ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিদ্যমান অস্থিরতায় যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ভাড়াটে বাহিনী’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এ কাজে দেশটিকে ব্যবহার করছেন সউদী-আমিরাতি দুই যুবরাজ, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সদ্য বিদায়ী যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুই যুবরাজ, নেতানিয়াহু এবং জন বোল্টনকে বি-টিম হিসেবে আখ্যায়িত করেন ইরানি মন্ত্রী। তিনি বলেন, বি-টিম মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সহজে বশ করা যায়। ফলে তাকে মিথ্যা প্ররোচনা দিয়ে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে।
ইরানি মন্ত্রী বলেন, এই প্ররোচনা বা উসকানি সত্তে¡ও ট্রাম্প তেহরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াবেন বলে তিনি মনে করেন না। এদিকে সউদী তেল স্থাপনায় হামলার ঘটনায় ইরানের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হলে দেশটিকে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রিয়াদ। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সউদী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
আদেল আল জুবায়ের বলেন, সউদী তেলক্ষেত্রে হামলা ইয়েমেন থেকে চালানো হয়নি, এটি আমরা নিশ্চিত। উত্তর দিক থেকেই হামলা হয়েছে। তদন্তেই এর প্রমাণ বেরিয়ে আসবে।
সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হলে ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে সম্পর্কে অবশ্য কিছু বলতে রাজি হননি সউদী প্রতিমন্ত্রী। তবে তিনি বলেছেন, দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে’ রিয়াদ ইতোমধ্যেই তার মিত্রদের সঙ্গে কথা বলেছে।
অন্যদিকে নিরাপত্তা জোরদারে সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরও সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন জানিয়েছে, নিরাপত্তা জোরদারে সউদী-আমিরাতে বাড়তি সেনাসদস্য এবং সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করা হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার জানিয়েছেন, সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই দেশ দুইটিকে সহায়তার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের দখল নেওয়া হবে তার দেশের জন্য খুবই সহজ সিদ্ধান্ত।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের রয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। আমি আগেও বলেছি, ইরানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা হবে খুবই সহজ একটি সিদ্ধান্ত। এটা হবে খুবই সহজ, সবচেয়ে সহজ বিষয়।’
২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সউদী আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর দুটি বৃহৎ তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালানো হয়। ওই হামলার পর সউদী আরবের তেল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী হুথি বিদ্রোহীরা এ হামলার দায় স্বীকার করলেও এ ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র ও সউদী আরব। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে হামলার নেপথ্যে ইরান জড়িত রয়েছে বলে দাবি করা হয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তেহরান। এ নিয়ে তেহরানের সঙ্গে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয় ওয়াশিংটন। এর মধ্যেই ২০ সেপ্টেম্বর ইরান দখলকে খুবই সহজ সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করলেন ট্রাম্প। এদিন ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের প্রয়োগের অংশ হিসেবে দেশটির ন্যাশনাল ব্যাংকের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। একইদিন সউদী-আমিরাতে আরও সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় পেন্টাগন। পরদিন শনিবার তেহরানকে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় রিয়াদ। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ভাড়াটে বাহিনী’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সূত্র: পার্স টুডে, আল জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন