মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ভুয়া সনদে ৪ শিক্ষকের ২৪ বছর চাকরি

আমতলীর এমইউ বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়

আমতলী (বরগুনা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বরগুনার আমতলী উপজেলার একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমইউ বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভুয়া সনদ দিয়ে ৪ শিক্ষক ২৪ বছর ধরে চাকরি করে সরকারের প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক জনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের পাসওয়ার্ড গোপন ও লাম্পট্যের অভিযোগও রয়েছে।

আমতলী এমইউ বালিকা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল ট্রেড শাখায় ৪ শিক্ষক জাল সনদে ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সাল থেকে দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর ধরে চাকরি করছেন। এরা হলেন (১) মো. রেজাউল করিম বাদল, ইনডেক্স নং ৮০০৬৪৫ (২) দিলীপ কুমার রায়, ইনডেক্স নং ৮০০৫৬৩, এ দু’জন ১৯৯৮ সাল থেকে ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন ট্রেডের ইনস্ট্রাক্টর। (৩) মো. শাহাবুদ্দিন খান, ইনডেক্স নং ৮০০৫৬১ ও (৪) হোসনে আরা বেগম, ইনডেক্স নং ৮০০৫৬২, তারা ১৯৯৬ সাল থেকে ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডের ইনস্ট্রাক্টর।

লিখিত অভিযোগে অভিভাবক মোতাহার, বশির উদ্দিন ও হুমায়ুন আজাদ জানান, ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালে ওই ৪ শিক্ষকের নিয়োগে নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়নি এবং অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের সনদ ব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তারা নিয়োগ বাগিয়ে নিয়েছিলেন। মো. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিযোগ হচ্ছে লাম্পট্যের। তার লাম্পট্যের প্রতিবাদে একাধিকবার অভিযোগপত্র আমতলী শহরে পোস্টারিং, সংশ্লিষ্ট উচ্চ দপ্তরগুলোতে অভিযোগও দেয়া হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ বিদ্যালয়ের পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত। অভিযুক্ত শিক্ষক মো. রেজাউল করিম বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার পাসওয়ার্ড গোপন করে নিজের মন মতো তা ব্যবহার করছেন। এর ফলে ভোকেশনাল শাখার অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্রীরা তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ভোকেশনাল শাখার ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন ট্রেড, ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেড ও জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্স ট্রেড-এই ৩টি ট্রেডের মধ্যে ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডে ছাত্রীদের ভর্তি হওয়ার আগ্রহ বা ঝোঁক অনেক বেশি। কিন্তু লাম্পট্যের অভিযোগ থাকা সত্তে¡ও বø্যাকমেইলিং-এর শিকার হয়ে রেজাউল করিমের ট্রেডে ছাত্রীরা ভর্তি হতে বাধ্য হয়। কারণ তার কাছে পাসওয়ার্ড থাকায় প্রেকটিক্যাল মার্কগুলো ছাত্রীদেরকে মন মতো প্রদান করার ক্ষমতা তিনি রাখেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, তিনি ঢাকা পিপলস ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নাইট শিফটের ৩ বছর মেয়াদি কোর্সের সনদ জমা দিয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষক দিলীপ কুমার রায় এ ব্যাপারে কোন উত্তর দিতে পারেননি। অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল করিম ও হোসনে আরা বেগমের কাছে একাধিকবার কল দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। বিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যালয়ে রক্ষিত ওই শিক্ষকদের ব্যক্তিগত তথ্যের ফাইলগুলো কে বা কারা সুকৌশলে বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে ফেলেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম কবির জানান, প্রধান শিক্ষক পদের দ্ব›েদ্বর জেরে বিদ্যালয়ের আলমারির তালা ভেঙে কাগজপত্র সরিয়ে ফেলার কারণে ওই শিক্ষকদের নিয়োগকালীন কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। ভুয়া সনদ দিয়ে ৪ শিক্ষক ২২-২৪ বছর চাকরি করে সরকারের প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার আমিনুল ইসলাম জানান, এই বিষয়গুলি স্কুল পরিচালনা কমিটি দেখবেন। তিনি লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন। বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাহাদাৎ হোসেন জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগকালীন দেয়া ট্রেডের সনদগুলি তলব করা হবে।
যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। ভুয়া প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন