মোবায়েদুর রহমান
গত ৭ জুন মঙ্গলবার ৬ দফা দিবস পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন যে, ৬ দফার মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ লুক্কায়িত ছিল। ৬ দফা দেয়ার পর স্বাধীনতা সম্পর্কে শেখ মুজিবের মনোভাব মরহুম আবদুর রাজ্জাক জানতে চেয়েছিলেন। মুজিব রাজ্জাককে ৬ দফা সম্পর্কে বলেছিলেন, “আমি তোদেরকে সাঁকো দিয়ে গেলাম। তোরা পারলে সাঁকো পার হয়ে ঐ ধারে চলে যাস।” যখন আগরতলা মামলার বিরুদ্ধে পূর্ব বঙ্গে প্রবল গণআন্দোলন চলছিল, তখন একটি প্রধান গগনবিদারী শ্লোগান ছিল, “মিথ্যা মামলা আগরতলা/ বাতিল করো বাতিল করো”। আগরতলা মামলার অন্যতম প্রধান আসামী ছিলেন কর্নেল (অব.) শওকত আলী। পরবর্তীতে কিছুদিন আগে তিনি একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম, “সত্য মামলা আগরতলা”। ঐ বইয়ে আগরতলা মামলার পূর্বাপর ঘটনাবলী বর্ণনা করে তিনি বলেছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে যে আগরতলা মামলা হয়েছিল, সেটি মিথ্যা ছিল না। সেটি ছিল সত্যি। অনুরূপভাবে শেখ মুজিব প্রকাশ্যে যখন বলতেন যে, তিনি পাকিস্তান ভাঙ্গতে চান না, তখন সেটা তিনি মিন করতেন না। কিন্তু ৫০ এর দশক থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করে গেছেন। এসব কাজেরই ক্লাইম্যাক্স হলো সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।
যারা শেখ মুজিবের সমালোচনা করেন তারা বলেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। আরো বলা হয় যে, ২৫ মার্চের পর সাবেক পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যেয়ে তার যে বিচার করা হয় সেই বিচারে তিনি নাকি বলেছেন যে, তিনি পাকিস্তান ভাঙতে চাননি। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতা, যারা শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তারা বলেন, রাজনীতিতে রণকৌশল বলে একটি কথা আছে।
৬ দফা দিয়ে তখনই তিনি যদি বলতেন যে এটা স্বাধীনতার সনদ তাহলে রাষ্ট্রাদ্রোহের অভিযোগে তার বিচার হতো এবং কঠিন শাস্তির মুখোমুখি তিনি হতেও পারতেন। অনুরূপভাবে তিনি যদি বলতেন যে আগরতলা মামলার মাধ্যমে তিনি সাবেক পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন, তাহলেও দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতো। এছাড়া ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ, ৭ মার্চ বা ২৫ মার্চের পর স্বাধীনতার প্রকাশ্য ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ তখন দেশে ছিল সামরিক শাসন। কিন্তু প্রকাশ্য ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলে কি হবে, শেখ মুজিবের কর্মসূচী ও আন্দোলন ধীরে ধীরে সাবেক পূর্ব বাংলা ও পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানকে এবং সেই সুবাদে এই অঞ্চলের জনগণকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল সেটা বুঝতে রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণ কারো অসুবিধা হচ্ছিল না।
॥ দুই ॥
রাজনীতিতে, বিশেষ করে স্বাধীনতা আন্দোলনের মতো একটি কঠিন রাজনীতিতে, সব কথা মুখ ফুটে বলা যায়ও না এবং কৌশলগত কারণে বলা উচিতও নয়। সেজন্য নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের দেখতে হবে যে, শেখ মুজিব ৬ দফার যে কর্মসূচী দিয়েছিলেন সেটি আসলে কি একটি অখ- রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফর্মুলা ছিল? নাকি সেটি ছিল একাধিক রাষ্ট্র গঠনের ফর্মুলা? কথাটাকে ঘুরিয়ে বলা যায় যে, ৬ দফা কি একটি ফেডারেল রাষ্ট্রের ফর্মুলা ছিল? নাকি কনফেডারেশনের ফর্মুলা ছিল? এজন্য আসুন, আমরা ৬ দফার দফাওয়ারী পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করি। তার আগে আসুন, দেখি কনফেডারেশন কাকে বলে। উইকিপিডিয়ায় কনফেডারেশনের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে নি¤œরূপঃ A confederation (also known as a confederacy or league) is a union of sovereign states, united for purposes of common action often in relation to other states.[1] Usually created by treaty, confederations of states tend to be established for dealing with critical issues, such as defence, foreign relations, internal trade or currency, with the central government being required to provide support for all its members. Confederalism represents a form of inter-governmentalism, this being defined as ‘any form of interaction between states which takes place on the basis of sovereign independence’. অনুবাদঃ- “কনফেডারেশন হলো কয়েকটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ইউনিয়ন। সাধারনত একটি চুক্তির মাধ্যমে একাধিক সার্বভৌম রাষ্ট্র নিয়ে কনফেডারেশন গঠিত হয়। এই কনফেডারেশন তার অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়ের দায়িত্বে থাকে। এছাড়া প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রগুলির অভ্যন্তরীণ বানিজ্য অথবা মুদ্রা নিয়েও কাজ করে। কনফেডারেশন হলো সার্বভৌম স্বাধীনতার ভিত্তিতে একাধিক রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে ইন্টার্যাকশন বা মিথস্ক্রিয়া।” কনফেডারেশন হলো তেমন একটি ইউনিয়ন যেখানে এক বা একাধিক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র স্বেচ্ছায় একটি কনফেডারেশনে মিলিত হয়। আবার তারা যদি ইচ্ছা করে তাহলে তারা কনফেডারেশন থেকে বেরিয়ে পূর্বের স্বাধীন সার্বভৌম সত্তায় ফিরে যেতে পারে। আমরা দেখবো, ৬ দফা কি ফেডারেল না কনফেডারেল রাষ্ট্রের ফর্মুলা ছিল। স্বাধীনতা সম্পর্কে শেখ মুজিবের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এই প্রশ্নটি এক নম্বর নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়।
॥ তিন ॥
৬ দফায় বিধৃত ৬টি দফা ছিল নি¤œরূপ ঃ
১. লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে;
২. ফেডারেল সরকারের হাতে থাকবে শুধু দুটি বিষয়, প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক এবং অপর সব বিষয় ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত রাজ্যসমূহের হাতে ন্যস্ত থাকবে;
৩. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি পৃথক অথচ সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সমগ্র পাকিস্তানের জন্য ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটিই মুদ্রাব্যবস্থা থাকবে। তবে আরো থাকবে একটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও দুটি আঞ্চলিক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পুঁজি যাতে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতে না পারে তার ব্যবস্থা সম্বলিত সুনির্দিষ্ট বিধি সংবিধানে সন্নিবিষ্ট করতে হবে;
৪. দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক হিসাব থাকবে এবং অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা রাজ্যের হাতে থাকবে। তবে ফেডারেল সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা দুই অঞ্চল থেকে সমানভাবে কিংবা উভয়ের স্বীকৃত অন্য কোনো হারে আদায় করা হবে;
৫. দুই অংশের মধ্যে দেশীয় পণ্য বিনিময়ে কোনো শুল্ক ধার্য করা হবে না এবং রাজ্যগুলো যাতে যে কোন বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে সংবিধানে তার বিধান রাখতে হবে।
৬. প্রতিরক্ষায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে আধা-সামরিক রক্ষীবাহিনী গঠন, পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র কারখানা স্থাপন এবং কেন্দ্রীয় নৌবাহিনীর সদর দফতর পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন করতে হবে।
॥ চার ॥
শুরুতেই আমার প্রশ্ন ছিল, ৬ দফা কি ছিল স্বায়ত্তশাসনের মোড়কে স্বাধীনতার সনদ? ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং যারা পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই সব সদস্যদেরকে সম্মিলিতভাবে নিয়ে শেখ মুজিব তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান এবং বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি বিশাল জনসভা করেছিলেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের ঐ সমাবেশে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে সাক্ষী রেখে সেদিন শেখ মুজিব তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, “এদেরকে অর্থাৎ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যবৃন্দকে আপনাদের সামনে হাজির করেছি। ৬ দফার ভিত্তিতে নির্বাচন করেছি এবং বাংলার জনগণ আমাকে এবং এই সব এমএনএ এবং এমপিএকে ভোট দিয়ে ৬ দফা বাস্তবায়নের জন্য তাদের রায় দিয়েছে। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, ৬ দফার পশ্নে কোন আপোষ নাই। ৬ দফার একটি দাঁড়ি, কমা বা সেমিকোলনও চেঞ্জ হবে না। আপনাদের সামনে হাজির এই সব সদস্য ৬ দফার একটি দাঁড়ি, কমা বা সেমিকোলনও চেঞ্জ করে তাহলে আপনারা তাদেরকে জ্যান্ত কবর দেবেন।” সেদিনের ঐ রেসকোর্সের মিটিংয়ে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম।
প্রিয় পাঠক, যদি কোন দাঁড়ি, কমা বা সেমিকোলন বাদ না দিয়ে ৬ দফা বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে কি হতো? এ ব্যাপারে আমি একজন বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি দিয়ে আজকের পর্ব শেষ করবো। সেই বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন অর্থনীতিবিদ ড. নুরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ছয়দফা যদি আক্ষরিক অর্থে বাস্তবায়িত হতো তাহলে পাকিস্তান এক থাকতো না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব তাকে পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৭৫ সালের পর থেকে তিনি অর্থনীতিবিদ এবং ফেলো হিসেবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, জাতিসংঘ খাদ্য এবং কৃষি সংস্থায় সহকারী মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক খাদ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এমিরেটাস ফেলো ছিলেন। এখন তিনি আমেরিকার মেরিল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
ড. নুরুল ইসলামের মন্তব্যের সাথে সেই সময়কার প্রায় সমস্ত অর্থনীতিবিদ একমত ছিলেন যে, ৬ দফা যদি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয় তাহলে পাকিস্তান আর একটি অখ- রাষ্ট্র থাকবে না। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে যাবে। এখানে আরেকটি বিষয় যুক্ত করা দরকার। শেখ মুজিব ৬ দফার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন যে, তিনি শুধু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্যই স্বায়ত্তশাসন চান না। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্ত জনগণের জন্যও স্বায়ত্তশাসন চান। তাই তিনি চান, তিনি ক্ষমতায় গেলে ৬ দফা শুধু পূর্ব পাকিস্তানেই বাস্তবায়িত হবে না, পশ্চিম পাকিস্তানের সব ক’টি প্রদেশেও ৬ দফা বাস্তবায়িত হবে। সুতরাং ধরে নেয়া যায় যে, শেখ মুজিব যদি ক্ষমতায় যেতেন তাহলে পাকিস্তানের ৫টি প্রদেশেই ৬ দফা বাস্তবায়িত হতো। তাহলে ড. নুরুল ইসলামের মন্তব্য অনুযায়ী পাকিস্তানের অবস্থা কি দাঁড়াতো, সেটি আপনারা বিবেচনা করুন। তাই যারা বলেন যে, শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি তার অনেক বড় ভুল করছেন।
প্রশ্ন ওঠে যে, শেখ মুজিব ৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি কেন? এ সম্পর্কে ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণের মধ্য থেকে দাবি ওঠে- ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হোক। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, জনসভাকে কেন্দ্র করে সামরিক শক্তি বাড়ানো হচ্ছে, ঢাকার উঁচু বিল্ডিংগুলোর উপর মেশিনগান ফিট করা হয়েছে। পশ্চিমাদের গণহত্যার পরিকল্পনা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। এ কারণেই সেদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি বঙ্গবন্ধু।
ড. কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু কৌশলী সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বললেন, আমরা পুরো বিষয়টি এমনভাবে তুলে ধরবো যে, জনগণ বুঝতে পারবে আমাদের দাবি কি? আমাদের লক্ষ্য কি? মানুষকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করবো। ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা না করে বঙ্গবন্ধুর সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে মনে করেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, তা না হলে সামরিক শাসকরা জনসভায় গুলি চালাতো। কামাল হোসেনের ভাষায় ঐ জনসভায় শেখ মুজিব আরো ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো। তবুও এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।” একথার মধ্যেই সবকিছু আছে। এখানে আলাদাভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কোনো দরকার নেই। এর মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা ছিল না।
Email: journalist15@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন