মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, সখিপুর (টাঙ্গাইল) থেকে
সখিপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আবার সচল হয়ে উঠছে সেই অবৈধ করাতকলগুলো। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স গত বছর মার্চে দু’দফায় অভিযান চালিয়ে বনাঞ্চলে অবৈধভাবে স্থাপিত ১৩টি করাত কল উচ্ছেদ করেন। খবর পেয়ে বাকি করাতকল মালিকরা নিজেরাই তাদের করাত কলগুলো সরিয়ে নেয়। সম্প্রতি অবৈধ সেই পুরনো কলগুলো ছাড়াও আরো কয়েকটি নতুন করাতকল স্থাপন করে দিনরাত বনাঞ্চলের কাঠ অবাধে চেরাই করা হচ্ছে। ফলে অবৈধ করাতকলের নির্যাতন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সংরক্ষিত বনের কাঠ। উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বন। এ সব অবৈধ করাতকলের ব্যাপারে কয়েকদিন পরপরই জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর প্রতিবেদনের তদন্তের নামে চলে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করে ও প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমান মাসোহারা নির্ধারণ করে আদায় হয়। বন আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের কোনো বিধান না থাকলেও বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন আ’লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা মিলেমিশে এসব করাতকলগুলো চালাচ্ছেন বলে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে। টাঙ্গাইল বন বিভাগের চারটি রেঞ্জের উপজেলার ১৪টি বিটে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে স্থাপিত অবৈধ ৫৫টি করাতকল উচ্ছেদে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গত বছর ১ ও ১৫ মার্চ অভিযান চালানো হয়। ওই সময় হাতিয়া রেঞ্জে পাঁচটি ও বহেড়াতৈল রেঞ্জে আটটিসহ ১৩টি অবৈধ করাত কল উচ্ছেদ করে অবৈধ মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানের সময় বনাঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়া ৫০টি করাতকল ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে। সচল হওয়া ওইসব অবৈধ করাতকলগুলো হচ্ছে-বহেড়াতলী রেঞ্জের নাকশালা দুইটি, আইলসার বাজারে দুইটি, দাড়িয়াপুর আবাদীবাজার রউফের একটি, আকন্দপাড়া বাজার কাদেরের একটি, লুৎফরের একটি, দাড়িয়াপুর জিনের হাটখোলা গোলাপের একটি, ডাবাইল গ্রামে দুইটি, গোহাইলবাড়ি গ্রামে দুইটি, কাঁকড়াজানে দুইটি, মরিচা দুইটি, তৈলধারা দুইটি, গড়বাড়িতে দুইটি, সাপিয়াচালায় অজিতের একটি, কামরুলের একটি, ওসমানের একটি, জাফরের একটি, বাঘের বাড়ি একটি, মহান্দপুর একটি, গড়বাড়ি দুইটি, ইন্দ্রজানি দুইটি, হারিঙ্গাচালা দুইটি, বড়চওনায় দুইটি ও হাতিয়া রেঞ্জের বহুরিয়া রোডে তিনটি, দেওদিঘী বাজারে পলানের একটি, কালিদাস পুকুরপাড় মকবুলের একটি, ওয়াজেদ মার্কেট নঈম উদ্দিনের একটি, হতেয়া বাজারের চারপাশে সাতটি, পাথারপুরে চতলবাইদে দুইটি এবং বাঁশতৈল রেঞ্জের হলদে চালা একটি,পাথরঘাটা দুইটি, কাশেম বাজার মালেকের একটি, জসীম মার্কেট মন্টুর একটি, তক্তারচালা নতুন বাজার আলমের একটি, তক্তারচালা মাদ্রাসার আশে পাশে চারটি, বংশীনগর এলাকায় দুইটি করাতকল। সরেজমিন ঘুরে বনাঞ্চলে অবৈধভাবে স্থাপিত কলগুলো দিনরাত অবাধে বনের গাছ চেরানোর সচিত্র প্রমাণ পাওয়া য়ায়। গত কয়েকদিন যাবৎ অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করা হবে এ তথ্য ফাস হবার পর থেকে করাতকল মালিকগণ একবার বন্ধ করছে আবার চালু করছে। চালু হওয়া একাধিক করাতকল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও বনবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেই কলগুলো চালু করা হয়েছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সখিপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর অবৈধ করাতকলের মাধ্যমে মূল্যবান বৃক্ষ উজাড় হচ্ছে-সেই সাথে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে-সে দিকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউই ভ্রুক্ষেপ করছে না। হতেয়া গ্রামে স্থাপিত অবৈধ করাতকল মালিক চান মিয়া জানান, ‘উচ্ছেদের আগে বন কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে টাকা দিয়ে চালাতাম। এখন সবাই চালু করেছে বলে আমারটাও চালু করেছি।’ টাঙ্গাইল বনবিভাগের হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমেন খান যোগসাজশের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘অবৈধ করাতকল মালিকদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদ আ’লীগের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার জানামতে, এ অ-কাজের সঙ্গে আমাদের দলের কোনো নেতা-কর্মীই জড়িত নয়। কেউ থেকে থাকলে তার দায় আ’লীগ নিবে না।’ সখিপুর ইউএনও ও উপজেলা বনায়ন কমিটির সভাপতি এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এসব অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদে শিগগিরই আবার অভিযান চালানো হবে।’ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা টাঙ্গাইল (ডিএফও) মো. মাসুদ রানা বলেন, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে-যেকোন মুহূর্তে অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করা হবে। উল্লেখ্য, টাস্কফোর্স এর মাধ্যমে অভিযান চালানোর দিন সকল করাতকল বন্ধ রাখা হয়। অভিযান শেষ হলে করাতকলগুলো পুনরায় চালু করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন