শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

মৃত্যু উপত্যকায় শোনা যাচ্ছে নির্বাচনের বাঁশি

প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর : দেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব না হলেও মানুষ এখন সস্তা পণ্যে পরিণত হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যু এখন নিত্যদিনের বিষয়। নানা কারণে এসব মৃত্যু সংঘটিত হচ্ছে। একদিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে যেমনি নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তেমনি সামাজিক কারণসহ নানা কারণে ঘটে যাওয়া মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। এসবই যেন প্রতিকারবিহীন বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। একদিকে চলছে টার্গেট কিলিং, অন্যদিকে চলছে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা। গুম-খুন তো রয়েছেই। সেই সাথে সীমান্ত হত্যা, নারকীয় বর্বরোচিত হত্যার পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়জনিত হত্যা বা মৃত্যুও রয়েছে। এ নিয়ে পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, কেউ কথা বললে তাকেই দোষী হতে হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব নিয়ে সরকারি এক ধরনের সমীকরণ রয়েছে। তারা তাদের মতো করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন। এসব যে কেবল মুখরোচক শব্দাবলী সেটা প্রমাণের আর কোনো অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই সমাজে হত্যা-মৃত্যু স্থান করে নিয়েছে। দেশের সচেতন মহল কোনো না কোনোভাবে এসবের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখলেও তাতে কাজের কাজ খুব একটা হচ্ছে না। কারণ যাদের এসবে মনোযোগ দেয়ার কথা তারা এর ভিন্ন ব্যাখ্যা করছেন। আন্তর্জাতিক মহল এ নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তা বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পুনরায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরাপীয় পার্লামেন্ট। গত মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি শীর্ষক এক অধিবেশনে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমে স্বাধীনতার অবনতি ঘটছে।
পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক সাব-কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান ড্যান প্রেদা বলেছেন, আমি গত কয়েক সপ্তাহের সহিংসতায় উদ্বিগ্ন। তিনি মনে করেন, বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশে অনেক আর্থসামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেখানে আমরা নির্বাচনী প্রতিনিধিদল পাঠাই। নির্বাচন বয়কটের ফলে বড় ধরনের রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নে তাদের আহŸান জানানো উচিত বলেও তিনি মনে করেন। বাস্তবত বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যার মূলে যে ভারত পার্লামেন্টে তাদের নিয়েও কথা হয়েছে। ভারতের সাথে সম্পর্কবিষয়ক প্রতিনিধিদলের ভাইস চেয়ারম্যান নিলা গীল বলেছেন, হামলার দায় আল-কায়দা ও আইসিস স্বীকার করলেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে এসব গোষ্ঠীর অবস্থান অস্বীকার করে যাচ্ছে। ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার পরিবর্তে সরকার এসব নৃশংস হত্যাকাÐকে নির্বাচনী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন বাংলাদেশকে সহিংসতায় নিমজ্জিত হতে দেয়া উচিত নয়। তিনি সুপারিশ করেছেন, সহিংসতা ও উগ্রপন্থা প্রতিরোধে ভারতকে সেতুবন্ধন হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের প্রকল্প হাতে নেয়া প্রয়োজন। এর ফলে দেশটিকে উগ্রপন্থার আঞ্চলিক শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হওয়া প্রতিহত করা যাবে। তিনি এও মনে করেন যে, বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকাÐ ও বাছ-বিচারহীন হত্যাকাÐ বন্ধ করতে হবে। এই আলোচনা প্রকৃত বিবেচনায় নতুন না হলেও এতে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন লক্ষণীয়। এটা বোঝা যাচ্ছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সব বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যে ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তা সরকারের ব্যর্থতা অথবা এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তার দিকেই অঙ্গুলী নির্দেশ করছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে যে শক্তিশালী সুশীল সমাজ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবায় তা কতটা কঠিন সে কথাও আন্তর্জাতিক মহলের না জানার কথা নয়। ভিন্নমতের সমর্থক শফিক রেহমান গ্রেপ্তার এবং তার জামিন নামঞ্জুর হওয়ার বিবেচনায় এটা সহজেই স্পষ্ট যে, এদেশে যা কিছুই গঠন করা হোক বা করার প্রক্রিয়া নেয়া হোক তা হতে হবে সরকার সমর্থকদের মধ্য থেকে। বহু নামে বা নানা নামে এরা থাকুক যাকে সরকার গণতন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ বলে তুলে ধরতে পারবে। এমনকি এদের নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতেও সংশ্লিষ্টদের আপত্তি নেই। ভিন্নমতাবলম্বীদের একটি অবস্থানও তারা মানতে নারাজ। এই বাস্তবতায় গণতন্ত্রের প্রাণ রক্ষায় যে ন্যূনতম স্যালাইন প্রয়োজন তাও বাংলাদেশে অনুপস্থিত। সুতরাং বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুসংহতকরণে সুশীল সমাজের বিকাশ এবং টিকে থাকা বর্তমান সময়ে কল্পনাতীত।
গুপ্তহত্যা ও বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকাÐের ফিরিস্তি বাংলাদেশে এত লম্বা হয়েছে যে, এর প্রকৃত হিসাব পাওয়াও এখন দুষ্কর। প্রায় প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকা মিডিয়ায় খবর বেরুচ্ছে বেওয়ারিশ লাশের। নদীতে খালে বিলে ভেসে উঠছে লাশ। বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী সংগঠন আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের হিসাব মতে, এ সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। বেওয়ারিশ লাশ নানা ধরনের ও প্রকৃতির রয়েছে। ব্যভিচারের বিষয়াবলীও এতে অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়াও সামাজিক দ্ব›দ্ব-প্রতিহিংসার ফলেও মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে বেওয়ারিশ হলেও এর মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার অনেকেই রয়েছেন। এসব নিয়ে সমাজে যতটা উদ্বিগ্নতা তার চেয়ে বেশি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাজনিত হত্যাকাÐ। কয়েক বছর ধরেই বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে বাংলাদেশের সন্তানহারা মায়েরা-বাবারা-ভাই-বোনেরা তাদের প্রিয়জনদের ফিরে আসার আর্তি প্রকাশ করে আসছেন। তাদের ভাষায়, তারা অপেক্ষা করছেন স্বজন ফিরে আসবে বলে। আদৌ আসবে কি আসবে না সে কথা কারো পক্ষেই নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এদের প্রসঙ্গ উঠলেই সরকারি ভাষ্য হচ্ছে, তারা কিছু জানেন না। আর যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের ভাষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর পরিচয় দিয়েই তাদের তুলে নেয়া হয়েছে। কে নিয়েছে, কারা নিয়েছে সে সস্পর্কে আজ পর্যন্ত কোনো স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি। তাই এ নিয়ে কিছু বলা না গেলেও এটা সত্যি যে, জলজ্যান্ত মানুষ চলতে-ফিরতে হারিয়ে গেছে। তারা আমাদের থেকে নেই হয়ে গেছে। এই প্রবণতা থেমে নেই। কথিত ক্রসফায়ার অথবা যে নামেই বলা হোক না কেন সত্যি এটাই যে, মানুষ হত্যা হচ্ছে, যাকে সহজ ভাষায় নাগরিক উদ্বেগের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি চলছে টার্গেট কিলিং। যখন বিশেষ অভিযান চলছে তখনো টার্গেট কিলিং অব্যাহত রয়েছে। সে বিবেচনায় টার্গেট কিলিং প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে বলে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সরকারি অভিযান শুরুর দিনই পাবনায় আশ্রমের সেবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ঝিনাইদহের একগ্রামে এক পুরোহিতকে, চট্টগ্রামে এক পুলিশ সুপারের স্ত্রী ও নাটোরে এক খ্রিস্টান ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত ১৮ মাসে এ ধরনের হামলায় লেখক, বøগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিদেশি নাগরিক ও পুলিশ সদস্যসহ খুন হয়েছে ৪৭ জন। চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর ওপর হামলা এ ধরনের কোনো প্রথম ঘটনা হলেও এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর ৬৬টি হামলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালতের সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৫ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭৯টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৬২টি। বিচারাধীন রয়েছে ৫৭টি ও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে ২৬০টি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, এসব টার্গেট কিলিং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। তার মতে, এসব হত্যাকাÐ সংঘটিত করছে জঙ্গিরা। সৎ ও সাহসী পুলিশ অফিসারদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য বাবুল আক্তারের স্ত্রীর ওপর কাপুরুষোচিত ও বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মন্তব্য উদ্ধৃত করে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, আলোচ্য হত্যাকাÐ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে আসছে না তেমন কোনো ইতিবাচক ফল। যার কারণেই নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রায় নির্বিঘেœ একের পর এক হত্যা করে যাচ্ছে জঙ্গিরা। টার্গেট কিলিংয়ের লক্ষ্য কি এবং এর সাথে কারা যুক্ত তা নিয়ে মতপার্থক্য যতই থাকুক এ কথা স্বীকার করতেই হবে। হত্যা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি এখন পর্যন্ত যেভাবে দেখা হচ্ছে তা যে যথেষ্ট নয় তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাÐের পর থেকে এ ধরনের হত্যাকাÐে নতুন মোড় নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আইএস দায় স্বীকার করছে বলেও বলা হচ্ছে। আবার সরকারের বিভিন্ন মহল থেকেও এর নানামুখী ব্যাখ্যা প্রদান করা হচ্ছে। মিডিয়াতেও নানা ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। এর সাথে কারা জড়িত তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতও রয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ মনে করেন, জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আমাদের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা যে কৌশল অনুসরণ করছে তা ফলদায়ক নয়। এটি কাজে দিচ্ছে না। তিনি মনে করেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বাড়িয়ে উগ্রপন্থিদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাবে না। জঙ্গিবিরোধী কাজে অনেক ধরনের কৌশল রয়েছে সেসব কৌশলে এ ধরনের গুপ্তহত্যা বা টার্গেট কিলিং বন্ধ করতে সমর্র্থ হয়। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আমাদের পলিটিক্যাল যে দিকনির্দেশনা প্রয়োজন সেটিও হচ্ছে না। তার মতে, এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের রাজনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করাও জরুরি। আলোচিত হত্যাকাÐগুলো যখন সর্বমহলে নাড়া দিচ্ছে তখন সরকারি মহল থেকে সেই পুরনো বুলিই আওড়ানো হচ্ছে। সরকারি অভিযান শুরুর আগেই শীর্ষ মহল থেকে মোটামুটি একটা গাইডলাইন দিয়ে দেয়া হয়েছে। কাদেরকে ধরতে হবে সে ধারণাও অস্পষ্ট নয়। পুলিশের আইজিপিও সেরকমই বলেছেন। তারা গ্রেপ্তার করছেন সন্দেহের বশবর্তী হয়ে এবং পুরনো লিস্ট ধরে। সোজা ভাষায়, কথিত জঙ্গি দমনের নামে পুনরায় রাজনৈতিক নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো শুরু হয়েছে। এসব নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও কথা বলেছেন। যে ধরনের গ্রেপ্তারের কথা সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন তা মূলত সন্দেহমূলক। সন্দেহের বশে গ্রেপ্তার মানে ৫৪ ধারা। অথচ সুপ্রিমকোর্টের রায়ে এই ধারাকে অসাংবিধানিক বলা হয়েছে। অন্য বিবেচনা হলো, যখন ঘটনা ঘটছে তখন কাউকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। পরে সন্দেহের বসে যাকে খুশি তাকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি কতটা ঘটনা নিরসনে ভূমিকা রাখবে সে ভাবনাও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। চলমান বাস্তবতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কেউ কেউ ভারতকে সম্পৃক্ত করে উগ্রবাদ দমনের যে প্রস্তাব করেছে সেটিও গভীর বিবেচনায় নিতে হবে। এর অর্থ যা দাঁড়াবে তাতে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা ও অবস্থান কোথায় থাকবে সেটিও ভাবতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের উগ্রবাদ সম্পর্কিত ধারণা আর বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি কোনো বিবেচনাতেই এক জায়গায় নয়। বোধকরি এ কথাও বলা বাড়তি কিছু নয় যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যদের চেয়ে খানিকটা আলাদা। এ ধরনের অভিযান মূল সমস্যা সমাধানে কতটা সহায়ক হবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
সাম্প্রতিক সময়ে যত ধরনের হত্যাকাÐ ঘটেছে তার সকল মাত্রা এবং ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে গেছে তৃণমূল নির্বাচন। দেশের সর্বশেষ অবস্থার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনে। এই নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৩৫ জন। আহত হয়েছেন ১০ হাজার। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন তিন হাজার। সংশ্লিষ্টরাই বলছেন এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। সহিংসতা এখন তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার ফলে কত বড় ক্ষতি হয়েছে তার পুরোটা বুঝতে হয়তো আরো কিছুটা সময় নেবে। তবে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়, দেশে যা চলছে তাকে উসকে দিতে এসব ঘটনা যথেষ্ট। এই নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের বিশ্লেষণ ও মতামত প্রকাশিত হয়েছে। কারণ ইতোপূর্বে বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বিবেচনা থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের জোট অংশ না নেয়াতে অনেকে বিশেষ করে সরকারি মহল একে ভিন্ন চোখে দেখেছে। এবার নির্বাচনে এটা প্রমাণিত হয়েছে। কে অংশ নিল না নিল সেটি বড় কথা নয়। সংশ্লিষ্টদের যে নীলনকশা রয়েছে তারা সেটাই বাস্তবায়ন করবে। যে সংঘাত তৃণমূল পর্যায়ে হয়েছে তা মূলত নিজেদের মধ্যেই। সংশ্লিষ্টরা যাকে চায় তাকে আনতে গিয়েই বিশেষ নির্দেশের কারণে অন্যরা বলী হয়েছে। এর ফলে দেশে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই সেকথাও আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। যারা বলছেন স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্য এসব করা হচ্ছে তাদের সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। এসব ঘটনার সাথে দেশি-বিদেশি যাদের কথাই বলা হোক না কেন মূল বিষয় হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্র ধরে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিকে অগ্রাহ্য করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে দেশে যা ঘটেছে এবং ঘটছে তাকে কোনো বিবেচনাতেই রাজনীতির স্বাভাবিক গতিপথ বলা যাবে না। রাজনীতিই দেশের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। সঙ্গতভাবেই দেশের মানুষ রাজনীতিতে সন্তুষ্ট না থাকলে তার নেতিবাচক প্রভাব নানাভাবে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আজকের দিনে সে ভাবনাই জরুরি।
নিরাপত্তা ভাবনাকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একটি স্বাধীন দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যদি নিজেদের নিরাপত্তা ভাবনাতেই অধিকতর ব্যস্ত থাকতে হয় তাহলে সাধারণের নিরাপত্তার কী হবে? আজকের দিনে সঙ্গতভাবে সাধারণের নিরাপত্তা ভাবনাই তীব্রতর হয়ে উঠছে। এই ভাবনার মূলে রয়েছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি সব সময় নির্বাচন চাই। নির্বাচন ছাড়া আমি অন্য কিছু মানতে পারি না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আমাদের সাজা দিয়ে একতরফা নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছে। জণসাধারণের নিরাপত্তা নেই বলে বিনিয়োগকারীদেরও আস্থা নেই। রাজনীতি অর্থনীতি একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০১৪ বা তার চেয়ে খারাপ কোনো নির্বাচন হলে তাতে কোনো লাভ হবে না। পরিস্থিতি যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে সামগ্রিক আস্থার বৃত্তবলয় তৈরি করা না গেলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে বৈকি কমাবে না।
awalthakur@gmail.com

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন