ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা
ঝিনাইদহে গ্রামাঞ্চলে একই ইউড্রেন বার বার নির্মাণ দেখিয়ে সরকারি অর্থ নজিরবিহীনভাবে আত্মসাৎ করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় এডিবি ও এলজিইডির বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এভাবে লুটপাট করছেন। ফলে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ। অভিযোগ উঠেছে, এসব ইউড্রেন জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, এলজিইডির দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ও মেম্বরদের টাকা আত্মসাতের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলজিইডির প্রকৌশলীদের সহায়তায় প্রতি বছর একই প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে ইউড্রেনগুলো বার বার নির্মাণ দেখানো হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম বছর উজেলার ভাতঘরা ও খামারমুন্দিয়া এলাকায় এলজিএসপি ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ান পার্সেন্ট টাকায় ইউড্রেনগুলো নির্মাণ দেখিয়ে পরের বছর একই ইউড্রেন এডিবি’র টাকায় নির্মাণ দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি আরো কিছু ছোট ছোট প্রকল্প একাধিকবার দেখানো হয়েছে। এসব টাকা প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে উত্তোলন করা করে চেয়ারম্যানরা আত্মসাৎ করেছেন। তবে কল্পিত ভাবে গঠন করা প্রকল্প কমিটির সভাপতিরা বলছেন তারা এই সম্পর্কে কিছুই জানেন না। সংশ্লিষ্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ এডিবি’র অর্থায়নে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রতিবছর নলকূপ, ইউড্রেন নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, মসজিদ-মন্দির সংস্কার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেঞ্চ সরবরাহের কাজ করে থাকে। প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়। অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানদের ৯ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। একই বরাদ্দ পত্রে রায়গ্রাম ও রাখালগাছি ইউনিয়নে অতিরিক্ত দুই লাখ টাকা করে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এভাবে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানদের ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রায়গ্রাম ইউনিয়নে ৩ লাখ, রাখালগাছি ইউনিয়নে ৪ লাখ ও উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরাম কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দপত্র দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রায়গ্রাম ইউনিয়নের অতিরিক্ত বরাদ্দের টাকায় ভাতঘরা জামতলার মেইন রাস্তার পাশে ইউড্রেন নির্মাণ ও খামার মুন্দিয়া গ্রামের ইসমাইলের বাড়ির পাশে ইউড্রেন নির্মাণ নামে দুইটি প্রকল্প রয়েছে। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে অতিরিক্ত বরাদ্দের ওই টাকাই একই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। দুটি প্রকল্প এক কমিটি দিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। যার সভাপতি হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামকে। অবশ্য নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন তিনি এই প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনি কোনো স্বাক্ষর করেননি। কালীগঞ্জের রাখালগাছি ইউনিয়নে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মোল্ল্যাকুয়া গ্রামের আনিচুরের বাড়ির পাশে ইউড্রেন নির্মাণ ও বহিরগাছি গ্রামের শ্যামের জমির পাশে ইউড্রেন নির্মাণ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরেও ওই দুইটি প্রকল্প আবারো দেখানো হয়েছে। যার প্রকল্প কমিটির সভাপতি করা হয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য স্বপন আলী। তবে স্বপন জানিয়েছেন, তিনি এই সম্পর্কে কিছুই জানেন না, এমনকি তিনি কোনো স্বাক্ষর করেননি। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রায়গ্রাম ইউনিয়নের ভাতঘরা জামতলার পাশের ইউড্রেন নির্মাণ হয়েছে ২০১২ সালে। এলজিইডি’র পক্ষ থেকে ওই সড়কে কাজের সময় ড্রেনটি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল লতিফ জানান, ইউড্রেনটি ৪ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তা পাকা করার কাজের সময় এটি নির্মাণ করেন। আর খামারমুন্দিয়া গ্রামের জামাল এর বাড়ির পাশের ইউড্রেন নির্মাণ হয়েছে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ান পার্সেন্ট এর টাকায়। রায়গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম জানান, তারা ৭৮,৪০০ টাকা ব্যয় করে ইউড্রেনটি নির্মাণ করেন। অথচ এডিবি’র বরাদ্দ দেখিয়ে আরো দুই অর্থ বছরে এই দুইটি প্রকল্পে টাকা তোলা হয়েছে। রাখালগাছি ইউনিয়নে বহিরগাছি গ্রামে শ্যামের জমির পাশে একটি ইউড্রেন পাওয়া গেলেও সেটা ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এলজিএসপি’র টাকায় নির্মিত বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম। ৬৮ হাজার টাকা খরচ করে এটি তারা করেছেন বলে জানান। ড্রেনের পাশের জমির মালিক শ্যাম কুমার জানান, ড্রেনটি ৩ থেকে ৪ বছর নির্মিত। মোল্ল্যাকুয়া গ্রামের আনিচুর রহমানের বাড়ির পাশে কোনো ইউড্রেন পাওয়া যায়নি। আনিচুর রহমান জানান, ৪/৫ বছরের মধ্যে তার বাড়ির পাশে কোনো ইউড্রেন হয়নি। অথচ এই দুইটি প্রকল্পও রয়েছে ওই দুই অর্থ বছরের তালিকার মধ্যে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, এই সকল প্রকল্পগুলো উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার মনোনীত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। তারপরও পর পর দুই বছর একই প্রকল্প দেওয়া হলে সেগুলো সংশোধন করা হবে বলে জানান। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বিল উত্তোলন হয়ে গেলে কিভাবে সংশোধন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজনে টাকা ফেরত চাওয়া হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, বিষয়টি তার নজরে আসেনি। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন