শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অবৈধ যানের বেপরোয়া চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া

কুমিল্লা-মিরপুর ভায়া বুড়িচং সড়ক

প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আলমগীর হোসেন, বুড়িচং (কুমিল্লা) থেকে
কুমিল্লা-মিরপুর ভায়া বুড়িচং সড়কে সিএনজির বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনার সংখ্যা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি মহাসড়কের থ্রি হুইলার তথা সিএনজি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদর থেকে শুরু করে  গ্রামীণ সংযোগ সড়কের বিভিন্ন রাস্তায় ও সিএনজি চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাক এটা সকলের কাম্য হলেও সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে যে জিনিসটি ভাবিয়ে তুলছে তা হলোÑ দক্ষ ও ড্রাইভিং লাইসেন্সওয়ালা চালকের ব্যাপক অভাব। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত ২০১৫ সনে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া মিরপুর সড়কে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার ৫ হাজার সিএনজি চলাচলা করত। মহাসড়কে সিএনজি চলাচল নিষেধ করায় যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার। আর এসমস্ত চালকরা কোনোরূপ প্রশিক্ষণ ছাড়াই তাদের সমবয়সী কোনো চালকের সাথে নামকাওয়াস্তে সিএনজি চলাবস্থায় কয়েকদিন সাথে থেকে ড্রাইভিং সম্বন্ধে কোনো রকমে হালকা একটু ধারণা লাভ করেই ড্রাইভার তথা চালক বনে চলে যায়। এধরনের হালকা অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিদিন চলার পথে তাদের গাড়িতে ওঠা যাত্রী সাধারণ কিংবা চলাচলরত পথচারীকে আহত কিংবা নিহত করেই ওই সমস্ত চালকদের শিক্ষার ভিত মজবুত হওয়ার পন্থা বেছে নিয়েছে। যা সঠিক নয়। এছাড়া, প্রতি বৃহস্পতিবার কুমিল্লা থেকে বুড়িচং ও মিরপুরগামী যাত্রীদের কাছ থেকে ২৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা ও ৪০ টাকার ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে ছাড়ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। এদিকে, মাঝে মাঝে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই সমস্ত সিএনজি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দিলেও পরবর্তীতে তার আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। বছরে দু’একবার এ ধরনের জরিমানা দিয়ে পাড় পেয়ে যাওয়া চালকরা কিছুই মনে করেন না। আসল কথা হলোÑ জীবনে চলার পথ তত সহজ নয়, যত সহজ আমাদের সিএনজি চালকরা মনে করে থাকেন। বেশিরভাগ চালকরা চলার শুরু করলে কোনো রকমে আর তাদের ক্লাস ধরে গাড়িকে স্লো করতে চান না। ফলে তাদের সিএনজিটি অন্য একটি সিএনজির সাথে ধাক্কা খেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৩ চাকা বিধায় তারা বেঁচে যান। তারা একবারও বুঝতে চেষ্টা করেন না যে চলার পথে মাঝে মাঝে তাদের গতিকে কমাতে হয়, কিংবা মোড় বা চৌরাস্তায় এলে গাড়ির গতি কমিয়ে এদিক, ওদিক দেখে কিংবা ইনডিকেটরের মাধ্যমে গাড়ি চালাতে হয় তাও মানতে নারাজ। কিংবা  গাড়ির গতি যত বেশি ক্ষতি তত বেশি এটা ও তাদের বোঝানো যাচ্ছে না, অনেকে সিগন্যাল কি এটাও বুঝতে চাচ্ছেন না। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে প্রতিদিন শত শত লোক ওই সমস্ত আনাড়ি অল্পবয়সের চালকদের ফলে আহত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ স্পট ডেথের পাশাপাশি গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারাও যাচ্ছেন। এ নিয়ে অচিরেই বিভিন্ন সিএনজি অটোরিকশা মালিকদের মাধ্যমে ওই সমস্ত আনাড়ি চালকদের ডেকে সভা-সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন অবিহিতকরণ সভা করে চালকদেরকে ড্রাইভিং সম্বন্ধে সম্যক ধারণা প্রদান এবং যথাযথ পুক্ত না হয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল করা থেকে বিরত থাকার জন্য তাদেরকে বোঝানো দরকার। পাশাপাশি তাও বোঝানো দরকার  যে, ‘একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কাঁন্না’ কিংবা ‘বাস্তব বড় কঠিন’ উক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্লেøাগানসমূহ শুধু সিএনজি বা অটোরিকশার পেছনে লিখে রাখলে চলবে না। সারা জীবনের কাঁন্নার শিকার কোনো পরিবার বা ব্যক্তিকে যাতে না হতে হয় সে লক্ষ্যে আগে থেকেই অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি প্রাহ্যতিক জীবনে এর যথাযথ প্রয়োগে আমাদেরকে এগিয়ে আসা দরকার এবং নিজেকে একজন দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দরকার। বুড়িচংয়ে অদক্ষ ড্রাইভারদের ফলে অহরহ দুর্ঘটনা হচ্ছে, প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা অটোরিকশা অটোবাইক সিএনজি চালক সমবায় সমিতি (রেজি: নং ২০১)-এর সভাপতি মো. শহীদুল্লাহর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান- সড়কে বেপরোয়াভাবে যানচলাচল ঠিক নয়। ড্রাইভারদের আরো দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রতি সপ্তাহে বা ১৫ দিনে একটি সভা করে যাচ্ছি। আগামী জুনে ড্রাইভারদের আরো সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে আমরা বড় একটি সভার আয়োজন করব। এছাড়া, কুমিল্লা-মিরপুর ভায়া বুড়িচং সড়কে অদক্ষ ড্রাইভারের ফলে সিএনজির বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে উক্ত বিষয়ে প্রতিকার প্রাপ্তির ব্যাপারে কুমিল্লা সিএনজি অটোরিকশা অটোবাইক মালিক সমবায় সমিতির উপদেষ্টাদ্বয়  তরুণ সমাজসেবক মো. বিল্লাল হোসেন ঠিকাদার ও অপরজন মেসার্স মাহিন ইলেক্ট্রনিক্সের স্বত্ব¡াধিকারী মো. মাহাবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তারা উক্ত প্রতিবেদককে জানান, সড়কে বেপরোয়াভাবে যান চলাচল ঠিক নয়। যথাযথ নিয়মে যাতে যানবাহন চলাচল করতে পারে সে লক্ষ্যে সকল ড্রাইভারদের আরো সচেতন করে তোলা এবং একটি দুর্ঘটনার ভয়াবহতা সম্বন্ধে জ্ঞানার্জনের জন্য আমরা অচিরেই তাদেরকে নিয়ে একটি সভা করব এবং তাদেরকে যথাযথ নিয়মে যানচলাচল করার ব্যাপারে আরো সচেতন করে তুলব। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সঠিক ড্রাইভিং লাইসেন্সওয়ালা ড্রাইভার ব্যতীত অন্য কাউকে সড়কে গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো শক্ত ভূমিকা রাখা দরকার বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও যাত্রী সাধারণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন