কাপাসিয়া (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামে গত শনিবার সন্ধ্যা ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়া সচ্ছল পরিবারের মানসিক প্রতিবন্ধী যুবকের বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রামে অন্যমনস্কভাবে ঘুরাফেরা করছিল। ঘুরতে ঘুরতে রাত ৯টার দিকে গাজীপুরের কাপাসিয়ার বারিষাবরের নয়ানগর গ্রামের মিনহাজউদ্দিনের বাড়ির উঠানে প্রবেশ করে। এ সময় ঘর থেকে তাকে দেখে চিৎকার করে ওঠে বাড়ির এক কিশোরী। বাড়ির অন্যান্য লোকজন ‘ডাকাত-ডাকাত’ বলে চিৎকার করলে ভয়ে পাশের গোয়ালঘরে আশ্রয় নেয়। গোয়ালঘরের ভিতরেই ছেলেটিকে নিষ্ঠুরভাবে পেটাতে থাকে বাড়ির লোকজন। পরে হাত-পা বেঁধে ছেলেটিকে গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেয়া হয়। তারা তাকে দু’পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টোকরে গাছে ঝুলিয়ে রাখে। পরে তারা তাকে মাটিতে ফেলে শাবল দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে এবং মাথা থেঁতলে দেয়। খবর পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত যুবকের নাম জাহিদুল ইসলাম সজিব (১৮)। সে পাশের ঘাগটিয়া ইউনিয়নের খিরাটি উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত জাকির হোসেন মুকুলের একমাত্র ছেলে। সে খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কিন্তু মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দেয়ায় পরীক্ষায় অংশ নেয়া হয়নি তার। গত প্রায় আড়াই মাস ধরে সজিবকে বদ্ধপাগল বলেই জানত গ্রামবাসী। জাহিদুল ইসলাম সজিব ছিল মেধাবী ছাত্র। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণি থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় সে। ২০১৪ সালে ঘাগটিয়াচালা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করে সজিব। এদিকে ঘটনার পরদিন খবর পেয়ে নিহত হতভাগ্য সজিবের পরিবারের লোকজন থানায় গেলেও লাশ দেখতে দেননি পুলিশ। এমনকি পুলিশ সজিবকে অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত বলে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লাশ পাঠায়। অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনাসহ ডাকাতির চেষ্টা করায় পৃথক দুটি মামলাও নেন পুলিশ। পরে মর্গ থেকে শনাক্ত করে স্বজনরা লাশ নিয়ে দাফন করেন। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার রাতেই নিষ্পাপ একজন মানসিক প্রতিবন্ধীকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানলে ও সজিবকে অজ্ঞাত পরিচয়ে ডাকাত বলেই মামলা নেয় পুলিশ। খিরাটি বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আওলাদ হোসেন জানান, সজিব ছিল খুবই মেধাবী ছাত্র। কিন্তু নির্বাচনী পরীক্ষার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় ফরম পূরণ করা হয়নি তার। তবে এসআই সেন্টুচন্দ্র সিংহ জানান, রাতে থানার ডিউটি অফিসার মুঠোফোনে আমাকে রাত সাড়ে ১০টায় ডাকাত হানা দেয়াসহ এক ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দেয়ার খবর জানালে আমি ওই এলাকায় যাই। ওই সময় বীমা কর্মকর্তা মিনহাজসহ তার পরিবারের লোকজন দাবি করেছিল, সশস্ত্র ডাকাত দল তাদের বাড়িতে হানা দিয়েছিল। ডাকাতিকালে গ্রামবাসী ওই ডাকাতকে ধরে গণপিটুনি দেন। ঘটনার পরদিন রাতে বীমা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় ৭ থেকে ৮ জন অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাতকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে গাজীপুরের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন