গৃহবধূর গলায় গামছা পেঁচিয়ে টেনে-হিঁচড়ে ও পিটিয়ে জখম
কাউখালী (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
ইউপি নির্বাচনের জের ধরে পিরোজপুরের কাউখালীতে প্রতিপক্ষ মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা নাসিমা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূর ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা ওই গৃহবধূর গলায় গামছা পেঁচিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে টেনেহিঁচড়ে নির্মমভাবে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নাসিমার দেবর মামুন হাওলাদারের স্ত্রী ডলি বেগম (৩৭) ও তাদের ছেলে কলেজছাত্র মেহেদী হাসান (২০)-কে পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। আহতাবস্থায় তাদের কাউখালী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গৃহবধূ নাসিমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত বৃহস্পতিবার বিকালে কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের দক্ষিণ জোলাগাতি গ্রামের মেম্বার প্রার্থী সেলিম বিশ্বাসের নেতৃত্বে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা এ সন্ত্রাসী হামলা চালায় বলে হাসপাতালে আহত গৃহবধূ নাসিমা অভিযোগ করেন। জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ জোলাগাতি গ্রামের মামুন হাওলাদার ও তার পরিবারের স্বজনরা গত ইউপি নির্বাচনে সাইকেল প্রতীকের পক্ষে সমর্থন দেয়। এ ঘটনার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয় ইউপি মেম্বার প্রার্থী সেলিম বিশ্বাসের নেতৃত্বে আনারস প্রতীকের সমর্থক ১০/১২ জনের সন্ত্রাসী দল প্রতিপক্ষ মামুন হাওলাদারের ছেলে কলেজছাত্র মেহেদী হাসানের ওপর হামলা চালায়। এসময় মেহেদী দৌড়ে নিজ বাড়িতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে উঠানে ফেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। এ সময় বাড়িতে কোন পুরুষ না থাকায় মেহেদীর চাচি নাসিমা বেগম ও মেহদীর মা ডলি বেগম এবং মিনারা বেগম তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাদের তিন জনকেও পিটিয়ে আহত করে। এক পর্যায় সন্ত্রসীরা নাসিমা বেগমের গলায় গামছা পেঁচিয়ে টেনেহিঁচড়ে লাঠি দিয়ে সারা শরীরে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। হামলায় অভিযুক্ত জোলাগাতি গ্রামের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী সেলিম বিশ্বাসসহ অভিযুক্তরা ঘটনার পর থেকে পলাতক। এ ঘটনায় আহত নাসিমা বেগমের দেবর ইউপি সদস্য মো. মামুন হাওলাদার বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে কাউখালী থানায় গত শুক্রবার একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় পরাজিত মেম্বার প্রার্থী সেলিম বিশ্বাস ও আনারস প্রতীকের পরাজিত সন্ত্রাসী সমর্থকরা তার পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সিকদার হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আহত পরিবারের লোকজন গত ইউপি নির্বাচনে সাইকেল প্রতীককে সমর্থন দেয়ায় আনারস প্রতীকের সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, গৃহবধূ নাসিমা বেগমের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তবে আনারস মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হামলার ঘটনায় আমার সমর্থকরা জড়িত নয়। মারামারি হয়েছে মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে। এছাড়াও এই ইউনিয়নে দোকান ঘরে আগুন দেওয়া, তালুকবাজার হাটবাজার ভাঙচুরের প্রতিবাদে দিনব্যাপী দোকানমালিকদের ধর্মঘট পালন, বিভিন্ন ব্যক্তি পর্যায়ে হামলা পাল্টা হামলা চলছে। জনগণ চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। গৃহবধূ নির্যাতনে অভিযুক্ত আসামি ও পরাজিত মেম্বার প্রার্থী মোঃ সেলিম বিশ্বাস জানান, দোকানঘর পোড়ানো মামলায় মামুনকে আসামি করা হলে সে নিজেই এই গৃহবধূর উপর নির্যাতন চালিয়ে নিজে বাঁচার জন্য আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এ ঘটনায় মামুন হাওলাদার বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন