সিরাজগঞ্জে চলতি বছর সড়ক-মহাসড়কে জরুরি ভিত্তিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কাজ কিছুই হচ্ছে না। রাস্তা মেরামতের পরপরই চলাচলের অযোগ্যই রয়ে গেছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির অন্ত নেই। এ নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রত্যাহার ও দুইজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ অন্যান্য কর্মকর্তাকে সতর্ক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
আঞ্চলিক সড়কেরও বেহাল অবস্থা। ঢাকা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়ক, হাটিকুমরুল বনপাড়া-মহাসড়ক ও বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক ও নলকা-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা। এবড়ো-থেবড়ো প্রতিটি সড়ক।
বরাদ্দ নেই এমন অজুহাতে কয়েক বছর ধরেই সংস্কার কাজে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সারাবছরই চলে জোড়াতালির কাজ। মাঝে মাঝে মন্ত্রী ও সওজের বড় কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এলে শুধু তড়িঘড়ি মেরামত হয়। কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার কয়েকদিন পরই আবার পুরনো চিত্র। জনপ্রতিনিধিরা জেলা মাসিক উন্নয়ন সভায় একাধিকবার সওজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যর্থ হয়েছেন।
একই অবস্থা শিয়ালকোল-নলকা, তাড়াশ-রানীহাটি-বারুহাস, তাড়াশ-নিমগাছী-ভুইয়াগাঁতী, উল্লাপাড়া-লাহিড়ী মোহনপুর আঞ্চলিক সড়কেও।
শহরের বাজার স্টেশনে লতিফ মির্জা সড়কে, বাজার স্টেশনের সামনে, শহরের খেদনসর্দার মোড়ের, মালশাপাড়া কবরস্থানের সামনে, ছোট বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া জেলা সদরের চাঁদ আলীর মোড় থেকে যমুনার সার ঘাট, বালুর পয়েন্ট ও কয়েকটি ফ্লাওয়ার মিল থাকায় এই রাস্তায় ভারী যানবাহন প্রতিনিয়ত চলাচলের কারণে হোসেনপুর দক্ষিণ স্কুলের সামনে হাঁটু সমান পানিতে সারাবছরই ডুবে থাকে।
সিরাজগঞ্জ জেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক তারিক ইনাম পুলক বলেন, সদর উপজেলার এটিই একমাত্র রাস্তা হওয়ার কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এ বিপজ্জনক রাস্তা ব্যবহার করলেও তারা সাবাই কেন উদাসীন তা বোধগম্য নয়।
বেলকুচি পৌরসভার মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে সয়দাবাদ থেকে বেলকুচি পৌরসভা হয়ে এনায়েতপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তায় শতাধিক স্থানে ছোট-বড় গর্তের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
উল্লাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. মারুফ-বিন-হাবিব বলেন, হাটিকুমরুল মোড় থেকে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে শ্যামলীপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার রাস্তারই বেহাল দশা।
সিরাজগঞ্জ জেলা আ.লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, জেলার বেলকুচি, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কসহ বগুড়া-নগরবাড়ীর মহাসড়কে সওজের উদাসীনতার কারণ কী, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
সড়ক ও জনপথ উল্লাপাড়া সাব-ডিভিশনের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, সড়ক সংস্কার কাজ শিগগির শুরু হবে।
সিরাজগঞ্জ সদর-বেলকুচি সাব ডিভিশনের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ জানান, সয়দাবাদ-বেলকুচি-এনায়েতপুর, সিরাজগঞ্জ-কড্ডা ও কড্ডা-সমেশপুর আঞ্চলিক সড়ক মেরামত ও সংস্কারে প্রায় ২৭ কোটি টাকার প্রকল্প দেয়া হলেও তা পাস হয়নি। এ ছাড়া প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নলকা থেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে মুলিবাড়ি পর্যন্ত চারলেন রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
স¤প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকা মহাসড়ক পরিদর্শন করেন। সংস্কার কাজে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামালকে প্রত্যাহার ও একই সঙ্গে রাজশাহী জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রওশন আলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার নির্দেশ দিয়ে সতর্কও করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন