ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বলেছেন, এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি অব সিটিজেন্স) ইস্যুটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তচ্যুত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। ভারতের মন্ত্রী কথা বলেন উভয় দেশের পানিবণ্টন নিয়েও।
ভারত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমারের স্বার্থে এটি জরুরি। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে ভারত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশের পাশে রয়েছে ভারত বাংলাদেশের সব উন্নয়নে সহযোগিতা করে যাবে। সন্ত্রাস দমনেও একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশ। বাংলাদেশ থেকে এই বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে এবং রাখাইন রাজ্যের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে আমরা সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তিস্তা চুক্তি বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা নিয়ে কাজ করছে ভারত সরকার। যোগাযোগ, জ্বালানি ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দুই দেশের মধ্যকার অভিন্ন ৫৪ নদীর পানি বণ্টনের নতুন ফর্মুলা খুঁজছে বাংলাদেশ-ভারত। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করা হবে। জয়শঙ্কর বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং ভবিষ্যতে এটা আরো জোরদার হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী দু’টি অনুষ্ঠানই উদযাপন করতে যাচ্ছি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রথম ঢাকা সফর। বাংলাদেশের সাথে আমাদের অংশীদারিত্ব প্রতিবেশী দেশগুলোও যে পাশাপাশি একসাথে মিলেমিশে থাকতে পারে তার উদাহরণ। আমরা অংশীদার হিসেবে একসাথে কাজ করি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ এশিয়ায় রোল মডেল হিসেবে এই অংশীদারকে টিকিয়ে রাখতে চান।
জয়শঙ্কর বলেন, আমরা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে গর্ব বোধ করি। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিচ্ছি।
এর আগে সকালে জয়শঙ্কর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছেন আবদুল মোমেন। জয়শঙ্কর বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। রাতে ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাসের দেয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। এস জয়শঙ্কর তিন দিনের সফরে শেষে আজ সকালে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন