‘সূর্য ডোবার পর কোন প্রাইভেট ও কোচিং চলবে না। আমি থাকলে কোচিং থাকবে না আর কোচিং থাকলে আমি থাকবো না।’ জেলা প্রশাসকের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আমতলীতে দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য জমজমাটভাবে চলছে।
আমতলী উপজেলার সর্বত্র জমজমাট হয়ে উঠেছে কোচিং বাণিজ্য। খোদ উপজেলা সদরে প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেন্টার হলো- চিলা এইচবি মাঃ বিঃ প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন বিএসসির নিজ বাসা, কাউনিয়া মাঃবিঃ সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভিন পলির নিজ বাসা, বকুলনেছা মহিলা কলেজের প্রভাষক জয়নুল আবেদীনের বাসা, সরকারি একে হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক জগদিস কবিরাজের বাসা, পূর্ব চাওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমা আক্তার বিএসসির বাসা, এমইউ বালিকা মা:বি: সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিমের নিজ বাসা, সজল চন্দ্র শীল, মো. আল-আমিন, হুমায়ুন কবির, ছগির উল্লাহ, সোলায়মান, আবু ছালেহসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। এসব কোচিং সেন্টারে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছে। এক একটি কোচিং সেন্টারে ব্যাচে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এতে করে কোচিং-এ এসেও ক্লাশের মতো পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। অনেক কোচিং শিক্ষকরা মানসম্মত শিক্ষা দান না করায় ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। কোচিং নির্ভরশীল হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পেছনে অত্যধিক খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলেও অভিভাবকের অভিযোগ পাওয়া যায়। সাপ্তাহিক ও মাসিক পরীক্ষা নেয়ার কথা বলে অনেক টাকা আদায় করে নেয় তাদের কাছ থেকে। কিছু বলতে গেলেই বলে বেশি বুঝলে পড়তে আসার দরকার নেই।
বর্তমানে আমতলী উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা এতই খারাপ যে, শিক্ষকরা সঠিকভাবে স্কুলে শিক্ষা দেন না বললেই চলে। দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরা চক্রান্ত করেই স্কুলে সঠিক শিক্ষাটি দেন না। তারা মনে করেন, যদি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সব কিছু শিখিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তারা কখনোই প্রাইভেট পড়বে না। ছাত্র-ছাত্রীরা সঠিক শিক্ষাটি স্কুলে পায়নি বিধায় প্রাইভেটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ সব কারণে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই কোচিং-নির্ভর হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরো অভিযোগ রয়েছে, কোচিং বাণিজ্যের কারণে প্রাইভেট পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতাও। এতে করে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রকৃত শিক্ষা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি শিক্ষকদের প্রাইভেট ও নম্বর বাণিজ্যের কারণে প্রকৃত মেধাবীরা মেধার মূল্যায়ন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
সরকারের নির্দেশ আছে কোচিং ও প্রাইভেট পড়া নিষেধ। এ নিষেধ থাকা সত্তে¡ও সরকারের কথা অমান্য করে হরদম চলছে প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য। প্রতিটি স্কুলে একটি করে ম্যানেজিং কমিটি থাকলেও তারা বিষয়টি সঠিকভাবে দেখছে না। গত ৫ আগস্ট বরগুনার জেলা প্রশাসক আমতলীতে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সূর্য ডোবার পর কোন প্রাইভেট ও কোচিং চলবে না। আমি থাকলে কোচিং থাকবে না আর কোচিং থাকলে আমি থাকবো না।’ জেলা প্রশাসকের এই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আমতলীতে দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য জমজমাটভাবেই চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে আমি এ.কে হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলেছি কোচিং না করানোর জন্য। তারা বন্ধ করেছে।
কিন্তু সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় সেই শিক্ষকরা নিজ বাসায় ১৫-২০ জনের ব্যাচ তৈরী করে পড়াচ্ছেন। এ প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী অফিসার বলেন, আপনি সেই শিক্ষকদের নাম বলেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন