শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

ধুঁকছেই শেয়ারবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৯, ৫:৩০ পিএম

কোনো পদক্ষেপেই শেয়ারবাজারের গতি ফেরানো যাচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজার ততো ধুঁকছে। বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। শেয়ারবাজার এমন দুরবস্থায় গতি ফেরাতে বেশ তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। দেয়া হচ্ছে একের পর এক সুবিধা। কিন্তু পতন ঠেকাতে নেয়া সব পদক্ষেপই যেন ব্যর্থ হচ্ছে। অব্যাহত দরপতনের কবলে পড়ে তিন বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক। বাজারের এমন দৈন্যদশার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাচ্ছে না শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে আর্থিক খাতের অনিয়ম, তারল্য ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

অবশ্য শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট কাটাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর)। রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে অর্থ সরবরাহের সুযোগও দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি ব্যাংক এ সুবিধাও গ্রহণ করেছে।

পাশাপাশি শেয়ারবাজারে তারল্য বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। বন্ড বিক্রি করে সোনালী ব্যাংক থেকে পাওয়া ২০০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারি পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কাছে দুই হাজার কোটি টাকা চেয়েছে আইসিবি। এ টাকার পুরোটা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া ইউনিট ফান্ডের মাধ্যমে আইসিবিকে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ দিতে চাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতি ফেরাতে এ ধরনের একের পর এক পদক্ষেপ নেয়া হলেও শেয়ারবাজার তলানীতেই রয়ে গেছে। অব্যাহত পতনের কবলে পড়ে গত ১৩ অক্টোবর ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে আসে। এরপর আইসিবির বিনিয়োগ বাড়ানোর খবরে ১৫ অক্টোবর শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। এতে পুঁজি হারা বিনয়োগকারীরা আশার আলো খুঁজতে থাকেন। কিন্তু পরের কার্যদিবসেই তাদের সেই আশার আলো নিভে যায়। বড় উত্থানের পর দেখতে হয় বড় দরপতন। সেই পতনের ধারা সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও অব্যাহত থেকেছে। ফলে শেষ ৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৮ কার্যদিবসেই পতনের ঘটনা ঘটল।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, অনেক কিছুই থাকতে পারে। তবে এ মুহুর্তে শেয়ারবাজারের সব থেকে বড় সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। বাজারে বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার বিমুখ হয়ে গেছেন। ফলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাজারে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

বিনিয়োগকারী রুহুল আমিন বলেন, প্রতিনিয়ত দরপতনের কবলে পড়ে পুঁজি হারাচ্ছি। রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারছি না। প্রতি রাতেই ভাবি সকালে গিয়ে বাজার ভালো দেখতে পাব। কিন্তু লেনদেন শুরুর পর বাজারের চিত্র আর পরিবর্তন হয় না। আমার পোর্টফোলিতে যে কয়টি কোম্পানির শেয়ার আছে, গত এক মাসে সবকটির দাম কমেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত শেয়ারের মূল্য কমে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। কিভাবে হারানো পুঁজি ফিরে পাবো তার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১০ পয়েন্ট কমে চার হাজার ৭৭০ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৬৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্য সূচকের এই পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। বাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ১৪৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১৬২টির। আর ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মূল্য সূচকের পতনের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। গত কয়েক দিনের মতো ডিএসইর লেনদেন তিনশ কোটি টাকার ঘরে আটকে রযেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাজারটিতে লেনদেন কমেছে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুন্নু জুট স্টাফলার্সের ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল।

এছাড়া লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, গ্রামীণফোন, বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, ওয়াটা কেমিক্যাল এবং মুন্নু সিরামিক।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক সিএএসপিআই ৪৭ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৫০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১২৪টির। আর ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন