মোঃ মহসিন আলী মঞ্জু, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) থেকে
কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্ত এলাকা ফুলবাড়ী উপজেলাবাসী নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। রাস্তাঘাটের জরাজীর্ণ দশা, নদীভাঙন, নদী পরাপারে বিড়ম্বনা, নতুন রাস্তা নির্মাণে দীর্ঘ সময় ব্যয়, সীমান্ত এলাকায় বোরকা পড়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, বিদ্যুতের লুকোচরি খেলা, মাদকদ্রব্য পাচার, ছিটমহলের অনিয়ম প্রভৃতি নানাবিধ সমস্যা নিয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে এ উপজেলার জনসাধারণের। এই সব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য অভিজ্ঞমহল সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জানা গেছে, সীমান্ত এলাকার ফুলবাড়ী উপজেলাবাসী যেন নানান জ¦ালা-যন্ত্রণা সহ্য করেছে, চোরাচালানী মাদক পাচারের কারণে এ উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রকৃত পর্দানশীল মহিলারা আর পর্দা ব্যবহার করতে পারছে না। মেয়ে চোরাচালানীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং বোরকার মধ্যে মাদক সরবরাহ করার কারণে এখন বোরকা খুলে মহিলাদের সীমান্ত এলাকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে করে প্রকৃত পর্দানশীল মহিলারা বিপাকে পড়ছে। সীমান্ত এলকারসহ সমগ্র উপজেলার গ্রামাঞ্চলের ও ঘাট পাড়াপাড়ের রাস্তার বেহাল দশায় এ উপজেলার জনগণ যেন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। পুরাতন রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন সস্কার না করা, নতুন রাস্তা নির্মাণে খোঁড়াখুঁড়ি করে দীর্ঘ সময় ফেলে রাখা, রাস্তায় ইটের খোয়া ফেলে সেটা সমান না করার ফলে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে যাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। আবার পুরাতন রাস্তা সস্কারের নামে বরাদ্দ পেয়ে অহেতুক দেরি করা হচ্ছে। এতে আবাদের ভরা মৌসুমে চাষীদের ফসলাদি বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজে চাকরিজীবী শিশু-মহিলাদের জন্য পথ চলা দায় হয়ে পড়েছে। ইহা ছাড়াও কোন উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে সেলামী, বিচার-আচারে অর্থ প্রদানসহ নানান কাজে এক শ্রেণীর দালালের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। নদী বেষ্টিত এ ফুলবাড়ী উপজেলার নদীভাঙনের বিড়ম্বনা যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা রূপে দেখা দিয়েছে। ছোট এই উপজেলার দক্ষিণ দিকে কাঁঠালবাড়ী ঘাট ও পশ্চিম পাশের কুলাঘাট যেন এ উপজেলাকে বদ্বীপে পরিণত করেছে। কাঁঠালবাড়ী ঘাটের ভাঙন ও কুলাঘাটের ভাঙন ক্রমেই ফুলবাড়ী উপজেলাকে সংকুচিত করছে। প্রতি বছর ভাঙছে নদী, জনপথ ও হাজারো মানুষের কপাল। ধরলার প্রচ- ভাঙনে চর পড়ে কেউ হচ্ছে সর্বশান্ত আবার জমিতে পলি পড়ে কেউ হচ্ছে স্বাবলম্বী। বিচিত্র এ নদীভাঙন আরো বিচিত্র ধরলার গতি পরিবর্তন। এত কিছুর পড়েও কুলাঘাট ব্রীজে জনমনে আশার আলো ছড়াচ্ছে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, ফুরবাড়ী উপজেলাবাসী বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের যাওয়া আসার লুকোচুরি খেলা, লোডশেডিংয়ে জনজীবন অস্থির করে তুলেছে। প্রচ- গরম, লু-হাওয়া এ জনপদের মানুষের জীবন যেন ওষ্ঠাগত। কোনভাবেই উপজেলাবাসী স্বস্তি পাচ্ছে না। বর্ণাঢ্য আয়োজনে ছিটমহলবাসীর বিদায়-আগমনও যেন বিষবাষ্প হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ উদ্বোধনে বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার অঙ্গীকার করে তাদের পাঁচ হাজার টাকা মওকুপের ঘোষণা আজও বাস্তবায়তি হয়নি। এক শ্রেণীর স্বর্থান্বেষী মহল কম মূল্যে ছিটমহলবাসীর জমি কম দামে কিনে অধিক মূল্যে বিক্রির নেশায় মেতে উঠেছে। ফলে ছিটমহলবাসী তাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে অনেক গর্ব করে যারা ছিটমহল ত্যাগ করে ওপারে পাড়ি জমিয়ে ছিল তাদের সে গর্ব খর্ব হয়ে গেছে। তাদের দুবেলা পেট পুরে খাওয়াই দায়। ফুলবাড়ী ছিটমহলে বসবাসকারী তাদের আত্মীয়স্বজন ওপারে তাদের খাবার জন্য চাল-ডালসহ সব কিছু পাঠাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিটমহলবাসী জানান, ‘নিজেদের সংসার চালাই দায় এর পর ওপারে তাদের খাবার জোগান দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। সব কিছু মিলিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলাবাসী মহাসংকটময় জীবন কাটাচ্ছেন। অতচ এ সব দুঃখ্য-জ¦ালা, যন্ত্রণা, অসুবিধা যেন কেউ দেখার নেই, কিংবা দেখেও না দেখার ভান করে কৌশলে এড়িয়ে চলছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন