শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

জয়পুরহাটে কৃষকের ঋণের টাকা হরিলুটের অভিযোগ

‘উৎকোচ কিংবা লুট-পাটের বিষয়টি ঠিক নয়’

প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু মূসা, জয়পুরহাট থেকে
জয়পুরহাট রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কৃষকের ঋণের টাকা নিয়ে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। জেলার কয়েকটি শাখার ঋণ গ্রহীতাদের সাথে কথা বলে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। জানা যায়, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক জয়পুরহাট জেলার বেশ কয়েকটি শাখার মাধ্যমে প্রান্তিক চাষিদের মাঝে কয়েক কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করার পর ওই ঋণের টাকা হত দরিদ্র কৃষকরা সময় মত পরিশোধ করতে না পারায়, পাওনা ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শাখার অধীনে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করেন। অর্থ ঋণ আদালতের নিয়ম অনুযায়ী কৃষকের নিকট ব্যাংকের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য বিজ্ঞ আদালত প্রথমত সমনজারি করেন। পরবর্তীতে পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এক পর্যায়ে জমি নিলামে উঠলে ঋণী কৃষক নিরুপায় হয়ে জমি জমার রক্ষার্থে পুনরায় বিভিন্ন মহাজন ও এনজিও থেকে ঋণ দেনা করে মামলার আইনজীবী খরচ, পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি বিলসহ সুদে-আসলে ঋণের সমূদয় টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হত দরিদ্র কৃষকের হার ভাঙা পরিশ্রম ও ঋণ দেনার মাধ্যমে পরিশোধ কৃত টাকা হরিলুট করছে ব্যাংকের এক শ্রেণির অর্থলোভী, অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী ও আইজিবীর মোহরাররা। কৃষকের পরিশোধ কৃত টাকার মধ্যে ব্যাংকের পাওনা মূল টাকা সুদে-মূলে সংশ্লিষ্ট কৃষকের হিসাবে জমা করা হলেও আইনজীবী খরচ ও পত্রিকার বিল বাবদ আদায়কৃত মোটা অঙ্কের টাকার কিছু অংশ ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা লুটপাট করছে। এদিকে পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্ব স্ব ব্যাংকের শাখায় পত্রিকার বিল জমা দেয়ার পর ওই বিলগুলো অনুমোদনের জন্য জোনাল অফিসে পাঠানো হয়। এমতাবস্থায় জোনাল ব্যবস্থাপক রফিকুল আলম চৌধুরী ও বর্তমান পত্রিকার বিল সংক্রান্ত শাখার কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার ডিএফপি রেট ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে নিজেরা মনগড়া নিয়ম ও আইন তৈরি করে তাদের খেয়াল খুশি মত বিল অনুমোদন করেন। এ জন্য যারা মাসোহারা দেয় তাদের বিল সহজেই অনুমোদন দেয়া হয় আর যারা দেয় না তাদের বিল মাসের পর মাস পড়ে থাকে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম কর্মী এম এ জলিল রানা, মোয়াজ্জেম হোসেন ও রাশেদ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, “কৃষি ব্যাংকের প্রতিটি বিজ্ঞপ্তির জন্য জোনাল অফিসের ০২ জন কর্মকর্তা এবং দু’এক জন আইনজীবী ও তাদের মোহরাদের জন্য মোটা অংকের মাসোহারা গুনতে হয়। এছাড়া পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিধিমোতাবেক ঋণ গ্রহীতার নিকট হতে পত্রিকা বিলের টাকা সমূদয় আদায় করা হলেওতা আংশিক প্রদান করে বাকিটা আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়া ওই কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী মাসোহারা দিলে পত্রিকার বিল সহজে অনুমোদন হয়, না দিলে  হয় না। ক্ষেতলাল থানার পাইক পাড়া গ্রামের মমতাজ উদ্দিনের স্ত্রী তাহেরা বেগম রাকাব ক্ষেতলাল শাখা থেকে কৃষি ঋণ নিয়ে ছিলেন ৯০ হাজার টাকা। এক পর্যায়ে সুদে আসলে ব্যাংকের মূল টাকা, বিধিমোতাবেক পত্রিকার বিল ও আইনজীবী খরচ বাবদ তাকে সর্বমোট পরিশোধ করতে হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে ব্যাংকের পাওনা জমা করা হলেও বিধি মোতাবেক পত্রিকার বিল নিলেও পত্রিকার বিল আংশিক প্রদান করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করে ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। একই অবস্থা দেখা গেছে সদর উপজেলার সবুজনগর এলাকার ঋণ গ্রহীতা মো. শহীদুলের ক্ষেত্রেও এছাড়াও আরো কয়েকটি শাখায় ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। অপর দিকে রাকাব জয়পুরহাটের কয়টি শাখার মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী প্যানেলে ৯ জন আইনজীবী থাকলে ও টুপাইচ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের পছন্দের দু/একজন আইনজীবীকেই মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। আবার এদের মধ্যে একজন আইনজীবী নিজেই পত্রিকার প্রতিনিধি সেজে অপ্রচলিত ও অখ্যাত কিছু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জমজমাট কমিশন বাণিজ্য করছে। এ ব্যাপারে রাকাবের প্যানেল আইনজীবী এপিপিগ কুল চন্দ্র মন্ডলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যারা তোষামোদ করেন এবং টু পাইচ প্রদান করেন তাদের কে মামলা ও আইনজীবী বিল ঠিক মত দেয়া হয় বাকি আইনজীবীরা কোন মামলা পান না। এ ব্যাপারে রাকাবের জয়পুহাট জোনাল ব্যবস্থাপক রফিকু আলম চৌধুরীর ও জয়পুরহাট জোনের বর্তমান ঋণ সংক্রান্ত শাখা কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, রাকাব হেড অফিসের নির্দেশ অনুযায়ী পত্রিকার বিল প্রদান করা হয়। তারা যেভাবে যে পরিমাণ বিল প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন সেই অনুযায়ী বিল নেয়া হয়। তবে উৎকোচ কিংবা লুট পাটের বিষয়টি ঠিক নয়। তা ছাড়া আমি এখন জয়পুরহাট থেকে অন্যত্র। এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি আওয়াল খান এবং পি আর ও কাজী সালাহ্ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত  বিজ্ঞপ্তির আকার কিংবা এর রেট ব্যাপারে  রাকাবের নিজস্ব কোন নীতি মালা নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আকার ও ডিএফপি রেট অনুযায়ী বিল প্রদান করতে হবে। যদি কেউ এ ধরনের অনিয়ম করে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন