নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলীয় মেঘনার বুকে জেগে উঠা ভাসানচরকে নবরূপে সাজানো হয়েছে। সারি সারি ঘর, সাইক্লোন শেল্টার, অভ্যন্তরীণ সড়ক, লাইট হাউস, পানি সরবরাহ, খেলার মাঠ, পুকুর, মসজিদ, গার্ডেন, সোলার সিস্টেম ও বনায়ন দ্বীপটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এক সময়ের অখ্যাত ভাসানচর এখন বিশ্বে পরিচিত।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষে ভাসানচরকে সর্বক্ষেত্রে প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে অখ্যাত চরটিকে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ভাসানচরের নয়নাভিরাম দৃশ্য যে কোনো পর্যটককে আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট।
হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত ভাসানচরের দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার প্রস্থ ১৫ কিলোমিটার। তবে প্রতি বছর এখানে নতুন নতুন চর জাগছে। প্রাথমিকভাবে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসনের লক্ষে বিগত এক বছর দৈনিক ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। এখানে ১৪৪০টি টিনশেড পাকা ঘর রয়েছে। প্রতিটি শেড এ ১৮টি কক্ষ রয়েছে। শেডের দুই পার্শ্বে রয়েছে বাথরুম ও কিচেন। প্রতি চার সদস্য বিশিষ্ট পরিবারকে ১টি করে রুম বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রতিটি রুমে আছে দোতলা বিশিষ্ট ২টি বেড।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষাকল্পে ভাসানচরের চারদিকে ১৪ কিলোমিটার উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া জলোচ্ছ্বাসের সময় নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত হয়েছে ৪ তলা বিশিষ্ট ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার। এখানে ভরাটের পর মাটি থেকে ৪ ফুট উঁচুতে তৈরি হয়েছে ১৪৪০টি টিনশেড পাকা ঘর। এছাড়া রয়েছে আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা। ভাসানচরে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। মাত্র এক বছরের মধ্যে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিশাল কর্মকান্ড সম্পন্ন হয়। ভাসানচরের উত্তর পার্শ্বে নৌ-চ্যানেল অতিক্রমকালে মালবাহী জাহাজ, কোস্টার ও লাইটার থেকে বাইনোকুলারে ভাসানচরের বর্তমান দৃশ্য দেখে জাহাজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। দূর থেকে বাইনোকুলারে ভাসানচরকে লাল রংয়ে মোড়ানো দৃশ্যমান হয়।
এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের এমপি আয়েশা ফেরদাউস ইনকিলাবকে জানান, ভাসানচরে শুধু ১ লাখ নয় বরং ১০ লাখ রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের পর্যাপ্ত ভূমি রয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বাত্মক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করা হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষে বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও দাতাসংস্থা বাংলাদেশের উদ্যোগকে সমর্থন দিচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বন্ধুদেশ চীনের মধ্যস্থতায় আলোচনা চলছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে রোহিঙ্গারা নিজে জন্মভূতিতে ফিরে যাবে। এতে করে বাংলাদেশের জন্যও স্বস্তিদায়ক হবে। এক্ষেত্রে ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন না হলে প্রায় ২৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনার বুকে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পটিকে পর্যটন শিল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যারা দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করেন তাদের কাছে ভাসানচর হবে আকর্ষণীয় স্থান। সিঙ্গাপুর কিংবা ব্যাংককের চাইতেও আকর্ষণীয় মেঘনার বুকে প্রকৃতির মাঝে গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্পে নতুন সংযোজন ভাসানচর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন