শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

গঙ্গাচড়ায় মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কীম কার্যক্রমের সুবিধা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ

দরিদ্র প্রসূতিরা ঝুঁকিতে

প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনামুল হক মাজেদী, গংগাচড়া (রংপুর) থেকে
সরকারের মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কীমের কার্যক্রমের বেহাল দশা। রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের খামখেয়ালিপনার কারণে এমন দশা হয়েছে। সার্জন এবং এনেস্থেসিষ্ট থাকা সত্ত্বেও গত মে মাসে গঙ্গাচড়া হাসপাতালে সিজারিয়ান পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন মাত্র ১০ জন প্রসূতি। অথচ ভর্তি হয়েছে ২৪০ জন। অফিস চলাকালীন সময় সিজার করা যাবে না এমন এক নির্দেশনা এখানকার প্রশাসন চালু করায় বাধ্য হয়ে এ স্কীমের মায়েরা গঙ্গাচড়ার বাইরে বিভিনন ক্লিনিকে হাজার হাজার টাকা খরচ করে সিজার করাতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কীমের তালিকাভুক্ত ১ হাজার ১৩২ জন প্রসূতির প্রসব পূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণ অনিশ্চিয়তায় পড়েছে। এ স্কীমের আওতায় গঙ্গাচড়া উপজেলায় প্রতিমাসে ২৪০ জন গর্ভবতী মা কার্ডধারী হওয়ার কথা রয়েছে। এসব দরিদ্র গর্ভবতী মায়েরা রয়েছেন মৃত্যু ঝুঁকিতে। মাতৃ মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যে হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী হার বৃদ্ধিসহ নিরাপদ প্রসব ও গর্ভকালীন জটিলতার ব্যবস্থাপনা, ব্যাপক জনসচেতনা সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এভটিচার স্কীম গঙ্গাচড়ায় চালু করা হয়। এ স্কীমের আওতায় দরিদ্র দুঃস্থ গর্ভবতী মহিলাগণ তাদের গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সেবা পাওয়ার কথা। গরীব ও দুঃস্থ মহিলাদের গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণের চাহিদা বাড়িয়ে মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার এ ভাউচার স্কীম চালু করে। তালিকাভুক্ত কার্ডধারী দরিদ্র গর্ভবর্তী মায়েরা তিনবার প্রসবপূর্ব চেক আপ, নিরাপদ প্রসবসেবা, একবার প্রসব পরবর্তী সেবা এবং গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী জটিলতারা চিকিৎসা সেবা দেয়ার নিয়ম রয়েছে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। এজন্য একেকজন রোগীর জন্য চিকিৎসাসহ তাদের সহকারীদের সরকার প্রদত্ত নির্দিষ্ট ভাতা রয়েছে। এমনকি জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে উৎসাহ ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কার্যক্রম বলতে গেলে গঙ্গাচড়া হাসপাতালে এখন অনুপস্থিত। সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ২.৩০ টা পর্যন্ত রাখলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক পাওয়া যায়, কখনো পাওয়া যায় না। ফলে, কার্ডধারী গর্ভবতী মায়েরা এসব সেবা নিতে পারছেন না। ইতোপূর্বে এ সেবা কার্যক্রম গঙ্গাচড়া হাসপাতালে সুনামের সঙ্গে চলে আসছিল বলে গর্ভবতী মায়েদের মতামত। আর সিজার চলতো প্রতিমাসে কমপক্ষে ২০টি। যা এখন পৌঁছেছে শূন্যের কোঠায়। হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার জানান, ডিউটি টাইমের পরে সিজারসহ অন্য কোন সেবা দিতে তারা বাধ্য নন। ফলে সরকার প্রদত্ত মাতৃমৃত্যু কমানোর উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে সিজার করতে না পারলে সরকার প্রদত্ত আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না কার্ডধারী গর্ভবতী মায়েরা। গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের আরাজিনিয়ামত গ্রামের আতিকুর রহমানের স্ত্রী বিউটি বেগম জানান, তারা গরীব মানুষ, কার্ড করেছিলেন। সিজারের জন্য গঙ্গাচড়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে রংপুরের একটি ক্লিনিকে সিজার করাতে হয়েছে। সব নিয়ে অন্তত তার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কার্ডে এক টাকাও উপকার হয়নি। বর্তমানে গঙ্গাচড়া হাসপাতালে প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে কাগজ পত্রে বলে গর্ভবতী মায়েদের দাবি। ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিযোগ করেন, এখানকার ডাক্তারদের অবহেলার কারণে এক প্রসূতির অকাল মৃত্যু হয়েছে। স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সরকারের মাতৃমৃত্যু কমানোর প্রয়াসে চালু করা মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কীম কর্মসূচি ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম জানান, অজ্ঞান করা চিকিৎসক সংকটের কারণে একটি সমস্যা হচ্ছে। কার্ডধারী রোগীদের যথাযথ সেবা দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন