ইটভাটায় বিনিয়োগে ব্যাংকের চেয়ে উচ্চহারে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। এভাবে জনসাধারণের কাছ থেকে শতকোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যান তিনি। তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় ১১০টি মামলার ওয়ারেন্ট জারি হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও এই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এই প্রতারকের নাম ইব্রাহিম আলী (৪২)। গ্রেফতার এড়াতে তিনি শ্রমিকবেশে কক্সবাজারে আত্মগোপনে ছিলেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে একটি সিম একবারের বেশি ব্যবহার করতেন না ইব্রাহিম। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত মঙ্গলবার কক্সবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
কামরুজ্জামান বলেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম ২০১৪-১৫ সাল থেকে প্রতারণা শুরু করেন। সে সাধারণত তিনভাবে প্রতারণা করে জনসাধারণের কাছ থেকে প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
প্রথমত, বিভিন্ন ইটভাটায় বিনিয়োগে বিপুল পরিমাণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। দ্বিতীয়ত, অফ সিজনে কমদামে ইট সরবরাহের কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতেন এবং তৃতীয়ত, অধিক সুদের বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতেন এই প্রতারক।
এক্ষেত্রে তিনি ব্যাংকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি সুদ দেওয়ার কথা বলতেন এবং কয়েকজনকে ডেকে সুদের টাকা দিয়ে সহজেই মানুষের বিশ্বস্ততা অর্জন করেছেন। একপর্যায়ে প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান প্রতারক ইব্রাহিম।
এসএসপি কামরুজ্জামান বলেন, রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় ও আদালতে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ১০৯টি মামলা দায়েরের তথ্য পেয়েছি। সবকটি মামলাতেই ওয়ারেন্টভুক্ত প্রধান আসামি ইব্রাহিম। এছাড়া, ঢাকার লালবাগে প্রায় আট কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে শহীদুল ইসলাম নামে একজন ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন।
প্রতারক ইব্রাহিমকে দীর্ঘদিন ধরেই খোজ করার কথা জানিয়ে সিআইডির এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার এড়াতে তিনি তার মোবাইলে একটি সিম একবারের বেশি ব্যবহার করতেন না। তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সহায়তায় অবশেষে কক্সবাজারে তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। কিন্তু সেখানে তিনি শ্রমিকবেশে অবস্থান করছিলেন। অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত এলাকা থেকে শ্রমিকদের মাঝখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এসএসপি কামরুজ্জামান আরও বলেন, প্রতারণার টাকা দিয়ে তিনি কয়েকটা ট্রাক, কিছু দোকান ও জমি কেনেন এবং ভাড়ায় গার্মেন্টস চালু করেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তার সব ট্রাক ও ব্যবসা শ্বশুর, শ্যালক এবং এক ভগ্নিপতি দেখাশোনা করতেন। তাদের তিনজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা গেলেও ইব্রাহিম ছিলেন পলাতক। আজ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন