ভারতের আসামে প্রকৃত নাগরিকদের তালিকা এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ১৯ লক্ষাধিক মানুষের নাম বাদ পড়েছে। নাগরিকপঞ্জি সমন্বয়কের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মোট আবেদন পড়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ। এর মধ্যে ৩ কোটি ১১ লাখই তালিকায় আছেন। যেসব নাগরিক বাদ পড়েছেন, তারা আসামের মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ। প্রথমবারের খসড়ায় বাদ পড়েছিলেন ৪০ লাখ মানুষ।
তবে এদের মধ্যে ঠিক কতজন মুসলমান আর কত শতাংশ হিন্দু, তা নির্ণয় করার উপায় নেই। বিভিন্নভাবে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, হিন্দুরাই বাদ পড়েছেন বেশি।
বিশেষ করে, বাংলাভাষী হিন্দু। ফলে স্থানীয় বিজেপি, যারা এই নাগরিকপঞ্জির দাবিতে মুখর ছিল, তারাই এখন বিপাকে পড়েছে। কেননা, প্রথমবারের খসড়ার মতো এবারও বাদ পড়া বেশিরভাগই বাংলাভাষী হিন্দু বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, যারা কিনা বিজেপির বিশ্বস্ত ভোটব্যাংক।
শিলচর থেকে নির্বাচিত বিজেপি এমপি রাজদ্বীপ রয় যেমন বলছিলেন, ‘এ নিয়ে উদ্বেগ আমাদের আগেও ছিল, এখন সেটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। হিন্দুদের এই তালিকায় মাত্রাতিরিক্তভাবে টার্গেট করা হয়েছে।’ স্থানীয় বিজেপির মুখপাত্র রূপম গোস্বামী এ ব্যাপারে তার অসন্তোষ লুকোছাপা দেওয়ার চেষ্টা করেননি। তার দাবি, আসামে ১৯৭৯-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত যে বিদেশী-বিরোধী আন্দোলন হয়েছে, তা ছিল মূলত মুসলমানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এনআরসি দৃশ্যত সেই আন্দোলনের চেতনা অনুযায়ী হয়নি।
দেখা যাচ্ছে, মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে বাদ পড়ার হার সবচেয়ে কম। সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও একই অবস্থা। রাজ্য বিজেপি প্রধান সেবার বলেই ফেলেছিলেন, এনআরসি হলেও নাগরিকত্ব সংশোধন বিল তো আসবেই। তখন হিন্দু, বৌদ্ধ ও শিখদের নাম চলে আসবে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় বিজেপির বহুল প্রতিশ্রুত ও সমালোচিত ওই বিলে মুসলিম নয়, এমন নথিবিহীন শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। ফলে ওই আইন পাস হলে, এনআরসিতে নাম না আসলেও, অমুসলিম শরণার্থীরা সুরক্ষিত থাকবেন।
প্রথম খসড়ার মতো এবারও যে চূড়ান্ত তালিকায় হিন্দুরা বেশি বাদ পড়েছেন এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই বিজেপির। আসামের বিজেপি দলীয় মন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা তো বলেই দিয়েছেন, এই এনআরসি দিয়ে বিদেশী তাড়ানো যাবে না। তিনি এনডিটিভিকে আরও বলেন, ‘এই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর বর্তমান এনআরসির ওপর আমরা আস্থা পুরোপুরি হারিয়েছি। প্রচুর প্রকৃত ভারতীয় এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।’
মন্ত্রী আরও দাবি করেন, দক্ষিণ সালমারা ও ধুবরির মতো বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে বাদ পড়ার হার সর্বনি¤œ। অপরদিকে ভূমিপত্র জেলায় অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘এই এনআরসি নিয়ে আমাদের আর কোনো আগ্রহই নেই। এনআরসি বাংলাদেশীদের বের করার কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল বা ফাইনাল নয়। কিছুটা অপেক্ষা করুন। বিজেপি শাসনের অধীনে আপনি আরও অনেক ফাইনাল দেখবেন।’
শুধু বিজেপিই নয়। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও এই এনআরসির সমালোচনা করেছেন। কংগ্রেস দলীয় সাবেক রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বিজেপিকে এজন্য দায়ী করেছেন।
গগৈ বলেন, ‘অনেক প্রকৃত ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুরা এই নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন। অথচ, অনেক বিদেশীরা অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। বিজেপিকে ব্যাখ্যা দিতে হবে কোথায় ভুলটা হয়েছে।’
তবে আসামের রাজ্য কংগ্রেস এই তালিকা নিয়ে দৃশ্যত সন্তুষ্ট। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, আসামে লাখ লাখ অবৈধ মানুষ বসবাস করে - এমন কোনো সন্দেহ আজ থেকে থাকবে না।
অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, আসাম থেকে বাঙালি তাড়াতেই কেন্দ্রের পরিকল্পনামাফিক এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠ এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বলেন, আমাদের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষকে নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের এখন কী হবে? তাদের ভবিষ্যৎ কী? কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ৫০ লাখ অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। কিন্তু এনআরসি বলছে ১৯ লাখ। তো অমিত শাহ মিথ্যা বলছেন? নাকি এনআরসি সত্যি? ওয়াইসি বলেন, সঠিকভাবে আপিল আমলে নেওয়া হলে, এই সংখ্যা আরও কমে আসবে।
অবশ্য দিল্লির বিজেপি প্রধান মনোজ তিওয়ারি বলেন, সেখানেও এনআরসি করতে হবে। তার ভাষ্য, ‘এখানে অবস্থা এত বিপজ্জনক হয়ে উঠছে যে, এখানেও নাগরিকপঞ্জি করতে হবে। এখানে যেসব অবৈধ অভিবাসী এসেছে, তারা সবচেয়ে বিপজ্জনক। সময় এলে আমরাও নাগরিকপঞ্জি বাস্তবায়ন করবো।’ একই দাবি জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি প্রধান দিলিপ ঘোষও।
(স্ক্রল.ইন অবলম্বনে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন