শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

দুপচাঁচিয়া খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহে অনিয়ম : সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে হয়রানির শিকার মিলাররা

প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা : দুপচাঁচিয়া উপজেলা খাদ্য গুদামে চলতি বোরো আমন মৌসুমে চাল সরবরাহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহে সাধারণ মিলাররা স্থানীয় চিহ্নিত কয়েকজন সেন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ মিলাররা চাল সরবরাহ করতে গিয়ে বিভিন্ন হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় তালোড়া ও দুপচাঁচিয়া সদরের ২টি খাদ্য গুদামের জন্য মোট ৫ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সরকারি তালিকাভুক্ত ৫৩৪ জন মিলার চাল সরবরাহের জন্য যথাসময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। সরকারি প্রতি কেজি ৩১ টাকায় এই চাল সরবরাহের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এক সভায় বরাদ্দকৃত চাল স্থানীয় তালিকাভুক্ত মিলারদের মাঝে বিভাজনও করা হয়েছে। এ দিকে সাধারণ মিলাররা উপজেলা সদরের খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে বিভিন্ন হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যোগসাজশে হাতেগোনা স্থানীয় কয়েকজনের এই সেন্ডিকেটের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ অব্যাহত হয়েছে। এই সেন্ডিকেটের মাধ্যমে অনেক নিম্নমানের চালও সংগ্রহ করা হচ্ছে। অপর দিকে তালিকাভুক্ত সাধারণ মিলাররা চাল সরবরাহ করতে গেলে গুদামে জায়গা নেই কিংবা চালের মান খারাপ বলে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে সাধারণ মিলাররা হয়রানির শিকার হচ্ছে। সেই সাথে এই সেন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি উপজেলা সদরের খাদ্য গুদাম অফিসে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আরেফিনকে না পাওয়া গেলেও অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৩ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ এই খাদ্য গুদামে এ পর্যন্ত ১৩৬৯.৫০০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এই খাদ্য গুদামে বরাদ্দ রয়েছে ২০১১.৩০০ মেট্রিক টন চাল। উল্লেখ্য গত ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারিতে উপজেলার চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কাছ থেকে তাদের বরাদ্দকৃত চাল সংগ্রহের জন্য স্থানীয় মিলারদের সাথে অনুরূপভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। উপজেলার ভূতপূর্ব খাদ্য গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক-উজ-জামান অনুরূপভাবে সেন্ডিকেটের মাধ্যমে সাধারণ মিলারদের চাল সংগ্রহ করে তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ডব্লিউকিউএসসি দিয়ে ব্যাংক থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা উত্তোলন করে এবং সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত মিলাররা গত ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ধান চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান খানের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তারেক-উজ-জামানকে থানায় নিয়ে আসে। ঐ রাতেই স্থানীয় মিল চাতাল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ ক্ষতিগ্রস্ত চাতাল ব্যবসায়ীর থানায় বৈঠক বসে। গভির রাত পর্যন্ত বৈঠক শেষে টাকা পরিশোধ করা অঙ্গিকার করে আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা তারেক-উজ-জামানকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে গত ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করেন। এ সময় বিভিন্ন অনিয়মের কারণে খাদ্য গুদামে সিলগালাও করে দেয়া হয়। সেই সাথে তৎকালীন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা তারেক-উজ-জামানকে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ভূতপূর্ব ঐ খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা তারেক-উজ-জামান তার জায়গা জমি, মাইক্রোবাস বিক্রি করে পাওনা মিলারদের টাকা পরিশোধ করে বিষয়টির মীমাংসা করেছিল। চলতি মৌসুমে স্থানীয় ঐ সেন্ডিকেটের তৎপরতায় সাধারণ মিলাররা আবারো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে তাদের চুক্তিবদ্ধকৃত চাল খাদ্য গুদামে সরবরাহ করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন