পানি কমে যাওয়ায় সাথে সাথে অস্বাভাবিকভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার চত্রা ও গড়াই নদীতে। এরই মধ্যে গত এক সপ্তাহে নদীর পার এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে অন্তত ৩০টি বসতবাড়ি। মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘি কমলা ও খাটিয়াগারা গ্রামের দু’টি পাকা সড়ক। ভাঙন আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে অন্তত তিনশত পরিবার। শুধু বসত বাড়ি নয় ভাঙন আতংকে রয়েছে এই এলাকার চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির সেতু ও কালভার্টসহ বহু গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা।
সরেজমিনে বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের ঘিকমলা গ্রামে দেখা যায়, সেখানে অন্তত এক কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বড় বড় ফাটল দেখা দিয়ে নদীর মধ্যে দেবে যাচ্ছে। উৎসুক জনতা হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
এ সময় ঘিকমলা গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, নদী ভাঙনে ফসলী জমি ভিটেমাটি সব হারিয়ে সবশেষ সম্বল দুই শতাংশ জমির উপর তৈরি করেছিলাম কুরে ঘর। তিন ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে করতাম। নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন এখন আমার ঘরের কোনে। এতে দিশেহারা হয়ে পাগলের মতো ঘুরে বেরাচ্ছি । কোথায় যাবো? কি করবো? ভেবে পাচ্ছি না।
একই এলাকার বাসিন্দা খালেক মোল্লা বলেন, এই চত্রা নদীর দুই পাশে দু’টি গ্রাম ঘি কমলা ও খাটিয়াগাড়া। এই দুই গ্রামে অন্তত তিনশত পরিবার বসবাস করে। এরা সবাই এখন না ঘুমিয়ে নদী পারে বসে থাকে। তিনি আরো বলেন, ভাঙন যেভাবে দেখা দিয়েছে এভাবে চলতে থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যেই হারিয়ে যেতে পারে ঘি কমলা ও খাটিয়া গাড়া গ্রাম দুটি।
এ সময় খাটিয়া গাড়া গ্রামের বাসিন্দা টিপু আহম্মেদ বলেন, চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়নে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের রাজবাড়ী পওর বিভাগাধীন রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার চত্রা নদীর ৭ কি.মি. পুণঃখনন কাজ করা হয়েছে। প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজটি পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে খনন করায় এভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম জানান, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সময় ও পানি কমার সময় ভাঙন দেখা দেয়। গত তিন বছরে কমপক্ষে ২শ’ বিঘা ফসলী জমি ও হাজার হাজার বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার বলার পরও তারা স্থায়ী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুন্নবী জানান, চলতি বছরের বন্যায় চত্রা ও গড়াই নদীতে জরুরি ভিত্তিতে ১৫টি পয়েন্টে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, গড়াই চত্রা নদী প্রতি বছর পানি কমার সময় বেশি ভাঙে। এ বছরও মারাত্বক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভাঙনের ছবি তুলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ডিপিপি পাস হলেই শুরু হবে কাজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন