তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা
রাজশাহীর তানোরের কালীগঞ্জহাট ডিগ্রি কলেজে প্রায় ৬টি বিষয়ের শিক্ষকের কোনো শিক্ষার্থী নেই। দীর্ঘদিন ধরে এসব বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও শিক্ষকরা যথারীতি বেতন-ভাতার টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছেন। জানা গেছে, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের আর্থিক সহায়তা বা এমপিওর প্রায় ২০ ভাগ নানাভাবে লুটপাট হচ্ছে। অংকের হিসেবে লোপাট হওয়া এসব অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা। এসব তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রের। বিগত ২০১০ সালে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক বিবেচনায় ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গড়ে ওঠা অপ্রয়োজনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও সচেতন মহলের অভিমত রাজনৈতিক বিবেচনায় কালীগঞ্জহাট কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরেজমিন তদন্ত করলেই এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে কালীগঞ্জহাট ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা ও ১৯৯৯ সালে এমপিওভুক্তকরণ এবং ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে কলেজটি ডিগ্রি কলেজে উন্নীত করা হয়। কিন্তু ডিগ্রি কলেজে উন্নীতকরণের পরপরই কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। সূত্র জানায়, কলেজে সর্বসাকূল্য শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ৬২ জন, এ ছাড়াও তৃতীয় বিষয়ে আরো ১৪ শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালীগঞ্জহাট ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৫ জন, ডিগ্রির গণিত বিভাগে কোনো শিক্ষার্থী নেই শিক্ষক সৈকত রেজা, দর্শন বিভাগে শিক্ষার্থী নেই শিক্ষক জোবাইদা, অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষার্থী নেই শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা, পরিসংখ্যান বিভাগে শিক্ষার্থী নেই শিক্ষক হারুন অর রশিদ, এইচএসসি শাখায় পরিসংখ্যান শিক্ষার্থী নেই শিক্ষক ফেরদৌস, আরবি বিভাগে শিক্ষার্থী নেই শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে শিক্ষক খলিলুর রহমান। অথচ শিক্ষার্থী না থাকলেও এসব শিক্ষক বসে বসে বেতন-ভাতা উত্তোলনের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারের অর্থ লোপাট করে চলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বিজ্ঞানাগারে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি না থাকায় হাতেকলমে শেখার কোনো সুযোগ নেই, কম্পিউটার শিক্ষক ও লাইব্রেরিয়ান থাকলেও এসব না থাকায় তারা এসব বিষয়ে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছেন না। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ‘সাময়িক বরখাস্ত’ আনিসুর রহমান বলেন, শিক্ষকরা যখন এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন তখন প্রতিটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে শিক্ষকদের দলাদলির কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে কমতে অনেক বিষয়ে শূন্যের কোঠায় ঠেকেছে। এ ব্যাপারে কলেজের ‘ভারপ্রাপ্ত’ অধ্যক্ষ সফিউজ্জামান বলেন, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তকরণের সময় প্রতিটি বিষয়ে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পরবর্তীতে যদি শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় শূন্যতার সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের করণীয় কিছু নেই। তিনি বলেন, কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থী না থাকলে সেই দায় তো তাদের নয়। এ ব্যাপারে রাজশাহীর অতিঃ জেলা প্রশাসক ‘শিক্ষা’ বলেন, একজন শিক্ষকের এমপিও অনুমোদনের জন্য কমপক্ষে প্রতি শিক্ষকের বিপরীতে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে বলে বিধান রয়েছে। কিন্তু কোনো বিষয়ে পাঁচজন বা তিনজন আবার কোনো বিষয়ে শিক্ষার্র্থী না থাকার পরও শিক্ষকরা কীভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন এটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এ ব্যাপারে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী না থাকার পরেও যেসব শিক্ষক বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন তাদের এমপিও স্থগিত করার সুপারিশ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন