
পল্লবী থেকে বিহঙ্গ পরিবহনের গাড়ি সদরঘাটে যাতায়াত করে। ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। সেই ভাড়া এখন ৬০ টাকা। খাজা পরিবহন পল্লবী থেকে যাত্রাবাড়ীতে ভাড়া নিত ৩০ টাকা। সেই ভাড়াও এখন ৬০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। রাজধানীতে ১০ টাকার ভাড়াও এখন ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ৫০ টাকার নিচে কোনো ভাড়া নেই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই যাত্রীদের কাছ থেকে এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না যাত্রীরা। অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। শুভ বলেন, মাওয়ায় যখন যাত্রীদের পরিবহন শ্রমিকেরা নাজেহাল করছিলেন তখন তারা পুলিশের সাহায্য চান। কিন্তু পুলিশ যাত্রীদের কোনো কথাই শোনেনি। যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশ তা আমলে নেয়নি।
দূরপাল্লার পরিবহনেও যথেচ্ছভাবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পদ্মার ওপার থেকে বরিশালের ভাড়া ২০০ টাকা হলেও এখন ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, যেখানে মাইক্রোবাসের ভাড়া ছিল ২৫০ টাকা, সেখানে এখন আদায় হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে এই অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন