পার্বত্য বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা দুর্গম পাহাড়ী এলাকা। আর এতেই বসবাস নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর। এদের বেশির ভাগেরই অবস্থান দারিদ্র সীমার নিচে। আর সেসব মানুষের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এলাকার সচেতন অধিবাসীরা নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ৪টি প্রাথমিক বিদালয়। বিদ্যালয়গুলোতে আছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী। অপ্রতুল হলেও অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। এমনকি শিক্ষকরা বেতনও পায় না। চরম হাতাশায় শিক্ষকরা স্কুল ছেড়ে চলে গেলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে ৪টি বেসরকারি প্রথামকি বিদ্যালয়ের প্রায় ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। পাহাড়ি অঞ্চলের শিশুদের জন্য এই চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আশপাশের ৪/৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বিকল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।
সরেজমিন দেখা যায়, পার্বত্য লামা উপজেলায় ৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৬ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে বছরের পর বছর বিনা বেতনে শিক্ষাদান করে আসছেন ১৬ জন শিক্ষক। স্বেচ্ছাশ্রম দিতে গিয়ে শিক্ষক পরিবারগুলো এখন মানবেতর দিন যাপন করছে। উপজেলার লামা পৌরসভার নুনারঝিরি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০১, লামা সদরে মিরিঞ্জা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০০, সরই ইউনিয়নের ধুইল্যাপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৯৮, ও কমিউনিটি সেন্টার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আশপাশে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না থাকায় এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এসব বেসরকারি বিদ্যালয়ের উপর নির্ভরশীল। উপবৃত্তিসহ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকার ফলে ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী। স্কুলগুলো বরাবরই ভালো ফলাফল করছে বলে এলাকাবাসির দাবি।
কমিউনিটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী শ্রাবন্তী ত্রিপুরা বলেন, আমার আশে পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় বাধ্য হয়ে কয়েকটি পাহাড় ডিঙিয়ে অত্র বিদ্যলয়ে আসতে হচ্ছে।
মিরিঞ্জা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মেন্নাই মুরং জানায়, আমরা কোনো উপবৃত্তি পাই না। তাই আমাদের লেখা পড়া চালিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে।
নুনারঝিরি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক সৈয়দা শাহনাজ পারভীন জানান, রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে নিয়মিত পাঠদান করি। কিন্তু আমাদের কোনো বেতন ভাতা নেই। ফলে সংসার চালাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের এই মানবেতর জীবনযাপন দেখার যেন কেউ নেই।
ধুইল্যাপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়গুলো সরকারি না হওয়ায় যেমন আমরা শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছি, ছাত্র ছাত্রীরাও দিন দিন ঝরে পড়ছে। এমতাবস্থায় সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা ফেলে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা যেমন ঝরে পড়বেনা, তেমনি শিক্ষকেরাও মানবেতর দিন যাপন থেকে মুক্তি পাবে বলে পাবেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য মো. ইদ্রিস কোম্পানি জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সংকটে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। তিনি বলেন বিদ্যালয়গুলোর সরকারি করণের জন্য শিক্ষাবান্ধব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসার তপন কমুর চৌধুরী জানান, জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়া লামা উপজেলার এই চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে সেন্টার পরীক্ষা সমূহে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর এ জান্নাত রুমি জানান, পিছিয়ে পড়া পাহাড়ী জনহোষ্ঠীর ছেলে মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য এই চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সুনজর দিলে এই চারটি বিদ্যালয় টিকে থাকবে। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এছাড়া উল্লেখিত এলাকার স্কুলগুলোতে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতা কামনা করেন এলাকাবাসী ও অভিভাবক মহল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন