শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ক্ষোভে উত্তাল ছাত্রসমাজ

৩৬ ঘণ্টা পর ভিসি ক্যাম্পাসে এসে তোপের মুখে

নুর হোসেন ইমন | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৩৫ এএম

আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিনভর স্লোগানে স্লোগানে ছিল উত্তাল -ইনকিলাব


বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরাচরিত ক্লাসে সুশৃঙ্খলিত চিত্র নেই; অন্যরকম দৃশ্য। বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ছেড়ে পথে নেমে এসেছেন। ছাত্র খুনের প্রতিবাদ, সন্ত্রাস এবং অপরাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের এই অবস্থান। দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই চিত্র। ছাত্রছাত্রী সবার মুখে এক আওয়াজ, ‘ক্যাম্পাসে রক্ত কেন, দ্রুত বিচার আইনে বিচার চাই’। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার হাতে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের খুনের পর এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

২০০২ সালের ৮ জুন বুয়েটের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নেমে এসেছিল রাস্তায়। ওই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদের কাঁপিয়ে তুলেছিল দেশের মাটি। ১৭ বছর পর বুয়েটের একই পৈশাচিক কায়দায় নৃশংস এক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বুয়েটে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার হাতে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের খুনের প্রতিবাদ এবং দ্রুত বিচার আইনের খুনিদের বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাসগুলো। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস ছেড়ে নেমে এসেছে পথে। সবার মুখে এক আওয়াজ হত্যাকান্ডের বিচার চাই। বুয়েট ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, বরিশাল, কুমিল্লা, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একই চিত্র। সবখানেই মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন, ঘাতকদের দ্রুত বিচার আইনের বিচারের দাবি। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যখন পথে, তখন বুয়েটের ভিসির ৩৬ ঘণ্টা রহস্যজনক ‘লুকিয়ে থাকা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় অভিযুক্তদের গতকাল আদালতে হাজির করা হয় -ইনকিলাববাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনে কার্যত: অচল হয়ে পড়েছে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ৮ দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করেছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। ভিসির কার্যালয়সহ প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার হাতে আবরার ফাহাদ হত্যার দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না বলে উল্লেখ করে প্রশাসনের জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পেশিশক্তির রাজনীতি বন্ধের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। এদিকে আবরার হত্যার বিচার ও ভারতের সাথে সকল অসম চুক্তি বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। ভারতের সাথে অসম চুক্তি বাতিলের দাবিতে আজ বুধবার ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে ছাত্র ফেডারশেন।

ছাত্রলীগের পেশিশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৮ দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে মঙ্গলবার সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বুয়েট শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শিক্ষার্থীদের দিনভর প্রতিবাদেই বিকাল ৫টার মধ্যে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করতে ভিসিকে সময় বেঁধে দেয়া হয়। আল্টিমেটামের সময় শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে বিকেল ৪টায় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে আবাসিক হলের প্রভোস্টদের সাথে বৈঠক করেন ভিসি প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম। এসময় বাইরে থেকে কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন বুয়েটের ভিসি। এ সময় আবরার হত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে নীতিগত সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা যে দাবিগুলো করেছো, আমি সেই দাবিগুলো মেনে নিয়েছি। আমি তোমাদের দাবির সঙ্গে নীতিগত সমর্থন জানাচ্ছি। আমি তোমাদের সঙ্গে আছি।’

শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যার ঘটনার পর তিনি কেন ক্যাম্পাসে আসেননি প্রশ্ন করলে ভিসি বলেন, আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম। এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে সেøাগান দিতে শুরু করেন। পরে ভিসি তার কার্যালয়ে অবস্থান নিলে সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগ এবং ভিন্নমত থামানোসহ নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা, হত্যা মামলার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করা, এর আগের ঘটনাগুলোর বিচার করা, ১১ অক্টোবরের মধ্যে শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করা এবং ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা।

অতীতের বিচারহীনতাকে দায়ী করলেন বুয়েট শিক্ষক সমিতি
শিক্ষার্থীদের ৭ দফা কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বুয়েটের শিক্ষক সমিতি। দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নিয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি একেএম মাসুদ হত্যার জোড়ালো দাবি জানিয়ে বলেন, ‘বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দরকার। অতীতে যেসব বেআইনি ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর কোনো বিচার হয়নি। তারই খেসারত হিসেবে আজকের এই হত্যাকান্ড। আগের ঘটনার ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না। শিক্ষক সমিতির সদস্যরা গতকাল ভিসির সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেছিলেন ব্যবস্থা নেবেন। তারপর আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষক সমিতি ছাত্রদের এই আন্দোলনের সঙ্গে একমত। এটি যৌক্তিক বলে মনে করে।’ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই।’

শিক্ষাঙ্গনকে প্রকৃত মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান বানাতে ঢাবি শিক্ষক সমিতির আহ্বান
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। মঙ্গলবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি থেকে বলা হয়, জ্ঞানচর্চা এবং বিতরণই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ। মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং পরমতসহিষ্ণুতার পরিবেশ ব্যাহত হলে বিশ্ববিদ্যালয় তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। আবরারের এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং চিন্তা চেতনার পরিপন্থী। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাঙ্গনকে প্রকৃত মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত করা এবং শিক্ষাঙ্গনে সহিষ্ণু পরিবেশ সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার জন্য রাজনীতিবিদ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং নাগরিক সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি আবরার ফাহাদ এর হত্যাকারীদের দ্রæত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়।

অমিত সাহাকে নিয়ে ধোঁয়াশা
এদিকে শুরু থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাম আসলেও মামলার এজহার থেকে বাদ পড়ায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহাকে নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়া ২০১১ নাম্বার কক্ষে আগে থেকেই থাকতেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে মামলার এজহারে ১৯ জনকে আসামি করা হলেও কেন অমিত সাহকে বাদ দেয়া হলে তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে, অমিত সাহকে বাঁচাতে কাজ করছে পুলিশের কতিপয় পদস্থ কর্মকর্তারা। এদিকে ন্যায় বিচারের স্বার্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অমিত সাহের গ্রেফতার দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর আসিফ নজরুল। নিজের ফেসবুক পেজে দাবি তোলে তিনি বলেন, ‘অমিত-এর বিরুদ্ধে আবরার হত্যার অভিযোগ শুনছি প্রথম থেকে। যে রুমে আবরারকে খুন করা হয়েছে সেখানেই থাকতো সে। অথচ তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, ছাত্রলীগের বহিষ্কারের তালিকায়ও নেই সে। তাকে ন্যায়বিচারের স্বার্থে অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে।’

ঢাবিতে গায়েবানা জানাজা শেষে বিক্ষোভ
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাষ্কর্যের নিচে নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অংশ নেন। জানাজার পর ঢাবি ক্যাম্পাসে বের হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি টিএসসি থেকে পলাশি মোড় অতিক্রম করে। এ সময় বুয়েট থেকে আরেকটি মিছিল বের হয়। এসমময় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাবি, বুয়েট ও আশপাশের এলাকা। গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।

জানাজায় অংশ নিয়ে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা যদি জাগ্রত না থাকি তাহলে সেটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয়। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো যে, একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাহাদ হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি বুয়েট প্রশাসনের নিরবতার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও ব্যবস্থা নিতে হবে। এসময় সিসিটিভির ফুটেজ দিতে না চাওয়ায় এবং শিক্ষার্থীদের দমাতে পুলিশ আনায় শেরে-বাংলা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর জাফর ইকবালের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

দেশবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি জাবি শিক্ষার্থীদের
আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসি এবং বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে জাবির শহীদ মিনার হতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বেলা তিনটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দুটি ফটকে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন, ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী স্লোগান এবং বক্তৃতা করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় অবরোধ স্থল থেকে শুরু করে রাস্তার দুদিকে নবীনগর ও সাভার পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মিছিল শেষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার কোন রকম স্বার্থ ছাড়া দেশের পানি, গ্যাস, বন্দর ভারতকে দিয়ে দিয়েছে। এই একই কথা আবরার বলার কারণে সারারাত পিটিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আবরার যে কথা বলেছে সেটা শুধু তার কথা নয় বাংলাদেশের সকল মানুষের কথা। আমরা মনে করি এটা রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই আবরারকে হত্যা করা হয়েছে।

বিক্ষোভে দেশবিরোধী চুক্তি বাংলার জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সীমান্তে মানুষ হত্যা, সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, নদীর পানির অধিকার, গ্যাস রফতানিসহ সবকিছুর মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে এই সরকার। যারা স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে না, মানুষের অধিকার রক্ষা করতে পারবেনা তাদের আমরা শাসক হিসেবে মানবো না। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যে দেশবিরোধী চুক্তি আপনি করেছেন তার সমুচিত জবাব বাংলাদেশের জনগণ, ছাত্রসমাজ দেবে।’ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর নুরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে। পরে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা অবরোধ উঠিয়ে নেন।

ডুয়েটে মানববন্ধন:
আবরার হত্যার প্রতবাদে মানববন্ধন করেছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরে ডুয়েট ক্যাম্পসের সামনে ঢাকা-শিমুলতলী সড়কে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন করে তারা। ডুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রতিষ্ঠানের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি লেখাপড়া করার জন্য। বাবা-মায়ের কাছে লাশ হয়ে ফিরে যেতে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ হতে আসিনি, শিক্ষা নিয়ে দেশ গড়তে এসেছি।’

চবিতে শিক্ষার্থীর একক অবস্থান
একই দাবিতে ক্যাম্পাসে একক অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র খালিদ সাইফুল্লাহ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে অবস্থান নেন তিনি। অবস্থানের বিষয়ে খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘একজন ছাত্র হয়ে আরেক ছাত্রকে হত্যা করা কখনো কাম্য নয়। এর সুষ্ঠু এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে আমি অবস্থান নিয়েছি।, চবিতে একই দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার খবর পাওয়া গেছে।

নোয়াখালী ব্যুরো জানায়: বিচারের দাবিতে নোয়াখালীতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ তাতে বাধা ও লাঠিচার্জের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করছে তারা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করে। আধা ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন সেøাগান দেয়।

বরিশাল ব্যুরো জানায় : বরিশাল বিএম কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো পৃথক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। বিএম কলেজ ক্যাম্পাস মসজিদে আবরারের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বরিশাল টাউন হল প্রাঙ্গণে বাম ছাত্র সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বিক্ষোভ করে ছাত্র-ছাত্রীরা।

বগুড়া ব্যুরো জানায়: ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে দুপুরে বগুড়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধন থেকে বক্তারা বলেন, সরকার ভারতের সাথে বন্দর ও ফেনী নদীর পানি নিয়ে যে চুক্তি করেছে তা বাতিল করতে হবে। নইলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ সময় বক্তব্য দেন সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, যুব ইউনিয়ন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ খান পাপ্পু, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।

রাবি সংবাদদাতা জানান: শিক্ষার্থী আবরার হত্যার বিচার চেয়ে মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে রাস্তার দু’পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এদিকে অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

কুবি সংবাদদাতা জানান : আবরার ফাহাদকে হত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল দশটায় কুমিল্লা নগরীর টাউনহল থেকে মিছিল শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান : শিবগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়কে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিভিন্ন ফেস্টুন ও লেখনিসহ বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ থেকে আবরার হত্যাকে বাংলাদেশের মেধাবীছাত্রদের জন্য এক চরম শঙ্কার দাবি করে অনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে।

গফরগাঁও উপজেলা সংবাদদাতা জানান : গফরগাঁও প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন গফরগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আলিম আকন্দ নাঈম, ইসলামিয়া সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষার্থী রুপক মিয়া, আবিদ হাসান, জে এম মাদরাসার শিক্ষার্থী মুশফিক ইমাম মারুফ, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোনায়েদ হোসেন রিয়াদ, ঢাকায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী রাইয়ান রাকিব, রোস্তম আলী গোলন্দাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোস্তাকিম প্রমুখ। শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে সরকারের কাছে দ্রুত এই হত্যাকান্ডের জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচার দাবি করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Mohammed Idris ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
দেশটা একটা অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছে
Total Reply(0)
সোহাগ সরকার ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
ভাই চোখের পানি দরে রাখতে পারতেছি না।
Total Reply(0)
Md Moage ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
কস্ট লাগে একটাই যত আন্দোলনই হোক আর যত বিচারই হোক ছেলেটা আর ফিরে আসবে না, আল্লাহ ওকে জান্নাত নসিব করুক আমিন।
Total Reply(0)
Gulam ali Azmal ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
আমাদের হৃদয় খুব ভারাক্রান্ত। তরতাজা মেধাবী শিক্ষার্থীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মানতে পারছি না। ধিক্কার জানাই এই বিষাক্ত রাজনীতির।
Total Reply(0)
Saymon Sayam ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
আর কতোটা লাশ হলে কোন বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ উঠবে না ?
Total Reply(0)
Abdur Rauf Khan ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৪৩ এএম says : 0
সময় এসেছে প্রতিরোধ করার।তা না হলে এ দেশের ভবিষত অন্ধকার।ছাত্র সমাজ পচে যাচ্ছে।এ থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাচাতে হলে এখনি এর প্রতিরোধ করা দরকার।
Total Reply(0)
Abutanvir ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৪১ এএম says : 0
انا لله وانا اليه راجعون عظم الله اجركم ويرحم فقيدكم ويسكنه فسيح جنانه ويلهم الصبر والسلوان على ذويه
Total Reply(0)
Jonaid ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ৫:০০ এএম says : 0
We are very sad and upset. No language to express. One student he cant tell his opinion and where we are living. what terrible and tragic it is?
Total Reply(0)
mohammad Sirajullah ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৫৫ এএম says : 0
It is not the student issue it is a national issue. I would urge people from every walks of life to come forward to stop this. Only one solution is there that Political Parties can not have a student wing. EC should come forward and band all the political parties having a student wing and should not give them any party symbol at the election.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন