কলাপাড়ায় মহিপুর-আলিপুর মৎস্য বন্দরের শিববাড়িয়া নদী ২৫ বছর ধরে দখল ও দূষনে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। নদীর দু’ধারে চর পরে কমে গেছে নদীর আয়তন। জেগে ওঠা চর দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে বরফকল, ডকইয়ার্ডসহ পাকা স্থাপনা। তৈরি হচ্ছে বাড়ি ঘর, মাছের আড়ৎ, ইটের ভাটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফসলের ক্ষেত। নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধভাবে দখল করা নদীর দু’ধারের কত কত একর পতিত জমি। প্রাকৃতিক কারণে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্যতা কমে গেছে আকঙ্কাজনকভাবে। ভাটার সময় এ নদী দিয়ে কোন লঞ্চ, কার্গো চলাচল করতে পারে না। দখলের এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শিববাড়িয়া নদী নৌযান চলাচলের সম্পূর্ন অনুপোযোগী হয়ে পরবে বলে মনে করেন নদীর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ।
মহিপুর থানাধীন সাবেক খাপড়া ভাঙ্গা ও লতাচাপলী ইউনিয়নকে পৃথক করে রেখেছে এই শিববাড়িয়া নদী। ইউনিয়ন দুইটি ভেঙ্গে ধুলাসর ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন নামে আরও দুইটি নতুন ইউনিয়নের জন্ম হয়েছে। ৪টি ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষে শিববাড়িয়া নদীর অবস্থান। মহিপুর ইউনিয়নের নজীবপুর গ্রামের খালগোড়া থেকে শুরু হয়ে ধুলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর গ্রামের ধোলাই মার্কেট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী দিয়ে একসময় লঞ্চ চলাচল করত । বরিকাল থেকে মহিপুর, কলাপাড়া থেকেচাপলী, মহিপুর থেকে পটুয়াখালী বিভিন্ন রুটে নিয়মিত লঞ্চ চলাচল ছাড়াও মহিপুর ও লক্ষীর হাটের খাদ্য গুদামের পন্য আনা নেওয়ার কাজে কার্গো চলাচল করতে দেখা যেত যা এখন শুধুই স্মৃতি। নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় মাছ ধরার ট্রলারও এখন চলতে পারে না।
মহিপুর-আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির দেওয়া তথ্য মতে বাংলাদেকের অন্যতম সামুদ্রিকমৎস্য আহরণ ও বিপনন কেন্দ্র মহিপুর-আলীপুর বন্দরে ছোট বড় মিলিয়ে মাছের আড়ৎ আছে প্রায় দুইকত। বরফকল আছে ৪৬ টি। প্রতিদিন মহিপুর-আলীপুর থেকেকয়েক’কটন হিমায়িত মাছ বাংলাদেকের প্রায় সকল জেলায় রপ্তানী করা হয়। সারা দেকেবর্তমানে যে ইলিকের চাহিদা রয়েছে তার অনেকটাই পূরণ হয়ে থাকেমৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুরের আহরিত মাছ থেকে। এ খাত থেকে সরকার প্রতি বছর প্রচুর পরিমান রাজস্ব আয় করে থাকে। আলীপুর-মহিপুর বন্দরে বর্তমানে দুটি মৎস্য-মার্কেট ও অবতরন কেন্দ্রের কাজ চলছে। তাছাড়া জেলে, আড়ৎদার, ক্রমিক, ব্যবসায়ী, মালিক, মহাজন মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিকমানুষের এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে। কিছু ভ‚মি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নদীর চরকেচান্দিনা ভিটি দেখিয়ে ডিসিআর নিয়েছেন অবৈধ ভাবে।
এ ব্যাপারে মহিপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আ: সালাম আকন জানান, শিববাড়িয়া নদীর ড্রেজিং কাজ জরুরি ভিত্তিতে শুরু করা প্রয়োজন। তা না হলে এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে পরবে। মহিপুরের মৎস্য আড়ৎদার সমবায় সমিতির সভাপতি ফজলু গাজী জানান, এই খালটি শীঘ্রই ড্রেজিং করা না হলে মহিপুর-আলিপুরের মৎস্য-ব্যবসা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।
লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান মো: আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, মহিপুর আলীপুর মৎস্য বন্দরের উপর নির্ভর করে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নাব্যতার অ ভাবে এ বন্ধরটি কার্যকারিতা হারালে তা এলাকার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এলাকাবাসীর দাবি মহিপুর থানার সমুদ্র উপকূলবর্তী শিববাড়িয়া নদীকে বাচাঁতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই নজর দেয়া উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন