শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ফুলপুরে অতি দরিদ্রদের কর্মসৃজন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খলিলুর রহমান, ফুলপুর (ময়মনসিংহ) থেকে

ময়মনসিংহের ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে ২০১৫-২০১৬ অর্থ-বছরের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ প্রকল্প অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তার উল্টো। অতি দরিদ্রদের নাম ব্যবহার করে টাকা পকেটস্থ করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, প্রকল্প সুপারভাইজার, ট্যাগ অফিসার, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টরা বিভিন্নভাবে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ফুলপুর ও তারাকান্দার ২০টি ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের প্রথম পর্যায়ে ৪০ দিনের জন্য ৭ হাজার ৯শ’ ২৪ জন অতি দরিদ্র শ্রমিকের বিপরীতে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মাঝে ফুলপুরে ৩ হাজার ৭২৯ জন শ্রমিকের বিপরীতে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৩২ হাজার এবং তারাকান্দার দশটি ইউনিয়নে ৪ হাজার ১৯৫ জন শ্রমিকের বিপরীতে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে কাজ শুরুর প্রথম থেকেই সব ইউনিয়নে দেখা যায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা। প্রথমে সব প্রকল্প এলাকায় বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড টানানোর কথা থাকলেও কোনো প্রকল্পেই তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমনকি শ্রমিকদের তালিকাটিও গোপন রাখা হয়। কাউকে প্রকল্প সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে দেয়া হয়নি। শ্রমিকদের কাছে জবকার্ড দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। যে সকল শ্রমিকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তারা নিজেরাই জানে না যে, তাদের নাম তালিকায় রয়েছে। প্রকল্প কাজ তদারকির জন্য ট্যাগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের ২০ জন কর্মকর্তাকে। অথচ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম হলেও তারা প্রকল্প এলাকায় না গিয়ে অফিসে বসেই সব ঠিক আছে বলে প্রত্যয়ন করেছেন। প্রকল্প কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী জানান, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা শ্রমিক তালিকায় তাদের নিজেদের লোকের নাম দিয়ে কাজে উপস্থিত না করেই নিয়মিত হাজিরা দেখিয়েছেন। নিয়মিত এক সাথে সব শ্রমিককে কখনো উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। কোনো প্রকল্পেই ১০/১৫ ভাগের ওপরে শ্রমিক পাওয়া যায়নি। অথচ নিয়মিত সব শ্রমিক উপস্থিত দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সপ্তাহে ৫ দিন কাজ করবে শ্রমিকরা। এজন্য একজন শ্রমিক প্রতিদিন ২শ’ টাকা মজুরি পাবে। এর মাঝে ১৭৫ টাকা নগদ দেয়া হবে ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ২৫ টাকা সঞ্চয় জমা হবে। এক সাথে ৫ দিনের বেশি শ্রমিক মজুরি পরিশোধ করা যাবে না। কিন্তু সরকারি নীতিমালাকে শুরু থেকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এক সাথে ১০/২০ দিনের বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। প্রকল্পগুলোতে তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের বাদ দিয়ে চুক্তিভিত্তিক কিছু লোক দিয়ে লোক দেখানোর জন্য সামান্য মাটি কেটে রাখা হয়েছে। তালিকাভুক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ না করানো হলেও তাদের নিয়মিত হাজিরা দেখিয়ে তাদের ভুয়া টিপসহি দিয়ে ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্যাগ অফিসার জানান, এটা দলীয় কাজ। মাঠে গিয়ে কি হবে। আমাদের ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছুই পারি না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চেয়ারম্যান বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পে পার্সেন্টেজের বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করার কিছু নেই। এটা সবারই জানা। ওপরের সবাই পয়সা পাচ্ছে। তাই মাঠ পর্যায়ে চলছে দুর্নীতি ও হরিলুট। লিখে বা অভিযোগ করে কোন লাভ নেই। সবাই সিস্টেমের কাছে বন্দি। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ অনেকেই এতে জড়িত থাকায় কেউ অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। অভিযোগ রয়েছে বিল প্রদানকারী ব্যাংকগুলোতে শ্রমিক উপস্থিত না হলেও অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ম্যানেজ করে ব্যাংক স্লিপে শ্রমিকদের ভুয়া টিপসহি দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ফুলপুর ও তারাকান্দার চলতি কর্মসৃজন প্রকল্প বাস্তবায়নে ন্যূনতম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় দুর্নীতির মডেল হিসাবে থাকবে এ প্রকল্পগুলো। প্রকল্পগুলোতে ১০/১৫ ভাগ শ্রমিক উপস্থিত না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে শতভাগ শ্রমিক উপস্থিত দেখিয়ে ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লোপাট করলেও দেখার যেন কেউ নেই। অতি দরিদ্রদের জন্য সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ ফুলপুর ও তারাকান্দার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকির অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন