বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

বিনিয়োগের পূর্বশর্ত আইনের শাসন

প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ড. শেখ সালাহ্উদ্দিন আহ্মেদ

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আইনের শাসনের গুরুত্বকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রথমেই দেখতে চায় সংশ্লিষ্ট দেশে আইনের শাসন কী রকম। তারা যে টাকা বিনিয়োগ করবেন তা তুলে নেয়ার নিশ্চয়তা আছে কিনা। সংশ্লিষ্ট দেশে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় কিনা। তারা যদি কোনো মামলায় পড়েন তবে তাদের টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকবে কিনা।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সমিতির ছয়বারের সভাপতি শামসুল হক চৌধুরীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধান বিচারপতির দেয়া বক্তব্য তাৎপর্যের দাবিদার। বিনিয়োগ আকর্ষণের সব পূর্বশর্ত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কাক্সিক্ষতভাবে আসছে না আইনের শাসনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকার জন্য।
বাংলাদেশ ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ। অভ্যন্তরীণ বাজারও বিশাল। বাংলাদেশে সস্তা শ্রমের সংস্থান রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে কাম্য। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিদ্যুৎসহ জ্বালানি ক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতা অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। বিনিয়োগসংক্রান্ত আইন-কানুন দুনিয়ার অনেক দেশের চেয়ে উদার হওয়া সত্ত্বেও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জন্য বিদেশি বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত মাত্রায় আকর্ষিত হচ্ছে না। দেশি বিনিয়োগকারীরাও একই কারণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ না থাকায় দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে। সামাজিক ক্ষেত্রে অসহিষ্ণুতা সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি করছে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব বাড়ার ঘটনা।
বাংলাদেশের অবস্থান অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিধর দুই দেশ চীন ও ভারতের মাঝখানে। চীনে শ্রমের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরে আগ্রহী। কিন্তু আইনের শাসনের ক্ষেত্রে সংকট থাকায় এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার ভয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা একপা এগিয়ে দুইপা পিছিয়ে যাওয়ার সংশয়ে ভুগছেন। দেশের অর্থনীতিকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাওয়া এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ধরে রাখতে হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। এ জন্যই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হতে হবে।  রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটিয়ে সরকারকে নিতে হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
আইনের শাসন বলতে মূলত আমরা বুঝি আইন ভঙ্গ করা ছাড়া কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তা সাধারণ আদালতে প্রমাণ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে সবাই আইনের চোখে সমান। তৃতীয়ত, ব্যক্তি-অধিকার বিচারিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
দেশের মানুষ শান্তি চায়, সুশাসন প্রত্যাশা করে। অপরাধ কওে কোনো প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান ব্যক্তি পার পেয়ে যাকÑ এটা কারোরই কাম্য নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের মানুষ এটাই চায়। এর মাধ্যমে নীরবে গোটা সমাজে স্বস্তিবোধ ফিরে আসে। সরকারের প্রতিও মানুষের আস্থা বাড়ে।
আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, এখানে ছাড় দেয়া কিংবা বিরাগবশত চরম পদক্ষেপ নেয়াÑ দুটোরই কোনো সুযোগ নেই। যে যতখানি অন্যায় করবে তার সাজা আইনসম্মতভাবে ততটুকুই নির্ধারিত। সব অপরাধীকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
বর্তমান সরকারের মেয়াদকালকে আইনের শাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার সুবর্ণকাল হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। সরকার সব হত্যাকা-কে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। আইন ও বিচার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণ এখন আস্থাশীল। সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় ও কার্যকর থাকা জরুরি, সেগুলো বর্তমানে তাৎপর্যপূর্ণভাবে কর্মক্ষম। এর ফলে অন্যায় ও অপকর্ম করে পার পাওয়া যাচ্ছে না, অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে, সাধারণ মানুষ বিচার পাচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি  থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে। এতে সমাজে অপরাধ হ্রাসের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশের মর্যাদা যে বাড়ছে, তাতে কোনো সংশয় নেই।
দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে প্রকৃত বিচার পাওয়া যাবে না। তাই বলছি বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেলে জনগণের যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকবে না।
ষ লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন