নির্বাচন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই শুরু হয় হামলার ঘটনা
এম. হাসানুল হক উজ্জ্বল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে
সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিয়ানীবাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে সহিংসতা। নির্বাচন পরবির্ত এ সহিংসতায় আহত হচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পক্ষগুলোর হিংসা-প্রতিহিংসার কারণে যেকোনো সময় এলাকাগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকে। যদিও নির্বাচনের দিন বিয়ানীবাজারের ১০ ইউনিয়নের কোথাও কোনো সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই শুরু হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা। এমনকি গুপ্তভাবে হামলা চালানো হচ্ছে অনেকের ওপর। আর এতে করে বৃদ্ধি পাচ্ছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা। ওসি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রস্তুত রয়েছে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ। জানা যায়, শেষ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ৪ জুন শনিবার। নির্বাচনের দিন ভোট চলাকালীন সময়ে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ অথবা হামলা পাল্টা-হামলার ঘটনা না ঘটলেও নির্বাচন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই শুরু হয় হামলার ঘটনা। আর এর সূত্রপাত শুরু হয় মুল্লাপুর ইউনিয়ন থেকে। ওইদিন সন্ধ্যার পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের পুত্র নাবিল গোডাউন বাজারে আকস্মিক হামলা করে এবং কুপিয়ে আহত করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থক পাতন গ্রামের বাসিন্দা ময়নুল ইসলামকে। এ সময় স্থানীয়রা তাকে ধাওয়া দিলে সে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং আহত ময়নুলকে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরদিন রোববার সন্ধ্যায় বিয়ানীবাজার পৌরশহরের উত্তরবাজারে দুবৃর্ত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন ৪নং শেওলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম তাজুল। গুরুতর অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তবে কেবা কারা তাজুলের ওপর হামলা করেছে তা জানা না গেলেও তাজুল দাবি করেছেন, নির্বাচনের রেশ ধরে তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। একইদিন রাতে ৫নং কুড়ারবাজার ইউনিয়নের ৬নং ওয়র্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী তালা প্রতীকের আলী আহমদ ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থীর আলী নুরের সমর্থকদের মধ্যে স্থানীয় বৈরাগীবাজারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপক্ষ আরেকপক্ষের ওপর ইটপাটকেল দিয়ে হামলা চালায়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনার পরদিন সোমবার রাতে নিজ গাড়িতে করে বাড়ি যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন ১০নং মুড়িয়া ইউনিয়নের ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম বেবি। দুর্বৃত্তদের হামলায় তাঁর মাইক্রোবাসটি একটি গাছের সাথে ধাক্কা লাগলে সে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এসময় পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তবে এই ঘটনায় বেবি ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে দাবি করলেও পুলিশ জানায়, গাছের সাথে গাড়ির ধাক্কা লাগায় গাড়ির গ্লাসের আঘাতে বেবি মাথায় আঘাত পান। গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনের রেশ ধরেই বেবির ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিন দুপুরে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ১০ নং মুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের ভাগিনা শিবির কর্মী জালাল আহমদ ও মিছবাহ উদ্দিনের ওপর হামলা করে একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ, রাফি, কাওছারসহ আরো অনেকে। হামলায় আহতরা জানায়, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবুল খায়েরের পক্ষে প্রচারণা চালানোয় তাদের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তারা উভয়েই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৯নং মুল্লাপুর ইউনিয়নের গোডাউন বাজারে ৫নং ওয়ার্ডের মোরগ প্রতীকের মেম্বার পদপ্রার্থী অলিউর রহমান ও টেবিলফ্যান প্রতীকের প্রার্থী সেলিম উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয় গ্রুপের দু’জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, লুৎফুর রহমান ও আবুল কাশেম। আহতাবস্থায় উভয়কে স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে সেখান থেকে তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবের আহমদ জানান, ইউনিয়নগুলোর পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশ সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন