বনকক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় মাতামুহুরী নদী ও সাগর তীরবর্তী এলাকায় চোরাইকাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে অর্ধশত কার্গো, ফিশিং বোট ও নৌকা সাম্পান। এসব বোট তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্তত শতকোটি টাকার মূল্যবান কাঠ। এ দু’টি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে কোন ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে ২ শতাধিক স’ মিল।
চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ও পেকুয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে ২ শতাধিক অবৈধ স’ মিল। এসব স’ মিল থেকেই বোট নির্মাণের যাবতীয় কাঠ সরবরাহ দেয়া হয়। বিশেষত চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বারবাকিয়া ও চুনতি রেঞ্জের বরইতলী বিটের মূল্যবান গর্জন গাছগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে চোরাই বোট তৈরির কাজে। অনুরূপভাবে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের মেধাকচ্ছপিয়া বিটের শতবর্ষী মাদার ট্রি (গর্জন) গাছ গুলোর অর্ধেকই উজাড় হয়ে গেছে চোরাই বোট তৈরির কাজে। এলাকাবাসির অভিযোগ, ওই বিটের পূর্বের অপরাধ রেজিস্টার ও কর্তনকৃত গাছের গোড়ালিগুলো খতিয়ে দেখা হলে কি পরিমাণ মূল্যবান গাছ এসব বিট থেকে পাচার হয়েছে তা বেরিয়ে আসবে।
অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রাম বন সার্কেলের নিয়ন্ত্রাণাধীন লামা, চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের কতিপয় দুর্নীতি পরায়ন বনকর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জোগসাজসে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনাঞ্চল থেকে শতবর্ষী মার্দারট্রি (গর্জন)সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে লম্বা তক্তা, বাহাসহ বিভিন্ন উপকরণের সাইজ করে সড়ক ও নৌ পথে বিনাবাঁধায় পৌঁছে যাচ্ছে এসব কাঠ বোট নির্মাতাদের কাছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল, বিএমচর, পূর্ববড় ভেওলা, সাহারবিল, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমাট, ডুমখালী, কাটাখালী, সায়রাখালী, খুটাখালী, বদরখালী, বরইতলীর জেলে পাড়া, কোনাখালী ও পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী,বারবাকিয়া, পেকুয়া সদর, মগনামা ও উজানটিয়া ইউনিয়নে মাতামুহুরী নদী ও সাগর চ্যানেলে নির্মিত হচ্ছে এসব বোট।
এলাকার পরিবেশ সচেতন জনগণ অভিযোগ করেছেন, বোট নির্মাতাদের কাছে স্থানীয় ফাঁড়ি ও থানা পুলিশের টোকেন রয়েছে। বন বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে অবৈধ চোরাই কাঠকে বৈধ কাঠ হিসেবে দেখিয়ে বোট নির্মাণে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
বদরখালী বাজারের স’ মিল সংলগ্ন এলাকায় ত্রিপল ঢেকে দিয়ে নির্মিত হচ্ছে ৩টি ফিশিং বোট। বিএমচর ইউনিয়নের কুরুইল্যারকুম এলাকায় নির্মিত হচ্ছে বড় সাইজের ৩টি কার্গোবোট। অনুরূপভাবে উল্লেখিত এলাকায় অর্ধশত বোট নির্মিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী পরিবেশ ও বনমন্ত্রাণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন