বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কয়রায় ভেড়িবাঁধের অর্ধশত স্থানে ভাঙন হুমকির মুখে ২ পোল্ডার, ৩ লক্ষাধিক মানুষ আতঙ্কে

প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে

উপকূলীয় অঞ্চল সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকার দুটি পোল্ডারে প্রায় অর্ধশত স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টির ফলে গোটা উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষ আতংকে রয়েছে। পাউবোর সেকশন কর্মকর্তা ও লেবার সরদার নামধারী কিছু দালাল চক্রের কারণেই পোল্ডারের এ অবস্থা। প্রকৃত ঠিকাদারদের নির্দিষ্ট স্থানে কাজ করার জন্য কয়রাবাসীর দাবি। গত ১৮ ও ১৯ জুন কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের দুটি পোল্ডার ১৩/১৪-২ এবং ১৪/১ ঘুরে দেখা যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন কর্মকর্তারা চাকরির সুবাদে বিভিন্ন ঠিকাদারদের সাথে সক্ষ্যতা রেখে পোল্ডারগুলোতে লক্ষ লক্ষ টাকার দায়সারা কাজ করায় পকেট ভারী করছে। অপর দিকে নোনা পানির চাপে প্রতি বছর গৃহহারা হচ্ছে বহু পরিবার। ধ্বংস হচ্ছে মানুষ, গরু, ছাগল, মৎস্য ঘের ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। এসব দেখ-ভাল করার মত কেউ না থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খয়রুল আলম এখন হিরো বলে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে ১৯ মে পাউবোর ভেড়িবাঁধ দক্ষিণ বেদকাশীর ঘড়িলাল বাজার থেকে ২ কিঃমিঃ দক্ষিণে মাটিয়া ভাঙ্গা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা গেছে সেখানে ভেড়িবাঁধে চার ভাগের তিন ভাগ রাস্তায় মাটি নেই। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় ঐ এলাকার শত শত মানুষ আতংকগ্রস্ত। এছাড়া শাকবাড়িয়া নদীর পার্শ্ববর্তী আংটিহারা  ল্যান্ড কাস্টম অফিস ও নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সামনের ভেড়িবাঁধে মারাত্মক ভাঙনের ফলে সেখানকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে ল্যান্ড কাস্টম কর্মকর্তা আমীর হোসেন ও নৌ-পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল মজিদ এ সংবাদদাতাকে বলেন, প্রতি বছর এখানে নোনা পানি ঢোকে। তারা জানান, পাউবোর বরাদ্দকৃত টাকার মাটির কাজ সঠিকভাবে করানো হলে এখানে কোন দিন ভাঙন হতো না। এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক গাজী রেজওয়ানুল করীম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছুসংখ্যক দালালদের নিয়ে এসও সাহেবরা   লক্ষ  লক্ষ  টাকার  মাটির কাজ  দারসারা  করায় আমরা এখন ভেড়িবাঁধ ভাঙনের  হুমকির মুখে। তিনি বলেন, জোড়শিং বাজার ও গাতিরঘেরী এলাকার অর্ধ কিঃমিঃ জুড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ায় অর্ধশত চিংড়ি ঘের মালিক ও  বসবাসকারীরা রাতের ঘুম হারাম করে ফেলেছে। উল্লেখ্য, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় ইতোপূর্বে খুলনার  কয়রা উপজেলার দুটি পাউবোর পোল্ডারের উপর রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ায় স্থানীয় দালাল চক্র ছিটকে পড়েছিল। ইদানীং এ দুটি পোল্ডারে  একজন অদক্ষ সেকশন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর থেকে কাজের নামে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে পকেট ভারী করছে। তাছাড়া সদ্য চাকরিতে  আসা  এ  কর্মকর্তা (খায়রুল আলম)-কে ইদানীং তার কর্মস্থলে দেখা যাচ্ছে না বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে  কথা হয় সাতক্ষীরা  পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-টু মিঃ অপূর্ব কুমার ভৌমিকের সাথে। তিনি বলেন, খায়রুল আলমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ শুনেছি, কিন্তু লিখিত অভিযোগ না পওয়ায় ব্যবস্থা  গ্রহণ করা যাচ্ছে না।  অভিযোগ পেলেই  তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে মন্তব্য করেন। এদিকে কয়রা সদর ইউনিয়নের ৪নং কয়রা পুরাতন লঞ্চঘাট থেকে রজব আলীর বাড়ি পর্যন্ত পাউবোর ভেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঐ এলাকার মাস্টার আবুল বাশার বলেন, বর্ষার আগেই যদি এ রাস্তা  সংস্কার না হয়, তা হলে আগামী অমাবশ্যাতেই লোকালয়ে নোনা  পানি  ঢুকে পড়বে- এতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়া কাটকাটার উঃপার্শ্বে গাববুনিয়া পূজা ম-প থেকে পাউবোর ব্লকরাস্তা পর্যন্ত বেড়িবাঁধে হঠাৎ মারাত্মক ফাটল  ধরেছে। অপার দিকে কপোতাক্ষ নদীর প্রবল স্রোতে কাশীরহাটখোলা  থেকে গাজী পাড়া  হয়ে শাখবাড়ীয়া সাবেক মহিলা মেম্বর  সাধনা  পারভীনের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় আড়াই  কিঃমিঃ পাউবোর ভেড়িবাঁধের চার ভাগের  তিন ভাগ মাটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় হাজার হাজার পরিবার নোনা পানির  ভয়ে শংকিত। ফলে স্থানীয় চেয়াম্যান আলহাজ সরদার নুরুল ইসলাম ও নবনির্বাচিত প্রভাবশালী ইউপি সদস্য রেজাউল করিম  (কারিম)সহ গনেশ চন্দ্র ম-ল এ সংবাদদাতাকে জানান,  কিছুদিন আগে গাজীপাড়া এলাকা দিয়ে নোনা পানি ঢোকায় এ এলাকার মানুষ অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। তারা  আরও বলেন, আমরা যেভাবে ওয়াপদার এসও সাহেবকে দিয়ে  প্রতিবেদন ও রিপোর্ট পাঠাই সে মোতাবেক কাজ হলে  আমাদের ইউনিয়নের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারত তারা  আরও বলেন, এখন টেন্ডার হয় সাতক্ষীরা সেখান থেকে ঠিকাদাররা নির্দিষ্ট স্থানে না এসে এসও সাহেবদের মাধ্যমে সাবকন্ট্রাক দিয়ে দেয়, এরপর ওই এসও সাহেব লিবার সরদার নামক কয়েকজন পকেট দালালদের মাধ্যমে দায়সারা কাজ করে চলে যায়। তারা আরও  জানান ১০ লক্ষ টাকার মাটির কাজ ৩/৪ লক্ষ টাকায় হয় কি না আমাদের সন্দেহ। আরও জানা গেছে, মহারাজপুর এলাকার নাম করা ভাঙন পবনা বাঁধ নির্মাণের পর সেখানে চলছে এখন অবৈধ পাইপ বসানোর হিড়িক। ফলে নতুন রাস্তায় পাইপগেট নাইনটি বসানোর কারণে  বেড়িবাঁধগুলো ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া কপোতাক্ষ নদীর দোশালিয়া লঞ্চঘাট থেকে লাভলু চেয়ারম্যান সাহেবের চিংড়িঘের পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে মারাত্মক ফাটল ধরায় ঐ এলাকার শতাধিক চিংড়ি ঘের মালিকেরা এসও সাহেবের বিরুদ্ধে দায়সারা কাজ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান লাভলু বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন কর্মকর্তা খায়রুল আলমকে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি- তবে গত মাসের শেষের দিকে একবার দেখেছিলাম। তিনি আরো বলেন, ্ওয়াপদার কাজ ঠিকাদারদের পরিবর্তে এসও এবং তার দালালেরা দায়সারা মাটির কাজ করে গোটা কয়রা উপজেলার ২টি পোল্ডার ধ্বংস করছে বলে মন্তব্য করেন। চেয়ারম্যান বলেন, এখন থেকে সঠিকভাবে এবং সিডিউল মোতাবেক পাউবোর মাটির কাজ দেখে নেয়া হবে- এবং প্রকৃত ঠিকাদারকে কাজ করতে হবে। কোন দালাল ও বাটপারদের পাত্তা দেয়া হবে না। ওদিকে দঃ বেদকাশির চেয়ারম্যান কবি শামসুর রহমান সংবাদদাতাকে বলেন, টেন্ডারের পরপরই প্রকৃত ঠিকাদার ভাঙন কবলিত এলাকায় যাতে কাজ করতে পারে সে বিষয়টি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি বলেন, ওয়াপদার টেন্ডার হলেই ঠিকাদার সেজে এসও সাহেবরা কিছু দালাল নিয়ে নামমাত্র কাজ দেখায় বলেই আজ ওয়াপদার রাস্তার এ দশা। চেয়ারম্যান আরো বলেন, জোড়সিং পাউবোর ভেড়িবাঁধে গত বছর ২৪ লক্ষ টাকার কাজ ৪/৫ লক্ষ টাকায় শেষ করেছে, তিনি সাবেক এসও মতিনের দালাল খলিল নামের ঐ চিহ্নিত ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিঃ অপূর্ব কুমার ভৌমিকের বিষয়টি তদন্তপূর্বক ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা গ্রহণসহ কিছুদিন পূর্বে চোরামখা ভাঙন কবলিত এলাকায় বর্তমান এসও খায়রুল আলম জনৈক লিবার সরদার আমিরুলকে দিয়ে যে নামমাত্র মাটির কাজ করানো হয়েছে তা সশরীরে পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকায় সঠিক ঠিকাদারদের মাটির কাজ করার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদিকে সদ্য যোগদানকারী আমাদী উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসও) খায়রুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খলিল নামের এক দালালকে নিয়ে আগের এসও সাহেবরা বহু মাটির কাজ এবং মোটা অংকের অর্থ নিয়ে অবৈধ পাইপ গেটসহ লাইনটি বসাতে সাহায্য করে তাদের কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করার কথা জানতে পেরেছি। তবে তিনি এ পোল্ডারের যাবতীয় বেড়িবাঁধ, ভাঙন ও সংস্কার কাজ যাতে সঠিকভাবে চলে সে বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনসহ দালাল মুক্ত কাজ করার জন্য মতামত ব্যক্ত করেন এসও খয়রুল আলম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন