শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

পদ হারিয়ে গণমাধ্যমকে দায়ী করলেন ওমর ফারুক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:২৪ পিএম

যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর দুদিন চুপচাপ ছিলেন ওমর ফারুক। সোমবাবার তিনি গণমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া দেন। এসময় তিনি পদচ্যুত হওয়ার গণমাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এখনো তেমন কিছু প্রমাণ হয়নি। তবে যা হয়েছে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে হয়েছে। হোক; গণমাধ্যম আজ স্বাধীন এবং গণমাধ্যম স্বাধীন হওয়াই উচিত।

৭১ বছর বয়সী এই নেতা দীর্ঘ ৭ বছর চেয়ারম্যান পদ আঁকড়ে ছিলেন সংগঠনটির। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে আওয়ামী লীগের বৃহৎ এই সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে বিদায় নিতে হলো তাকে।

সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস সামনে রেখে রোববার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের বৈঠকে ওমর ফারুককে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওমর ফারুক চৌধুরীসহ সংগঠনটির প্রভাবশালী ৪ নেতা এদিন অনুপস্থিত ছিলেন।

তারা হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, শেখ ফজলুর রহমান মারুফ এবং শেখ আতিয়ার রহমান দীপু। এদের মধ্যে শেষের দু’জন গণভবনের গেট থেকে ফেরত আসেন। এদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো বাণিজ্যের সুবিধাভোগ করার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে গণমাধ্যমে খবরের কারণে তাকে যুবলীগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে দাবি করে ওমর ফারুক বলেন, মিডিয়া ট্রায়ালেই আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে। স্বাধীন গণমাধ্যম অনেক কিছুই লিখেছে। এ কারণে আমাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

ওমর ফারুকের ভাষ্য, ‘আপনারা (সাংবাদিক) লেখনির মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, আমি আর দল করতে পারব না, রাজনীতি করতে পারব না। মিডিয়া ট্রায়াল শেষ। আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর মানে ‘ইউ আর নো মোর’। এখন আমি যতই সত্য কথা বলি, তা মিথ্যা ফিকশন হয়ে যাবে। তাই আর কিছু বলতে চাই না।’

ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসার পর পদচ্যুত হওয়ার আগেই আড়ালে চলে যান ওমর ফারুক। প্রায় একমাস যাননি দলীয় কার্যালয়ে। আসন্ন কংগ্রেসের কার্যক্রম থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমে যা লেখা হচ্ছে, তাতে কি আর সানন্দে বাইরে যাওয়া যায়? সে জন্য বাইরে যাই না, ঘরেই থাকি। আমার উচিত সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় নিজেকে স্বচ্ছ প্রমাণ করা, সেই প্রক্রিয়াতেই আছি।

তিনি যোগ করেন, ‘আমি তো শাস্তি পেয়েছি-ই। কয়েক দিন ধরে গৃহবাস এবং রোববার দল থেকে গেট আউট। কষ্ট যা পাওয়ার পেয়েছি। সর্বোচ্চ কষ্ট পেয়েছি। এখন তো আর রাজনীতি করতে পারব না, নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে।’

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের কাছ থেকে মাসিক মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে ওমর ফারুক বলেন, ‘সম্রাট রিমান্ডে কী বলেছেন তা আপনি নিজে দেখেছেন বা শুনেছেন কী? উনি (সম্রাট) যা খুশি বলতে পারেন। এসব তথ্য আমলে নিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া কেমন হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছি।’

প্রথমে ওমর ফারুক চৌধুরী ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। পরে তা জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, হ্যাঁ, হয়েছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদি তারা প্রমাণ করতে পারে, আমার অ্যাকাউন্টে অনৈতিক জায়গা থেকে টাকা ঢুকেছে, তা হলে আমার উচিত হবে সেটিকে আইনিভাবে মোকাবিলা করা। সর্বোপরি যদি প্রমাণ করতে পারি আমি নির্দোষ, তা হলে মুক্তি পাব; অন্যথায় দেশের প্রচলিত আইনে যা হওয়ার হবে। আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত আছি।

প্রসঙ্গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।

এর পর গণমাধ্যমে যুবলীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতায় ঢাকার ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো পরিচালনার খবর প্রকাশ হয়। ১৮ নভেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস, ওয়ান্ডারার্স এবং গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মদ ও ৪০ লাখের বেশি টাকা উদ্ধার করে র্যা ব। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে ওই দিনই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।

পাশের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকেও জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ক্লাব পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। এর পর ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়েও ক্যাসিনো চালানোর প্রমাণ পায় র‌্যাব। অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ক্লাবের সভাপতি কৃষক লীগের সহসভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে।

এর মধ্যে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি করা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান ভূঁইয়াকে।

দুবাই থেকে গ্রেফতার করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে। পরে গ্রেফতার করা হয়েছে ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ নাম দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সন্ত্রাস, চাঁদবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।

ক্যাসিনো ব্যবসায় যুবলীগ নেতাদের মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তলব করা হয়েছে ব্যাংক হিসাব। এরপরই আড়ালে চলে যান তিনি। সবশেষ তাকে যুবলীগ চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Nadim ahmed ২২ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:২০ পিএম says : 0
Who knows, maybe BNP-Jamayat!!!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন