এম এইচ খান মঞ্জু
২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন তিনি। এতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর হিসেবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা আদায় করা হবে। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আসবে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।
এই ঘাটতি মেটানো হবে ঋণ করে। এর মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩০ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হবে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় নিজেই বলেছেন, এটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা। এনবিআরকে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এই আদায়ের হার হবে ৩০ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি, যা সত্যিই উচ্চাভিলাষী।
অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের বাজেটের নাম দিয়েছেন ‘প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রযাত্রা’। তিনি বলেছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে ৭ শতাংশের মাইলফলক স্পর্শ করবে। অর্থমন্ত্রীর আকাক্সক্ষা, নতুন অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৪৮ টাকায় উন্নীত হবে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ ডলার।
বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এই খাতে ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য ছিল ৩৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
আগের বছরের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিদায়ী (২০১৫-১৬) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসন্ন অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ছয় দশমিক ৫১ শতাংশ। বিদায়ী (২০১৫-১৬) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ের অধীনের বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
এবারে এই দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ ৪৯ হাজার ১০ কোটি টাকা। আর এবার মোট জিডিপি ধরা হয়েছে, ১৯ লাখ ৬১ হাজার ১৭ কোটি টাকা। এই হিসেবে এবার দুই মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জিডিপির প্রায় দুই দশমিক ৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের শুরুতে এই খাতে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বরাদ্দ থাকলেও পরে সংশোধিত বাজেটে পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দুই দশমিক ১৫ শতাংশ। তুলনামূলক এই চিত্র বলছে, গতবারের চেয়ে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে।
অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাবে, রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হবে, মানুষের ভোগ-ব্যয় বাড়বে, মূল্যস্ফীতি কমবে এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।
বাজেট নিয়ে প্রতিবারের মত রাজনৈতিক আলোচনা ও বিতর্ক ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটও ছিল উচ্চাভিলাষী। এ বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটের সাফল্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, এনবিআরের জনবল ও দপ্তর বেড়েছে ব্যাপকভাবে। তাদের চ্যালেঞ্জ হলো, উচ্চাভিলাষী এই রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা।
এনবিআর সফল হোক, আমরা সেই প্রত্যাশা করি। বিশেষ করে আমি একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দকে আমরা স্বাগত জানাই। ভবিষ্যতে শিক্ষার গুণগতমান বাড়াতে শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো হবে এমটিই প্রত্যাশা।
ষ লেখক : প্রিন্সিপাল, এম এইচ খান ডিগ্রী কলেজ গোপালগঞ্জ, সাবেক সংসদ সদস্য ও গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন