একদা ভারত রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান ছিলেন যিনি, আজ তার পরিবারই কি না রাষ্ট্রহীন। শনিবার আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তথা এনআরসি’র চূড়ান্ত তালিকায় আঁতিপাতি করে খুঁজেও পাওয়া গেল না ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতির ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের আত্মীয়দের নাম।
গত বছর এনআরসি দ্বিতীয় খসড়া তালিকাতেই ফকরুদ্দিনেরর ছোট ভাইসহ একাধিক সদস্যের নাম না থাকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এনআরসি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণে যথাযথ নথিপত্র পেশ করতে। সেইমতোই কাজ করেছিলেন ফকরুদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা। কোথাও কোনো ত্রুটিই ছিল না। তা সত্ত্বেও দিনশেষে নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ তারা। আজ রাষ্ট্রহীন একদা রাষ্ট্রপতির স্বজন।
২০১৮র জুলাইতে প্রকাশিত হয়েছিল নাগরিকপঞ্জির দ্বিতীয় খসড়া। সেখানেই দেখা গিয়েছিল, পরলোকগত রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ, তার পরলোগত ভাই একরামুদ্দিন আলি এবং ভাইপো জিয়াউদ্দিনের নাম নেই। যদিও রয়েছেন ফকরুদ্দিনের ছেলে পারভেজ ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম।বাকিদের নাম নথিভুক্ত করতে বংশলতিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছিল তাদের। সেইমতো তা পেশও করা হয়। আশা ছিল, নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের পরীক্ষায় পাশ করে যাবেন। চূড়ান্ত তালিকায় ঠিক উঠবে তাদের নাম। কামরূপের রঙ্গিয়ায় ফকরুদ্দিন এবং তার পরিবারের দীর্ঘদিনের বসবাস। সাদামাটা গ্রাম্য জীবন পরিবারের সকলের। তাই নাগরিকত্ব প্রমাণ করা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধাও ছিল না।
কিন্তু এনআরসি তালিকা তৈরির হরেক জটিল পদ্ধতি। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে সেই কর্মযজ্ঞ শেষে শনিবারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হলে দেখা গেল, তাদের সমস্ত উদ্যোগ নিষ্ফল। আশা ভেঙে চুরমার। তাহলে এবার কি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের দুয়ারে গিয়ে নিজেদের ‘বিদেশি’ তকমামুক্ত করতে হবে ফকরুদ্দিনের পরিবারকে? এই প্রশ্নের উত্তর ভেবেই দিশেহারা।
এখানেই নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা তৈরির কাজের পদ্ধতি নিয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকছে। কোথাও বাদ পড়েছেন ভূমিপুত্ররাই, তো কোথাও এমন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিত্ব। তাহলে টানা ৬ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার নেতৃত্বে কাজ কি এমন দায়সারাভাবেই হয়েছে? এদিনের পর সেই উত্তর খানিকটা স্পষ্ট হয়ে গেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন