দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ঐতিহাসিক আশুরার বিলের ওপর তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গের দীর্ঘতম আঁকাবাঁকা আকৃতির শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতু। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০০ মিটার। এটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণপিপাসুরা। ঈদ আনন্দে প্রকৃতির প্রেমে পরিবার নিয়ে আসা দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ঐতিহাসিক এই স্থান ও স্থাপনাটি। কাঠের সেতুটি যেন বন ও বিলকে এক সুতোয় গেঁথেছে। প্রকৃতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে দিনদিন বাড়ছে ভ্রমণপ্রেমীদের আগ্রহ। ঈদের দিন থেকেই শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান ও আশুরার বিলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে নেমেছে হাজারও মানুষের ঢল। বনের মাঝে ছায়াঘেরা সবুজ মনোরম পরিবেশ ও বিলের পানিতে নৌকায় চড়ে বিলের এপার থেকে ওপারে প্রকৃতিকে দুচোখ মেলে উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমনপিপাসুরা।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে চলতি বছরের ১ জুন নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় উদ্যান ঘেষা আশুড়ার বিলে শেখ ফজিলাতুন্নেছা কাঠের সেতুর উদ্বোধন করেন, দিনাজপুর ৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিক এমপি ও দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহামুদুল আলম। উদ্বোধনের পরেই তিনদিন ব্যাপি মেলার আয়োজন করে নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।
প্রথম দিনেই মেলায় সকাল থেকে ছোট বড় নানা শ্রেনীর মানুষের ওপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এবারও শহরের কোলাহল ও যান্ত্রিক জীবনের খানিকটা বিরতি টেনে ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে বাড়িতে আসা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বনের ভেতরে বিশাল এই কাঠের সেতুর সৌন্দর্য আকৃষ্ট হয়ে ছুটে এসেছেন প্রকৃতিকে কাছে টানার আশায়। বিল ও বনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সরকারি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা। এই বিলে আসা পর্যটকরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি বা রাঙামাটি পাহাড়ি এলাকায় এমন সেতুর দেখা মিললেও সমতলে এমন বৈচিত্রময় বন ও আকর্ষণীয় দৃষ্টিনন্দন সেতু উত্তর জনপদে দেখা মিলে না।
উল্লেখ্য যে, নবাবগঞ্জ সদরের ১ কি.মি. উত্তর পশ্চিমে শালবন। এই শালবনের উত্তর পাশ ঘেঁষেই বিশাল আশুরার বিলের অবস্থান। বিলের আয়তন ২৫১.৭৮ হেক্টর। এই বিলের উপত্তি নিয়ে আছে বিচিত্র কাহিনী। কথিত আছে এই বিলের চারপাশ থেকে ৮০ টি দার বা নালা চর্তুদিকে ছড়িয়ে গেছে বলে এর নামকরণ হয়েছে আশুরার বিল। বিশাল এই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানী এবং এর চারপাশ বেষ্টিত শালবন এক সময় নানা কিংবদন্তীর জন্ম দেয়। বিলের মাঝে কতিপয় স্থান-পাতিলদহ, বুড়িদহ, পীরদহ, মুনির আইল, কাজলাদহ, পালাদহ, মুনির থান ইত্যাদি নামে পরিচিত। এক সময় এ বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এবং বিলের বোয়াল এবং পাবদা মাছ খুবই সুস্বাদু ছিল বলেই জানান স্থানীয়রা। এখনও এই বিলে টেংরা, কই, মাগুর, পুটি চিংড়ি, আইড়মাছ, শোল, গজাড়, বাইম ইত্যাদি বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুম এলে এ বিলে লাল, সাদা শাপলা ফুল বিলের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমন পিপাষু মানুষ আশুড়ার বিলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন