পদ্মা নদীর ভাঙন আতঙ্কে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ডের ৫ গ্রাম।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মার ডানতীর রক্ষাবাঁধের তারাবুনিয়া অংশে স্টেশন বাজার, শাহাবুদ্দি মোল্যার কান্দি, এম এ ঢালী কান্দি, কাননগো সাহেবের কান্দি, টুকু বেপারীর কান্দি এলাকায় মন্থর গতিতে ভাঙন চলছে। ভাঙনের তীব্রতা প্রকট আকার ধারণ না করলেও আতঙ্কে রয়েছে এই দুই ওয়ার্ডের প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার। এর মধ্যে টুকু বেপারী কান্দি গ্রামের ইসমাইল বেপারী তার বাড়ি-ঘর অন্যত্র নেয়া শুরু করেছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে ছুরির চর হাবিবুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
তারাবুনিয়া ইউনিয়ন ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য মোসলেম বেপারী জানান, পদ্মার ভাঙনে ইতিমধ্যে তিনি ২ বার বাড়ি বদল করছেন। নিজের সহায় সম্বল যেটুকু ছিল তার উপরে ঘর করে বসবাস করছিলেন তারা। এবার বাঁধ দেওয়ার কারণে আশায় বুক বেঁধেছিলেন হয়তো নদী আর ভাঙবে না। কিন্তু পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে নদীর বাঁধ এলাকাই ভাঙন দেখা দিয়েছে। তার নিজের বাড়ি বর্তমানে ভাঙনের ৩শ’ গজের মধ্যে রয়েছে। তার ভাই ইসমাইল বেপারী বাড়ি-ঘর সরিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
ছুরিরচর বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক জানান, জানান গত বছর তার বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলা পাকা ভবনসহ সকল জমিজমা পদ্মা নদীর তলে হারিয়ে গেছে। সেখান থেকে তারা অনেকটা দূরে এসে নতুন স্কুল গড়লেও নদী ভাঙার কারণে তার ছাত্র-ছাত্রীরা কোথায় চলে গেছেন নিজেও জানেন না। গত বছরের ভাঙনে ছুরিরচর বকাউল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বকাউল কান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ভাঙনের শিকার ছুনু খলিফা স্ত্রী হাজেরা খাতুন জানান, এ পর্যন্ত ভাঙনের কারণে আমরা তিনবার বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিয়েছি। আমাদের ভিটা-মাটি সব যাওয়ার পর এখন টুকু বেপারীর ভাড়া জমিতে ঘর করেছিলাম। এ বছর আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। যেকোন সময় আমাদেরকে এখান থেকেও চলে যেতে হবে।
উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী ইউনুস সরকার বলেন, পদ্মার ভাঙনে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সর্ববৃহত ইউনিয়নটি দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। গত বছর ভাঙনে বিলিন হয়েছে তারাবুনিয়া স্টেশন বাজার, ছুরিরচর বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এস ডি এস আশ্রয় কেন্দ্র সহ উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নে ২, ৩, ৪ ও ৭ নং ওয়ার্ডের আরো ২/৩শ পরিবার। এবছর ভাঙন আতঙ্কে আছে নতুন স্টেশন বাজার, শাহাবুদ্দি মোল্যার কান্দি, এমএ ঢালী কান্দি, কাননগো সাহেবের কান্দি, টুকু বেপারীর কান্দি। এ ব্যাপারে আমি ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম সাহেবকে অবহিত করেছি। উপমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই তারাবুনিয়ায় নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ দেওয়ানকান্দি এলাকায় আশ্রয় নেয়া জনগনের জন্য পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী পাঠিয়েছেন। এ এলাকায় আশ্রয় নেয়া ঝড়েপড়া শিশুদের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, নদীর গতি প্রকৃতি বিচিত্র। আমাদের নির্মিত বাঁধ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা তা মেরামত করার কাজও অব্যাহত রেখেছি। এই ভাঙনে আতংকিত হওয়ার মত অবস্থা এখনো সৃষ্টি হয়নি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ বলেন, পদ্মায় তারাবুনিয়া এলাকায় যে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে তা এখনো তীব্র আকার ধারণ করেনি। তারপরেও এখানকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গত বছরের মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এ এলাকার জনগন বিরাট ক্ষতির সম্মুখিন হবে। সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর নির্দেশে সুরেশ্বর থেকে তারাবুনিয়া পর্যন্ত নদীর ডানতীর রক্ষা কার্যক্রমের ফলে নদী ভাঙন কমে এসেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন