লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা-পদুয়া হয়ে বয়ে যাওয়া হাঙর খালে বালু ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া অত্যাচারে ভাঙছে খালের ওপর নির্মিত ব্রিজ, কালভার্ট, খালপাড়, মানুষের ঘরবাড়ি। বিলীন হচ্ছে ধানী জমি। বালু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে সরকারের অনুমোদন ব্যতিরেখে ড্রেজার মেশিন দিয়ে লেয়ারের নীচের বালু উত্তোলনের কারণে খালের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনতিবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে হাঙর খালের ভাঙনের কবলে পড়ে বিলিন হতে পারে অন্তত তিনটি গ্রাম।
উপজেলার উত্তর পদুয়া গ্রামের আকাম উদ্দিন সওদাগর পাড়া, ঘোনা পাড়া মনির আহমদ পাড়ার অন্তত ১০ থেকে ১৫টি বাড়ি খালে বিলীন হবার আশঙকা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পাশ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ছহির পাড়ার সাথে লোহাগাড়ার সংযোগ রক্ষাকারী ব্রিজটিও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ব্রিজের ৫০০ মিটারের মধ্যে খাল থেকে প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (১৯৯৫ সনের ১ নং আইন) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা হতে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এখানকার প্রভাবশালী কয়েকজন লোক সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেদারছে বালু উত্তোলন করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু বিক্রি চলে এখানে। প্রতি গাড়ি থেকে তারা নেয় ৭০০ টাকা করে। আর এতে প্রতিদিন আয় করছে প্রায় ৫ লাখ টাকা করে। পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন বলেন, ‘সর্বনাশা বালু উত্তোলন বন্ধ করতে আমি প্রশাসনকে লিখিতভাবেও জানিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে বালু ব্যবসায়ীদের নাম উল্লেখ করে আসলেই তারা জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি কারো নাম নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।’
৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে জঙ্গল পদুয়া ও পেঠান শাহের পুরাতন বাড়িও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল ক্ষতিগ্রস্থরা। একই সাথে বালুখেকোদের বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিলও করেছিল। কিন্তু তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিজনুর রহমান কোনো ব্যবস্থা নেননি।
জানা গেছে, বর্তমানে বালু ব্যবসায়ীরা আরো প্রভাবশালী হয়ে উঠায় স্থানীয়রা মুখ খুলতে পারছে না। অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ঘোনাপাড়া মসজিদ ও ফোরকানিয়া মাদরাসা খালে বিলীন হবার আশংকা প্রকাশ করেছেন মুসুল্লীরা।
এতদঅঞ্চলের ৫টি পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। আর এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছে শোয়েবুল হক, ফিরোজ কামাল, শাহজাহান, ফাকা সেলিম, আলী, দেলোয়ার হোসেন, জাহেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ জাকারিয়া ও মোহাম্মদ হোবাইরদের একটি সিন্ডিকেট।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বালু ব্যবসায়ী ফিরোজ কামাল বালু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি সরকারি নিয়ম মেনে আবাসিক এলাকা থেকে অনেক দূরে গিয়ে একটি পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করি।
খাল ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা স্থানীয়রা জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন থেকে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা শোনা গেলেও জোরালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারনে বালু ব্যবসায়ীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে ক্রমান্বয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়বে তিন গ্রামের মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন