সখীপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা
শাল গজারি ক’পিচ বাগানের জন্য বিখ্যাত ছিল টাঙ্গাইলের সখীপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চল। গহীন অরণ্যে বাঘ, সিংহ, হরিণ, সাপ, বনমুরগি, বন গরু-মহিষ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল ছিল। কালের বিবর্তনে গহীন অরণ্য বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে এবং গড়ে উঠেছে মানুষের আবাসস্থল। এখন শাল গজারি ক’পিচ বাগান নেই বললেই চলে, সেই সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বর্তমানে দেওবাড়ি জঙ্গলে গেলে বন্যপ্রাণীর মধ্যে শুধু বানরের দেখা পাওয়া যায়। আজ থেকে ৩৫/৪০ বছর পূর্বে সখীপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণীর ভয়ে কেউ একা আসত না। বর্ষাকালে গৃহপালিত গরু-ছাগল নিয়ে দলবলসহ পাহাড়ি অঞ্চলে আশ্রয় নিত। এ সময় বাড়িতে সবাই চিন্তায় শঙ্কিত থাকত যারা পাহাড়ে গিয়েছে তারা বাঘের কবল থেকে ভালোভাবে আদৌ বাড়িতে ফিরে আসতে পারবে কিনা? বাঘিনী নিরাপদে প্রসবের জন্য কালিয়ান গ্রামের ঘাওগা চালা চলে যেত। এসব গহীন অরণ্য ও বাঘ-ভালুকের কথা ৮০/৯০ বছরের বৃদ্ধদের মুখেই শোনা যায়। শাল-গজারি কর্তন করার পর মোথা থেকে পুনরায় গাছ হয় কিন্তু গাছ কর্তন করার পর মোথা উপড়ে ফেলার কারণে শাল-গজারি ক’পিচ বাগানও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামাজিক বনায়ন ও বনবিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এবং জনসংখ্যার আধিক্যে ধীরে ধীরে গহীন অরণ্য মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বাঘ, ভালুক, সিংহসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। সখীপুর উপজেলার এক লাখ একর জমির মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার একর জমি বনবিভাগের। এর মধ্যে বনবিভাগের অধিকাংশ জমিই জবর-দখল হয়ে গেছে। বনবিভাগের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক কারণে বনবিভাগের জমি রক্ষা করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সখীপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণী ও গহীন অরণ্যেও স্মৃতির কথা শুধু বৃদ্ধদের কিাছেই শোনা যায়। এক সময় বয়োবৃদ্ধ লোকজন মারা গেলে স্মৃতিচারণ করার লোকও পাওয়া যাবে না। কালের বিবর্তনে গহীন অরণ্য ও বন্য প্রাণীর মতো এক সময় শাল-গজারি কপি’চ বাগানও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখন শুধু স্মৃতিচারণ ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। যেভাবে জবর-দখল ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে বনবিভাগ থাকবে কিনা এ নিয়ে আশংকা করছেন বিজ্ঞমহল। বনাঞ্চল রক্ষা করে ধরিত্রীকে মানুষের নিরাপদ আবাসস্থল করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞগণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন