শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

লালমোহনে রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে

নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নারী ও শিশুরা

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

লালমোহন (ভোলা) উপজেলা সংবাদদাতা

ভোলার লালমোহন উপজেলায় সংস্কার ও নির্মাণাধীন বেশির ভাগ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ হস্তান্তর হওয়ার আগেই মাটিতে মিশে গেছে। ফলে এখন আর এসব প্রকল্পের সংস্কার কাজের কোনো অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে না। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ফাদেমাবাদ মৌজায় মেঘনা নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাইরে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে নির্মিত হয় ‘প্রভাতি আশ্রয়ণ প্রকল্প’ ও ‘সোনালী আশ্রয়ণ প্রকল্প’। অপরদিকে তেঁতুলিয়া নদীর মাঝে চরকচুয়াখালীতে ৩টি গুচ্ছগ্রাম নির্মিত হয় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে। নির্মাণের কয়েক বছরের মাথায় প্রকল্পগুলোর ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় তা চলতি অর্থবছরে পুনরায় খাদ্যশস্যের বিনিময়ে সংস্কার করে ত্রাণ বিভাগ। কিন্তু সদ্য বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে ওঠায় এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে এসব প্রকল্পের বাসিন্দারা নিদারুণ দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করলেও ত্রাণ বিভাগের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। চরকচুয়াখালীর বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া জানান, এসব প্রকল্পের ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। ঘরের মেঝেতে স্যাঁতসেঁতে কাদা মাটির মধ্যে বসবাস করার কারণে নারী ও শিশুরা সর্দি-কাশি ও খুজলি-পাঁচরাসহ নানা রোগের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর ফ্লোরের সংস্কার করা জরুরি। না হয়, বাসিন্দাদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা অপূর্ব দাস বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেছি। বাসিন্দাদের দুর্ভোগের বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলও অবগত রয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রকল্পের বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য শীঘ্রই ব্যবস্থা নেব। এদিকে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নে এরকম আরও প্রায় ২০টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তা-বে এসব প্রকল্পের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সম্প্রসারিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ। ক্ষতিগ্রস্ত এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের সংস্কার ও নির্মাণাধীন প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা না পর্যন্ত বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল। এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা অপূর্ব দাস জানান, মেঘনা নদীর মাঝে অবস্থিত চরসৈয়দপুর মৌজায় ৪টি এবং তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে ৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের লক্ষ্যে খাদ্যশস্যের বিনিময়ে ফ্লোর নির্মাণের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছিল। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ চরসৈয়দপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প, নুরুল ইসলাম চৌধুরী আশ্রয়ণ প্রকল্প, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম আশ্রয়ণ প্রকল্প, মাওলানা সৈয়দ আহমদ আশ্রয়ণ প্রকল্প, পশ্চিম কচুয়াখালী আশ্রয়ণ প্রকল্প, রজনীগন্ধা আশ্রয়ণ প্রকল্প ও ধূমকেতু আশ্রয়ণ প্রকল্প। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাব, বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে এসব প্রকল্পের মাটির কাজের ৬০ শতাংশই ধুয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, মেঘনা নদীর মাঝে বিচ্ছিন্ন চরসৈয়দপুরে প্রায় ৩ হাজার মানুষের বসবাস। যেখানে কোনো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। এই বাসিন্দারা মাটির কিল্লা ও টংঘর উঠিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে। চরের বাসিন্দারা চাষাবাদ, মাছ ধরা ও মহিষের পাল চড়িয়ে জীবিকানির্বাহ করে। তাদের আবাসনের জন্য সরকারিভাবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। জরুরিভাবে এই প্রকল্প নির্মাণ না করা গেলে আসন্ন বর্ষায় বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করবে। উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের নীলিমা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আমেনা বেগম, রুমা ও আজমত উল্লাহসহ অনেকে জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তাদের ব্যারাকের চালা ও বেড়া উড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রকল্পে বাস করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া নিবারণের জন্য অনেকে হোগলা পাতার বেড়া ও চালে পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে বসবাস করছেন। লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়া বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই দুরবস্থার কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা না নিলে বাসিন্দারা দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন