টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে
অব্যাহত নদী ভাঙনে যমুনা পাড়ের শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে নিশ্চিহ্ন হওয়ায় সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। ভাঙনজনিত কারণে বারবার বিদ্যালয় অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ায় এবং অসহনীয় দারিদ্র্যতার কবলে যমুনা চরাঞ্চলের অগণিত শিশু প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরেজমিন এর কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, যমুনা পাড়ের অসহায় মানুষগুলো নদী ভাঙনের কবলে ভিটেমাটি হারিয়ে অবশেষে ঠাঁই নেয় বাঁধ কিংবা সড়কে। কেউ কেউ আশ্রয়ের সন্ধানে মরুভূমির ন্যায় ধু-ধু বালির পথ পেরিয়ে চলে নতুন ঠিকানার সন্ধানে। অনেকেই আবার জেগে ওঠা কোনো চরাঞ্চলে কোনোমতে মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই করে নেয়। কিন্তু বাঁচার প্রত্যাশায় এরা কোথাও একটু ঠাঁই করে করে নিলেও প্রয়োজনীয় জীবন-জীবিকার অভাব ও দারিদ্র্যর আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা চরাঞ্চলবাসী তাদের শিশুদের মাঠের কাজ ফেলে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে তেমন উৎসাহবোধ করে না। বঞ্চিত চরবাসীদের অনেকেই দৈন্যদশার কারণে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারে না। অতি সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে কয়েকটি চরে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৫ম শ্রেণী পাস করার পূর্বেই শতকরা প্রায় অর্ধেক শিশুই ঝরে পড়ে। বিশেষ করে অভাব আর দারিদ্র্যতার কারণে চরের মানুষেরা তাদের মেয়েদের প্রাইমারি পাস করতে না করতেই বিয়ে দিচ্ছে। অকালে বিয়ে হওয়ায় মেয়ে শিশুদের পক্ষে আর লেখাপড়া করা হয় না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৩৫ বছরে যমুনার অব্যাহত ভাঙনে শতাধিক গ্রাম ও শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়গুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে পুনঃস্থাপিত হলেও ভিটেমাটি হারা পাড়ভাঙ্গা হাজার হাজার অসহায় আদম সন্তানেরা শিক্ষার আলো থেকে দূরে সরে গেছে। এছাড়া নদীভাঙা মানুষেরা ঘরবাড়ি অন্যত্র স্থানান্তর করায় হাজার হাজার শিশু শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। শুধু এ বছরের ভাঙনেই চরাঞ্চলে কয়েক শ’ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। এদের এই ক্ষতি বিকল্প কোনো উপায়েও পূরণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যমুনার চর বন্যায় ৩/৪ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকায় অর্ধশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকে অঘোষিত বন্ধ। তবে সাম্প্রতিককালে শিক্ষা উপবৃত্তি চালু হওয়ার কারণে অনেকেই তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাচ্ছে। কয়েক বছরের বন্যায় উপজেলার নদী অববাহিকার কাজিপুর সদর, মাইজবাড়ী, শুভগাছা, গান্ধাইল, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ ও মনসুরনগর এই ১০টি ইউনিয়নের শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রবল নদী ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়েছে। কাজিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাঈনুল হাসান জানান, ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে নিশ্চিহ্ন হওয়ায় কোটি কোটি টাকার স্থাপনা নষ্ট হয়েছে। তবে চরে ও যমুনা তীরবর্তী স্থাপনামূহে দ্বিতল ভবন নির্মাণ না করে ভাঙনপ্রবল এলাকার জন্য সরকার নির্ধারিত দ্রুত স্থানান্তরযোগ্য টিনশেড মডেলের বিদ্যালয় নির্মাণ করলে একদিক যেমন সরকারি সম্পদের সাশ্রয় হবে, অপরদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বল্পখরচে বিভিন্ন চর এলাকায় একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন